ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

তীব্র তাপদাহে মরছে মাছ মুরগি গরু

লোকসান আতঙ্কে খামারিরা

লোকসান আতঙ্কে খামারিরা

সারা দেশে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপদাহ। প্রচণ্ড এই গরমে জনজীবনে অস্বস্তি পৌঁছেছে চরমে। সেই সঙ্গে ঘন ঘন লোডশেডিং। তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪৩ ডিগ্রিতে উঠানামা করছে। এতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন প্রান্তিক খামারিরা। দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে পোলট্রি খামারের অসংখ্য মুরগি। আর নদী-নালা, খাল-বিল ও পুকুরের পানি গরম হয়ে যাওয়ায় মারা যাচ্ছে মাছ। কোথাও কোথাও অতিরিক্ত গরমে গরুও মারা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ডিম ও মুরগি উৎপাদন কমে গেছে। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে মুরগি ও ডিম সরবরাহে সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে, তীব্র গরম ও অনাবৃষ্টিতে সারাদেশে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। ফলে শুকিয়ে গেছে বেশিরভাগ নদী-নালা, খাল-বিল ও পুকুর। এতে করে মৎস্য চাষ অনিশ্চয়তায় মুখে রয়েছে। পানির অভাবে অধিকাংশ মাছের হ্যাচারি বন্ধ হওয়ার পথে। অতিরিক্ত গরমে মারা যাচ্ছে পোনা মাছ। এছাড়া প্রচণ্ড গরমের কারণে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন গরুর খামারিরাও। কোরবানি ঈদের দেড় মাসের মতো সময় আছে। এর মধ্যে তাপপ্রবাহের কারণে হিটস্ট্রোকে গরু মৃত্যুর ঘটনাও বাড়ছে। গরমের মধ্যে লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় খামারিদের ত্রাহি দশা। তাপপ্রবাহে খামারের পশুকে দিনে তিনবার গোসল করানোসহ বেশ কয়েকবার পানি ছিটিয়েও কাজ হচ্ছে না। গরু-ছাগল বাঁচাতে খামারিদের জেনারেটরের পেছনে অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এতে কোরবানির পশুর দাম বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

চলমান তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে হুমকির মুখে পড়েছে বাংলাদেশের পোলট্রি শিল্প। অতিরিক্ত গরমের কারণে প্রতিনিয়ত মারা যাচ্ছে বহু মুরগি, ব্যাহত হচ্ছে ডিম উৎপাদন। পানি ছিটানোসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়ার পরও ঠেকানো যাচ্ছে না মৃত্যু। এতে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন খামারিরা। এ অবস্থা চলতে থাকলে সামনের দিনগুলোতে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের সরবরাহে সংকট তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন খামারিরা। দেশের ৮০ হাজারের বেশি পোলট্রি খামারের মধ্যে অন্তত ২০ হাজার সাময়িকভাবে বন্ধের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পোলট্রি খামারিদের ভাষ্য, প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে মুরগি মারা যাচ্ছে। কারণ, প্রতিটি খামারের চাল টিনের। আর রোদের তাপ টিনে বেশি লাগছে। যে কারণে মুরগির গরমও লাগছে বেশি। এই গরমে দিনে পাঁচ থেকে ছয়বার মুরগির শরীরে পানি ছিটিয়েও কাজ হচ্ছে না। স্ট্রোক করেই মারা যাচ্ছে মুরগি।

ময়মনসিংহের ভালুকার শহিদুল শিকদারের ১৫০টি শেডে ব্রয়লার মুরগি আছে প্রায় ২ লাখ। প্রচণ্ড গরমে প্রতিদিনই দুই থেকে আড়াই হাজার মুরগি হিটস্ট্রোক করে মারা যাচ্ছে। বড় এই খামারির প্রায় ৮০ হাজার ডিম দেয় এমন লেয়ার মুরগি রয়েছে। অতি গরমে প্রতিদিনের ডিমের উৎপাদনও ৫ থেকে ৭ শতাংশ কমেছে বলে জানান তিনি। শুধু ভালুকার শহিদুল শিকদার নন, সারাদেশে ছোট-বড় সব খামারিই গরমের কারণে বিপাকে পড়ছেন। প্রতিদিনই কারো মুরগি যারা যাচ্ছে, কেউবা শেডে মুরগির বাচ্চা তুলছেন না গরমের ভয়ে, কেউ আবার তার নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্রোথ টার্গেট পূরণের আগেই মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছেন।

অন্যদিকে, গরমে খাবার কম খাওয়ার জন্য কমে যাচ্ছে ডিমের উৎপাদন। এ অবস্থা চলতে থাকলে সামনের দিনগুলোতে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের সরবরাহে সংকট তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন খামারিরা। সীতাকুণ্ডের পোলট্রি খামারি মোহাম্মদ লিটন বলেন, গরম থেকে মুরগি বাঁচাতে ১৫টি ফ্যান লাগিয়েছি। কিন্তু লাগাতার লোডশেডিংয়ের কারণে পরিস্থিতি কঠিন হয়ে পড়েছে। গত সপ্তাহে আমার দুই শেডের ৫০০’র বেশি মুরগি হিটস্ট্রোকে মারা গেছে।

এদিকে, গরমে মুরগিকে সুরক্ষা দিতে ছাদে পানির ঝরনা লাগিয়েছেন রাজশাহীর খামারি শাহিনুর ইসলাম। একই সঙ্গে ছাদের নিচে যুক্ত করেছেন বাড়তি ফ্যানও। শাহিনুর বলেন, এত ব্যবস্থার পরেও হিটস্ট্রোকে প্রায় দিনই একটা-দুইটা করে মুরগি মারা যাচ্ছে। মুরগির সুরক্ষায় আমাকে বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে।

গাজীপুরের মুরগির খামারি মোহাম্মদ আব্দুল আজিজ বলেন, আমার খামারে লেয়ার মুরগি লালন-পালন করছি। প্রাণিসম্পদ বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী, আমি কৃত্রিম ঝরনার মাধ্যমে শেডের চালায় পানি ছিটিয়ে শেড ঠান্ডা রাখার ব্যবস্থা করেছি। মুরগিকে সব সময় ফ্যানের বাতাস দেওয়া হচ্ছে, খাবারের সাথে অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি এবং স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে।

কক্সবাজার সদর উপজেলার পোলট্রি ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান বলেন, গরম শুরুর পর থেকেই খামারে মুরগির ছটফটানি শুরু হয়েছে। ফ্যানের বাতাসেও ঘর ঠান্ডা হচ্ছে না। প্রতিদিন কয়েকবার করে মুরগির শরীরে পানি ছিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এরপরও মুরগি মারা যাচ্ছে। গত ক’দিনের গরমে তার খামারে প্রতিদিন গড়ে মারা গেছে ৫০ থেকে ৬০টি মুরগি। গরম শুরুর পর থেকে মুরগিকে ওষুধ ও স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী খাবারও কম দেওয়া হচ্ছে। এতে ডিমের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। তাপমাত্রার প্রভাব পড়েছে মাংস ও ডিম উৎপাদনে।

কুমিল্লার লাকসামের উদ্যোক্তা সাখাওয়াত হোসেনের লেয়ার মুরগির সংখ্যা ২২ হাজার। এ থেকে প্রতিদিন ৯৩ থেকে ৯৫ শতাংশ ডিম পাওয়া যেত, যেটি এখন ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশে নেমে এসেছে। ডিম উৎপাদনের পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে এই উদ্যোক্তা জানান, মুরগি পর্যাপ্ত খাবার খাচ্ছে না। এই পরিস্থিতি আরো কিছুদিন চলতে থাকলে উৎপাদন আরো বড় আকারে কমতে পারে।

বরিশালের আমানতগঞ্জের সেলিনা হোসেন বলেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনের উৎস আমার এ মুরগির খামার। করোনার সময় একবার বড় লোকসান হয়। অনেক মুরগি মারা গিয়েছিল তখন। অনেক কষ্টে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছি। ৮০০ ব্রয়লার মুরগি তুলেছিলাম। বিদ্যমান তাপপ্রবাহ ও তীব্র লোডশেডিংয়ের কারণে হিটস্ট্রোকে মারা গেছে তার প্রায় ৭০০ মুরগি। এতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন স্বামীহারা এ খামারি। আবার মুরগি ওঠানোর ক্ষমতা তার নেই।

খামারিরা বলেছেন, ব্রয়লার মুরগির জন্য স্বাভাবিক সহনীয় তাপমাত্রা ২৪-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু সারা দেশে এখন দিনের তাপমাত্রা থাকছে ৩৮-৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। এই অবস্থায় পর্যাপ্ত ফ্যান ব্যবহার করেও হিট স্ট্রোকের হাত থেকে মুরগিকে বাঁচানো যাচ্ছে না। যাদের জেনারেটর ব্যবস্থা রয়েছে এবং যাদের নেই দুই ধরনের খামারই অতি তাপমাত্রার সমস্যায় ভুগছে। কারণ ফ্যান চালিয়ে বাড়তি এই তাপ প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। কেবল যেসব প্রতিষ্ঠানে কন্ট্রোলড শেড রয়েছে তাদের এই পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে না।

বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) তথ্য বলছে, সারা দেশে বর্তমানে প্রায় ৮০ হাজারের বেশি পোলট্রি খামার রয়েছে। এর প্রতিটিতে পড়ছে চলমান তাপপ্রবাহের বিরূপ প্রভাব। তাপমাত্রা কমাতে ঘরের চালে পানি ছিটানোসহ নানা উদ্যোগেও ঠেকানো যাচ্ছে না মুরগির মৃত্যু। চলমান তাপপ্রবাহের কারণে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের আশঙ্কা, সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে অন্তত ২০ হাজার খামার।

বিপিএ সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, প্রচণ্ড গরমে প্রচুর মুরগি মারা যাচ্ছে। গরমে মুরগিদের বাঁচিয়ে রাখতে খামারিরা খামারে পানি ছিঁটাচ্ছেন। মুরগিকে বেশি বেশি পানি খাওয়াচ্ছেন। এরপরও মুরগি মারা যাচ্ছে। এতে কমে যাচ্ছে উৎপাদন; বাড়ছে খরচ। ফলে লোকসানের মুখে খামার বন্ধের উদ্যোগ নিচ্ছেন অনেক খামারি। ছোট-বড় খামারে দিনে গড়ে ১০০ থেকে ১ হাজার মুরগি মারা যাচ্ছে- এমন খবরও আমরা পাচ্ছি। অনেকে মুরগি বিক্রি করে দিয়ে খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। গরমের এ তীব্রতা অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি আরো জটিল হতে পারে। মুরগির বাজারেও তার প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) গত বছরের তথ্যানুযায়ী, দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে মুরগির খামার আছে ৮০ থেকে ৯০ হাজার। করোনার আগে ছিল ১ লাখ ১০ হাজারের বেশি। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে দেশে প্রতিদিন ৪ কোটির বেশি ডিম ও ৩ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন মুরগির মাংস উৎপাদিত হয়। পোলট্রি শিল্পের বাজার প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার।

সারা দেশের মতো দিনাজপুরের হিলিতে গত কয়েক দিন ধরেই তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তীব্র গরমের কারণে অনেক ফার্মে হিটস্ট্রোকে মারা যাচ্ছে মুরগি। ওষুধ প্রয়োগ করেও কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। সেই সঙ্গে ডিমের উৎপাদন আগের তুলনায় নেমেছে অর্ধেকে। এতে করে উৎপাদন খরচ উঠানো নিয়ে সংশয়ে পড়েছেন খামারিরা। গরমের কারণে দেখা দেওয়া রোগ থেকে বাঁচতে সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে খামারিদের, এমনটাই দাবি করেছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।

এদিকে তীব্র গরম ও অনাবৃষ্টিতে সারাদেশে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। ফলে শুকিয়ে গেছে বেশিরভাগ নদী-নালা, খাল-বিল ও পুকুর। ফলে মৎস্য উৎপাদন অনিশ্চয়তায় মুখে রয়েছে। পানির অভাবে অধিকাংশ মাছের হ্যাচারি বন্ধ হওয়ার পথে। অতিরিক্ত গরমে মারা যাচ্ছে প্রচুর মাছ। সরেজমিন দেখা গেছে, চারদিকে পানির জন্য হাহাকার। নদী-নালায় পানি নেই। শুকিয়ে গেছে খাল-বিল, দীঘি ও পুকুর। শুষ্ক-রুক্ষ দেশের প্রাণ-প্রকৃতি।

জলাশয় পানিশূন্য হওয়ায় বিপাকে ঠাকুরগাঁওয়ের মৎস্যজীবীরা। মাছ না পাওয়ায় বেশিরভাগই এখন বেকার। ডাক পেলেই মাছ ধরার জাল নিয়ে অন্যান্য জেলেদের সঙ্গে নিয়মিত ছুটে চলেন ঠাকুরগাঁও সদরের পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার সামসুল ইসলাম। পুকুরে জাল টানা আয়ে সামসুলের মতো অনেক জেলের সংসার ভালোভাবেই চলত। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

প্রচণ্ড তাপদাহ আর আবহাওয়া পরিবর্তনে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন মাছ চাষি ও জেলেসহ অন্যান্য শ্রমিকরা। উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় মৎস্য হ্যাচারিও বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। এক জেলে বলেন, অতিরিক্ত গরম আর বৃষ্টি না হওয়ায় পানির স্তর একেবারে নিচে নেমে গেছে। এর জন্য আমরা জেলেরা মাছ ধরতে পারছি না। এদিকে নদী নালা, খাল-বিলের পানি যেমন শুকিয়ে যাচ্ছে, তেমনি শুকিয়ে যাচ্ছে পুকুরের পানিও। শ্যালো মেশিনের পানি দিয়েও পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। মৎস্য হ্যাচারির মালিকরা বলেছেন, পুকুর শুকিয়ে যাওয়ার কারণে মাছ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে বাধ্য হয়ে হ্যাচারি বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। শ্যালো মেশিন দিয়েও কাজ হচ্ছে না।

এ অবস্থায় অতিরিক্ত অর্থ গুণতে হচ্ছে মৎস্যচাষিদের। এ প্রসঙ্গে ঠাকুরগাঁও পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার স্বপ্নীল মৎস্য খামারের স্বত্বাধিকারী খয়রুল বাসার জানান, পুকুরের পানি ধরে রাখতে প্রতিদিন শ্যালো দিয়ে পানি দিতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বাড়ছে। ফলে প্রতিনিয়ত লোকসান গুনতে হচ্ছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না পেলে একসময় গিয়ে মাছ চাষ হয়তো বন্ধ করে দিতে হবে।

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পুকুর খননের পাশাপাশি স্বল্প সুদে ঋণ পেলে মাছ চাষ ধরে রাখা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, এভাবে চলতে থাকলে মাছের সংকট দেখা দেবে। পাশাপাশি বেকার হয়ে পড়বে মাছ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িতরা। কাজেই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা জরুরি হয়ে পড়েছে। তা না হলে অনেকেই মাছ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।

প্রচণ্ড গরমে যশোর জেলার চাঁচড়া মৎস্যপল্লির ৩৬টি হ্যাচারিতে রেণুপোনা উৎপাদনে নেমেছে ধস। মরে যাচ্ছে পোনা। এতে ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন বলে দাবি করেছেন হ্যাচারির মালিকরা। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দেশের অন্যতম বড় হ্যাচারিপল্লি যশোরের চাঁচড়ায়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সারা দেশের সাদা মাছের রেণুর মোট চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ পূরণ করেন এখানকার হ্যাচারি মালিকরা। কিন্তু প্রচণ্ড গরমের কারণে গত ১৫ দিনে রেণুপোনা উৎপাদন কমে ২৫ শতাংশে নেমেছে। ভূগর্ভের পানি উত্তোলন ব্যাহত হচ্ছে। পোনা মারা যাচ্ছে। এতে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা।

মৎস্য চাষি ও হ্যাচারি মালিকরা জানিয়েছেন, তীব্র গরমে পানিতে মাছের ডিম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পোনা বিক্রি কমে গেছে। কারণ, অধিকাংশ স্থানে পুকুর ও জলাশয়ে পানি নেই। গরম পানিতে মাছও মারা যাচ্ছে। ফলে উৎপাদন করা যাচ্ছে না। চলতি এপ্রিলের শুরু থেকে বেচাকেনা নেই বললেই চলে। তার মধ্যে এই অবস্থা।

জেলা হ্যাচারি মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, যশোরে সমিতিভুক্ত রেণুপোনা উৎপাদনের হ্যাচারি রয়েছে ৩৬টি। এর বাইরেও ১০ে থকে ১৫টি আছে। এসব হ্যাচারিতে চলতি বছর দুই থেকে আড়াই লাখ কেজি রেণু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু গরমের কারণে চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার ৫০ শতাংশও পূরণ হয় কি না, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এখানে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ কোটি টাকার পোনা বিক্রি হতো। কিন্তু এপ্রিলের ১০ তারিখের পর থেকে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকায় নেমেছে বিক্রি, যা ক্ষতির পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে। হ্যাচারি মালিকরা জানান, এপ্রিল মাসের শুরু থেকে যশোরে তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হয়। একদিকে যেমন পানির সংকট অন্যদিকে পুকুরের পানি রোদে গরম হয়ে স্বাভাবিক তাপমাত্রা হারিয়েছে। এই পানিতে ডিম ছাড়লে তা থেকে পোনা উৎপাদন হচ্ছে না। সব ডিম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে লোকসানে পড়েছেন তারা।

মাছের ডিম, চারা, রেণুপোনা উৎপাদন ও বিপণন করেন চাঁচড়ার রবিউল ইসলাম রবি। বেচাকেনা মোটেও হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘খরচ কিন্তু প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। এই গরমে ৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে আমার। শুধু আমার না, এভাবে সবাই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং হচ্ছেন।

গত ১০ থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত হ্যাচারি মালিকদের ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন জেলা হ্যাচারি মালিক সমিতির সভাপতি ফিরোজ খান। তিনি বলেন, এই ক্ষতি আগামী কয়েক মৌসুমেও উঠবে বলে মনে হয় না। শিগগির বৃষ্টি না হলে ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়বে। তখন হয়তো ক্ষতির অঙ্ক শত কোটি ছাড়িয়ে যাবে।

যশোরে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে, এ অবস্থায় পোনা চাষিদের হ্যাচারি কিংবা ঘেরে প্রচুর পরিমাণ পানি দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, পানির স্বাভাবিক তাপমাত্রা যাতে ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে, সেই চেষ্টা করতে হবে। তাহলে পোনা উৎপাদনে সমস্যা হবে না।

এদিকে, বিপাকে পড়েছেন চুয়াডাঙ্গার মাছচাষিরা। এই তীব্র গরমে চুয়াডাঙ্গার জলাশয়ের মাছ মরে যাচ্ছে। এতে করে লোকসানের মুখে পড়ছেন চাষিরা। তাপমাত্রা থাকছে ৩৮ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আর মাছ চাষের জন্য ২৫ থেকে ৩২ ডিগ্রি আদর্শ তাপমাত্রা। ফলে মাছ মারা যাচ্ছে। বিভিন্ন পুকুরে মাছ চাষিরা তাদের মাছ বাঁচানোর জন্য পানি সেচসহ আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। তারপরও অতিরিক্ত তাপে মরে যাচ্ছে মাছ।

এক মাছ ব্যবসায়ী জানান, পুকুরে জাল দিয়েও গরমের কারণে মাছ উঠছে না। সব মাছ গভীরে চলে যাচ্ছে। বৃষ্টি হবে তারপর মাছ ভাসবে। এখন মাছ ভাসছে না, একদম গভীরে চলে যাচ্ছে। মাছচাষি মো. আমানউল্লাহ বলেন, আমার দুটি পুকুর আছে। গরমে মাছ ছটফট করছে। মাছ বাঁচাতে স্যালো মেশিন দিয়ে পুকুরে পানি দিচ্ছি। নির্ধারিত সময়ের আগেই কিছু মাছ তুলে বিক্রি করে দিয়েছি।

জানা যায়, টানা তীব্র গরমে বগুড়ার ধুনট উপজেলায় বিভিন্ন জলাশয়ের মাছ মরে যাচ্ছে। এক সপ্তাহে কমপক্ষে ৩০০ মেট্রিক টন মাছের ক্ষতি হয়েছে। এতে করে লোকসানের মুখে পড়ছেন চাষিরা। উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় বিভিন্ন আয়তনের প্রায় ২ হাজার পুকুর ও জলাশয় রয়েছে। এছাড়া তিনটি নদী আছে। যেখানে চাষ ছাড়াও প্রাকৃতিকভাবেই মাছ পাওয়া যায়। মাছ চাষের জন্য ২৫ থেকে ৩২ ডিগ্রি আদর্শ তাপমাত্রা। সাধারণত পুকুরের পানির স্তর ৫ ফুটের ওপরে থাকলে মাছের ক্ষতির আশঙ্কা কম থাকে। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় পুকুরের পানির স্তর হু হু করে নামছে। এতে দেখা দিয়েছে অক্সিজেনের সংকট। আর পানিতে অক্সিজেন না পেয়ে হাঁসফাঁস করে মাছ। ফলে মাছের ক্ষতির আশঙ্কাও বাড়ছে। এ উপজেলায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে মাছের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪ হাজার ২০০ মেট্রিক টন। তবে এবার গরমের কারণে উৎপাদন কম হতে পারে।

প্রচণ্ড গরমের কারণে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন গরুর খামারিরা। কোরবানি ঈদের আর প্রায় দেড় মাস সময় বাকি। এর মধ্যে তাপপ্রবাহের কারণে হিটস্ট্রোকে গরু মৃত্যুর ঘটনাও বাড়ছে। গরমের মধ্যে লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় খামারিদের ত্রাহি দশা। প্রতিটি খামারে দিনে তিন থেকে চারবার গরু গোসল করানো হচ্ছে। সিলিং ফ্যানের পাশাপাশি বড় সাইজের হাতপাখাও ব্যবহার করা হচ্ছে অনেক খামারে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাপপ্রবাহের কারণে গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন পাবনা ও সিরাজগঞ্জের খামারিরা। যারা গরু পালন করছেন, তারাও রয়েছেন শঙ্কায়। কুষ্টিয়া. মুন্সীগঞ্জ ও অন্য জেলার খামারিরাও অজানা শঙ্কায় আছেন। ঢাকার মোহাম্মদপুর সাদেক অ্যাগ্রোতে গরুর পরিচর্যা বাড়ানো হয়েছে। চলছে সার্বক্ষণিক নজরদারি। পাবনার সদর থানার জোতআদম ও ফরিদপুর উপজেলার একাধিক গ্রাম এবং সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার রামখারুয়া গ্রামে কমে গেছে দুধ উৎপাদন। গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে গবাদিপশু। জোতআদম গ্রামের খামারি লুৎফর রহমানের সম্বল বলতে চারটি গরু। লুৎফর বলেন, ঈদ সামনে রেখে বাড়িতে চারটি গরু পালন করছি। এই গরমে সুস্থ রাখতে প্রতিদিন অন্তত তিনবার গোসল করাতে হচ্ছে। প্রতিটি গরুর জন্য একটি করে ফ্যান চালাচ্ছি। বিদ্যুৎ চলে গেলে পরিবারের সবাই মিলে পাখা দিয়ে বাতাস করি।

তিনি বলেন, এই সময় গরুর মোটাতাজা হয়ে ওঠার কথা, সেখানে গরু শুকিয়ে যাচ্ছে। পাবনার ফরিদপুর উপজেলার বাসিন্দা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, গরমের সঙ্গে সঙ্গে গরুর পালনের খরচও বেড়েছে। অতিরিক্ত পানি খেতে দিতে হচ্ছে, গোসল করাতে হচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি শ্রমিক লাগছে। সাইফুলের খামারে ৬০টি গরু রয়েছে। প্রতিদিন ছয় থেকে সাতজন রাখাল কাজ করছেন। পশুখাদ্যের দাম বেড়েছে বলেও জানান তিনি। সাইফুল বলেন, প্রতি বস্তা গমের ভুষি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সব মিলিয়ে সপ্তাহে প্রতিটি গরুর পেছনে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত খরচ বেড়েছে।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার রামখারুয়া গ্রামের কৃষক রাজু আহমেদ বলেন, তীব্র তাপদাহে গরুর দুধ উৎপাদন কমেছে। স্বাভাবিক সময়ে যেখানে ২০ থেকে ২৫ কেজি দুধ পাওয়া যেত, এখন ১৮ থেকে ২০ কেজির বেশি পাওয়া যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ইমরান হোসেন বলেন, তীব্র তাপদাহে গরুর দুধ উৎপাদন কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশ। এছাড়া উৎপাদন খরচ বেড়েছে প্রায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। এতে বিপাকে পড়েছেন খামারিরা। ইমরান বলেন, বাংলাদেশে যেসব প্রজাতির গরু পালন করা হয়, সেগুলো খরা সহিষ্ণু নয়। যে কারণে অতিরিক্ত তাপে গবাদিপশুর শরীরে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এদিকে সাভার পৌর এলাকার ভাগলপুর পন্ডিতপাড়ায় সাভার অ্যাগ্রোর মালিক নাফিজ জাইদী রুমেল জানান, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, দিনাজপুরের প্রান্তিক খামারির বাড়ি থেকে তিনি প্রতি বছর গরু সংগ্রহ করেন। কয়েক মাস ধরে সেগুলো যত্ন সহকারে খামারে লালন-পালন করা হয়। ৯ মাস ধরে পালন করা হচ্ছে ৩৫টি গরু। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাবার দিয়ে পালন করা হচ্ছে। কাচা ঘাস, ধানের খড়, নিজস্ব রেশনে তৈরি দানাদার মিশ্রণ করে খাওয়ানো হয়। খামারের গরুর সব ধরনের ভ্যাকসিন দেয়া হয়। প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৮ ঘণ্টা চারজন লোক গরুর পরিচর্যা করেন। তার খামারে সবগুলো দেশাল জাতের গরু দাবি করে রুমেল বলেন, ঢাকা কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনায় এমএ পাস করার পর কিছুদিন চাকরি ও ব্যবসা করেন। এরপর পৈতৃক জমিতে গরুর খামার গড়ে তোলেন। গরু ছাড়াও আছে গারল, ভেড়া, খাসি। পালন করেন দুম্বাও। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ঠিকমতো না থাকায় প্রচণ্ড গরমে গরু নিয়ে খুবই চিন্তিত। দৈনিক চারবার গোসল করানো হয়।

অন্যদিকে গাইবান্ধায় চলমান তাপদাহে হিটস্ট্রোকে মারা যাচ্ছে গবাদিপশু ও পাখি। জেলায় গত কয়েক দিনে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে অন্তত ১২টি গরুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। তাপ কমাতে গবাদিপশুর ঘরের চালায় পানি ছিটিয়েও লাভ হচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন খামারিরা। তারা বলছেন, হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত গবাদিপশুর অধিকাংশই বিদেশি জাতের। এমন পরিস্থিতিতে গবাদিপশুকে তাপদাহ থেকে সুরক্ষিত রাখতে সচেতনতামূলক মাইকিং করছে জেলা ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ। গত সাত দিনে গাইবান্ধা সদর উপজেলার খোলাহাটি ইউনিয়নের উত্তর আনালেরতারি গ্রামের প্রতাপ ঘোষের চারটি বিদেশি জাতের গরু মারা গেছে। অসুস্থ হয়ে পড়েছে খামারের বাকি গরুগুলোও। খামারে একাধিক ফ্যান লাগিয়ে, এমনকি চালে পানি ছিটিয়ে পশুর ঘর ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করছেন তিনি। গাইবান্ধা সদরের উত্তর গিদারী গাছের ভিটা গ্রামের খামারি জোহা মিয়ার খামারে গত চার দিনে হিটস্ট্রোকে তার ছয়টি গরু মারা গেছে। কাজে আসছে না প্রাণিসম্পদ বিভাগের চিকিৎসকের পরামর্শও।

জানা যায়, তাপপ্রবাহে খামারের পশুকে দিনে তিনবার গোসল করানোসহ বেশ কয়েকবার পানি ছিটিয়েও কাজ হচ্ছে না। গরু-ছাগল বাঁচাতে খামারিদের জেনারেটরের পেছনে অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এতে কোরবানির পশুর দাম বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

খামারিরা গরুকে ঠান্ডা রাখার জন্য দুই থেকে তিনবার করে গোসল করাচ্ছেন। পাশাপাশি গরু রাখার ঘরের চালে পানি ছিটাচ্ছেন যাতে করে ঘর ঠান্ডা থাকে। সেই সঙ্গে গরুকে পানির সঙ্গে মিশিয়ে গ্লুকোজও খাওয়াচ্ছেন কেউ কেউ। এছাড়া শুধু যে গরমের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন এমনটি নয়, দিন-রাত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নরসিংদী জেলার অধিকাংশ এলাকায় ৭ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ খামারিদের। জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্য মতে, জেলায় ছয়টি উপজেলায় হৃষ্টপুষ্টকরণ গবাদিপশুসহ কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর ৮ হাজার ৩৮০টি খামার রয়েছে। এর মধ্যে নরসিংদী সদর উপজেলায় ৭৮০টি, রায়পুরা উপজেলায় ১ হাজার ৭৩২টি, বেলাব উপজেলায় ১ হাজার ২৮৫টি, পলাশ উপজেলায় ৬৮৩টি, শিবপুর উপজেলায় ১ হাজার ২৬৬টি এবং মনোহরদী উপজেলায় ২ হাজার ৬৩৪টি। এসব খামারে ষাঁড় গুরু রয়েছে ৩২ হাজার ৫৫২টি, বলদ গরু রয়েছে ৬ হাজার ৩৩১টি, গাভি রয়েছে ৫ হাজার ৬৫২টি, মহিষ রয়েছে ১ হাজার ৯৮৭টি, ছাগল রয়েছে ৩৫ হাজার ৪১০টি, ভেড়া রয়েছে ১৩ হাজার ৬৬৭টি এবং অন্যান্য পশু রয়েছে ৬৯টি। জেলায় মোট চাহিদা রয়েছে ৭৭ হাজার ৯৩৬টি। বর্তমানে প্রাপ্যতা রয়েছে ৯৫ হাজার ৬৬৮টি, যা চাহিদার মিটিয়ে ১৭ হাজার ৭৩২টি উদ্ধৃত্ত রয়েছে। নরসিংদী সদর উপজেলার বীরপুর এলাকার সাইফ অ্যাগ্রো ফার্মের মালিক সাইফ আহমেদ জানান, তার খামারে ৭০টি গরু আছে। এই গরমে গরুগুলো ঠিকমতো খাবার খাচ্ছে না। ঈদুল ফিতরের আগেও প্রতিদিন ৩৫০ লিটার দুধ উৎপাদন হতো। এখন ২০০ থেকে ২৫০ লিটার দুধ উৎপাদন হচ্ছে। এছাড়া গরুর ওজনও কমে যাচ্ছে। চলমান লোডশেডিংয়ের কারণে খরচ ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যাচ্ছে। গরমে অনেক গরু অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তাই চিকিৎসা ব্যয় বেড়ে গেছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত