ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ব্রাসেলসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী

দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে ইইউ’র ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ

দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে ইইউ’র ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ইইউয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ জ্ঞান, দক্ষতা উন্নয়ন, উদ্ভাবন এবং কর্মসংস্থানের ওপর বিশেষ গুরুত্বসহ ভবিষ্যতে বিস্তৃততর অংশীদারিত্বের লক্ষ্যে কাজ করছে।

সরকারি সফরে ইউরোপে অবস্থানরত পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসের ঐতিহ্যবাহী সের্কেল রয়্যাল গেলুয়া সেন্টারে’ স্থানীয় সময় গত সোমবার সন্ধ্যায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।

প্রবাসী বাংলাদেশি ও বিদেশি বন্ধুদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানে বেলজিয়াম সরকারের পক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দ্বিপাক্ষিক বিষয়াবলী মহাপরিচালক রাষ্ট্রদূত জেরোএন কুরম্যান ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষে ইউরোপিয়ান এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশীয় প্রশান্ত অঞ্চল ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিকলাস কাভার্নস্টর্ম সম্মানিত অতিথি হিসেবে এবং বেলজিয়াম ও লুক্সেমবার্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে দেশের মিশন প্রধান মাহবুব হাসান সালেহ বক্তব্য দেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সবাইকে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, গত দেড় দশকে অর্জিত টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশকে এশিয়া এবং এর বাইরেও দ্রুততম বর্ধনশীল একটি অর্থনীতিতে পরিণত করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে।

বেলজিয়ামকে বাংলাদেশের সত্যিকারের বন্ধু হিসেবে বর্ণনা করে ড. হাছান তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় বেলজিয়ামে উচ্চতর অধ্যয়নের জন্য এসে দেশটির সমাজ, সংস্কৃতি এবং মানুষের সঙ্গে কাটিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন।

তিনি ২০২৩ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রীর ব্রাসেলস সফরের সাফল্যের কথা তুলে ধরেন এবং আগামী দিনে বেলজিয়াম এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ, জনযোগাযোগ, সুনীল ও বৃত্তাকার অর্থনীতিসহ নিরাপত্তার প্রচলিত এবং অপ্রচলিত ক্ষেত্রসমূহে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরো জোরদার হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন যে, বাংলাদেশ ইইউয়ের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে যাতে বিশ্বে কোথাও মানুষকে যুদ্ধের ভয়াবহতা সহ্য করতে না হয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শান্তি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা যায় এবং বিশ্বজুড়ে মানবতার মূল্যবোধ সমুন্নত রাখা যায়।

ইইউ এক্সটার্নাল এ্যাকশন সার্ভিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিকলাস কাভার্নস্টর্ম বলেন, বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, ন্যায়বিচার, সমতা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং মানবাধিকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে একসঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছে যা বিদ্যমান অংশীদারিত্বমূলক সম্পর্ককে আরো মজবুত করে চলেছে। তিনি শীঘ্রই বাংলাদেশের সঙ্গে পার্টনারশিপ অ্যান্ড কোঅপারেশন এগ্রিমেন্ট বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে ইইউয়ের আগ্রহের কথা জানান।

বেলজিয়াম সরকারের পক্ষে রাষ্ট্রদূত জেরোএন কুরম্যান অভূতপূর্ব উন্নয়ন অর্জনের জন্য বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ ও বেলজিয়ামের ঘনিষ্ঠভাবে কাজ আগামী দিনে উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতাকে নতুন রূপ দেবে।

রাষ্ট্রদূত মাহবুব হাসান সালেহ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি রাষ্ট্র, সরকার ও বন্ধুদের অবদান কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ বিশ্বের ৩৩তম বৃহত্তম, যা ২০৩০ সালের মধ্যে ২৪তম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে এবং এক্ষেত্রে বেলজিয়াম এবং ইইউয়ের সঙ্গে নিবিড় অংশীদারিত্বমূলক সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী, সম্মানিত অতিথিদ্বয় ও রাষ্ট্রদূত মাহবুব হাসান সালেহ এ সময় স্বাধীনতার ৫৩তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে একটি কেক কাটেন।

