সর্বত্র রহমতের বৃষ্টির প্রত্যাশা

পাল্টে গেছে মানুষের জীবনাচারণ

প্রকাশ : ০১ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  শেখ কুতুব আলী

অস্বাভাবিক গরমে বিপর্যস্ত জনজীবন। কষ্টে আছেন শ্রমজীবীরা। প্রচণ্ড খরতাপে মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাপনের ধরন পাল্টে ফেলেছে। মানুষের চলাফেরা, খাদ্য গ্রহণ এবং আচার আচরণে এসেছে বিরাট পরিবর্তন। শ্রমজীবীদের পিপাসা মেটাতে এগিয়ে এসেছে মানবিক মানুষজন। রাস্তাঘাটে শরবত, বিশুদ্ধ খাবার পানি, সেলাইন বিতরণ করছেন। মানুষ চা-কফিতে চুমুক দেওয়া কমিয়ে দিয়েছে। প্রকাশ্যে ধুমপায়ীরদের সংখ্যা কমে আসছে।

প্রতি ওয়াক্ত নামাজ শেষে রহমতের বৃষ্টির জন্য কায়মনে বাক্যে মহান আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করা হচ্ছে।

এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির জন্য নামাজ আদায়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত বৃষ্টির জন্য দোয়া হচ্ছে। দেশের কোথাও কোথাও সীমিত পরিসরে বৃষ্টিপাত হলে ভারী বর্ষণ ছাড়া উত্তপ্ত পরিস্থিতি থেকে মুক্তি লাভের কোনো উপায় নেই। তবে আবহাওয়া অফিস একটু আশার বাণী শুনিয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে আজ থেকে তাপমাত্রা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে তাপপ্রবাহের আওতা কমতে পারে।

গত সোমবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল চুয়াডাঙ্গায়, এটিই চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। ঢাকাতেও ছিল মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা, ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলের ওপর দিয়ে বইছে মৃদু থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। ফলে গরমে বিপর্যস্ত জনজীবন। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে। যশোর, চুয়াডাঙ্গা, পাবনা ও রাজশাহী জেলাসমূহের ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ এবং খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং ঢাকা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ময়মনসিংহ জেলাসহ বরিশাল, রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে বলেও জানান তিনি। আজ ও আগামীকাল সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগে বৃষ্টি বাড়তে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা কয়েক ডিগ্রি কমতে পারে। বিরাজমান তাপপ্রবাহের তীব্রতা কমতে পারে এবং কিছু কিছু জায়গা থেকে তা প্রশমিত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। পরবর্তী পাঁচ দিনের আবহাওয়ার অবস্থা তুলে ধরে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সারাদেশে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বিস্তার লাভ করতে পারে।

গত এক মাস ধরে চলছে মরুভূমির মতো উষ্ণতা। হাঁপিয়ে উঠেছে সব শ্রেণিপেশার মানুষ। অসহনীয় গরমে বিবর্ণ প্রাণ-প্রকৃতি। তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যাওয়ায় বিশেষ করে খুলনা, রাজশাহী, ঢাকা ও রংপুর বিভাগের অধিবাসীরা রীতিমতো লু হাওয়ার অনুভূতিতে হাঁসফাঁস করছেন। বহু অঞ্চলে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোতে দূষণ আর গরমে বিপর্যস্ত। আবহাওয়া ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে মে-জুন পর্যন্ত।

মাঝে-মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে কালবৈশাখি, বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি ও বজ্রপাতের সম্ভাবনা থাকলেও এবারের প্রতিদিন প্রাণঘাতী গরমে হিট স্ট্রোকে মৃত্যু হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে হিট স্ট্রোকে অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে তীব্র গরমে স্কুলে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে বহু ছাত্রছাত্রী। আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, চার-পাঁচ দিন বৃষ্টির পর ৭ মে থেকে আবারও বাড়বে তাপমাত্রা। মে মাসজুড়ে বেশ কয়েকটি তীব্র ও অতি তীব্র তাপপ্রবাহ রয়ে যেতে পারে। আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক জানান, গত মার্চ মাসের শেষভাগ থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে শুরু করে। সেই তাপপ্রবাহ অব্যাহত আছে। এটা ৭৬ বছরের ইতিহাসে রেকর্ড। এর আগে গত বছর সর্বোচ্চ ১৬ দিন টানা তাপপ্রবাহ ছিল। আর ২০১০ সালের এপ্রিল রাজশাহীতে ২০ দিন তাপপ্রবাহ বইলেও তা টানা ছিল না। আবুল কালাম মল্লিক বলেন, সূর্যকিরণের সময় বেড়েছে। প্রায় ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা আমরা সূর্যকিরণ পাচ্ছি। বায়ুপ্রবাহ কম। এ জন্য প্রায় সারাদেশেই তাপপ্রবাহ বিদ্যমান আছে। এর মধ্যে আবার বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেশি হওয়ার কারণে তাপমাত্রা অল্প কমলেও গরমের অনুভূতি একই রকম আছে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকবে। বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি থাকলে বৃষ্টির সম্ভাবনা বাড়ে।

আগামীকালের পর চলমান তাপপ্রবাহের অবস্থা পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। ড. মোহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, প্রতি বছরই মে মাসে তাপপ্রবাহ থাকে। এ কারণে আমরা আশঙ্কা করছি যে, মে মাসেও এ রকম তাপপ্রবাহ থাকতে পারে। তবে এর ব্যাপ্তিকাল ও আওতা অনেকটাই কম থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগর উত্তপ্ত থাকায় জলীয়বাষ্প কম সৃষ্টি হচ্ছে। এতে ঝড়-বৃষ্টি না হওয়ায় এ মৌসুমে তাপদাহ দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে।

এদিকে ৩ মে ভারি ও অতি ভারি বৃষ্টিপাতের শঙ্কা রয়েছে। এ কারণে উত্তর-পূর্ব হাওর এলাকার কৃষকদের দ্রুত ফসল ঘরে তোলার পরামর্শ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের। আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা বলেন, চট্টগ্রাম ও সিলেটের কিছু অঞ্চল ছাড়া দেশের বাকি অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। মে’র প্রথম সপ্তাহে ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। আগামী দুই দিন তাপমাত্রা মোটামুটি এমনই থাকতে পারে। তবে তাপমাত্রা যাই থাকুক গরমের অনুভূতি বাড়তে পারে। বৃষ্টির আগে এমন অসহনীয় অনুভূতি হয়।

চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান জানিয়েছেন, গত সোমবার বিকাল ৩টায় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১৩ শতাংশ। এর আগে ২০১৪ সালের ২১ মে চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০০৫ সালে ২ জুন চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া ২০১২ সালে ৪ জুন চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।