বেলজিয়াম পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাগণ, রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিক, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য, বেলজিয়ামের রাজনীতিকবৃন্দ, গণমাধ্যম, থিংক ট্যাঙ্কস, একাডেমিয়া, ব্রাসেলসভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিসহ বেলজিয়াম ও লুক্সেমবার্গে বসবাসরত বাংলাদেশ কম্যুনিটির সদস্যগণ অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

অপর এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে বাংলাদেশ অঙ্গীকারবদ্ধ। পারমাণবিক শক্তির অ-প্রসারণ এবং শান্তিপূর্ণ ব্যবহার বিশেষ করে জ্বালানি, খাদ্য নিরাপত্তা, ওষুধ ও স্বাস্থ্য খাতে এর প্রয়োগে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। ইন্টারন্যাশনাল এটমিক এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ) কার্যালয়ে সংস্থার মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসির সাথে সাক্ষাতে এ কথা বলেন।

বাংলাদেশ স্বাধীনতার পরপরই ১৯৭২ সালে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার সদস্য হয়, যা কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থায় বাংলাদেশের প্রথম সদস্যপদের অন্যতম স্মরণ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ এবং পরমাণু সামগ্রীর নিরাপত্তার বিষয়ে বাংলাদেশ অবিচল।

মন্ত্রী হাছান রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও সহযোগিতা প্রদানের জন্য আইএইএ-কে ধন্যবাদ জানান ও বলেন যে, বাংলাদেশ তার পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে সর্বোচ্চ স্তরের স্বচ্ছতা এবং নিরাপত্তা বজায় রাখবে।

জাতীয় জ্বালানি দৃষ্টিভঙ্গী উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ তার ভবিষ্যৎ শক্তির প্রধান সবুজ এবং পরিচ্ছন্ন উৎস হিসেবে পারমাণবিক শক্তির কথা বিবেচনা করছে। খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পাশাপাশি ফার্মাসিউটিক্যালস ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে বাংলাদেশের অতুলনীয় সাফল্য উল্লেখ করে ড. হাছান পারমাণবিক কৃষি, নিউক্লিয়ার মেডিসিন এবং রেডিও থেরাপির ক্ষেত্রে বাংলাদেশে প্রযুক্তিগত সহায়তার জন্য আইএইএ-কে ধন্যবাদ জানান।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী খাদ্যের জন্য পরমাণু বা ‘এটমস ফর ফুড’ এবং কার্বন নিঃসরণকে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে পরমাণু শক্তির ব্যবহার বা ‘এটমস ফর নেট জিরো’ উদ্যোগের জন্য মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসির প্রশংসা করেন এবং এমন মহৎ উদ্যোগে বাংলাদেশের অব্যাহত সমর্থনের আশ্বাস দেন।

আইএইএ মহাপরিচালক পরমাণু বিজ্ঞান প্রয়োগকে কাজে লাগিয়ে মানবকেন্দ্রিক উন্নয়ন ইস্যুতে বাংলাদেশকে এজেন্সির টেকসই সহায়তাদান নিশ্চিত করেন এবং ‘অ্যাটম ফর ফুড’ উদ্যোগে বাংলাদেশের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার বিশেষ আগ্রহ ব্যক্ত করেন।

তিনি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এই উদ্যোগ সংস্থাটির সাথে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততায় এক অনন্য মাত্রা যোগ করেছে এবং পারমাণবিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার সহায়তার অব্যাহত থাকবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প চালুর সময় আইএইএ মহাপরিচালককে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। ভিয়েনায় দেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি আসাদ আলম সিয়াম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পশ্চিম ইউরোপ উইংয়ের মহাপরিচালক কাজী রাসেল পারভেজ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত