ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

১৬ মাসেও মেলেনি রেজিস্ট্রি বিভাগে মহাপরিদর্শক

সাবরেজিস্ট্রি অফিসে বালাম বই সংকট
১৬ মাসেও মেলেনি রেজিস্ট্রি বিভাগে মহাপরিদর্শক

দেশজুড়ে জমির দলিল রেজিস্ট্রেশনের কাজে সরাসরি সম্পৃক্ত সাবরেজিস্ট্রি অফিস। আর এসব সাবরেজিস্ট্রি অফিস দেখভালের জন্য রয়েছে নিবন্ধন অধিদপ্তর। তবে সেই নিবন্ধন অধিদপ্তরে নেই মহাপরিদর্শক (আইজিআর)। ফলে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এ অধিদপ্তরটি গত এক বছর চার মাস ধরে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে চালানো হচ্ছে। জানা গেছে, জমি নিবন্ধন অধিদপ্তরের প্রধান নির্বাহী হলেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব রেজিস্ট্রেশন (আইজিআর) জ্যেষ্ঠ জেলা জজ। সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় আইজিআর নিয়োগ দিয়ে থাকে। কিন্তু গত এক বছর চার মাস ধরে নিবন্ধন অধিদপ্তরে স্থায়ী আইজিআর নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, দলিল নিবন্ধন ও সম্পাদনের কাজ করে থাকে নিবন্ধন অধিদপ্তর। মানুষের সেবাদানের পাশাপাশি রেজিস্ট্রেশন বিভাগ সরকার এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে রাজস্ব ও করাদি আহরণ করছে। অথচ গত বছরের জানুয়ারিতে নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক পদে থাকা মোহাম্মদ শহীদুল আলম ঝিনুক অবসরের পর আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (মতামত) উম্মে কুলসুম অতিরিক্ত আছেন। জমি নিবন্ধন অধিদপ্তরে দ্রুত মহাপরিদর্শক নিয়োগ দেওয়া উচিত। স্থায়ী মহাপরিদর্শক থাকাকালীন সারা দেশে সাবরেজিস্ট্রি অফিস উন্নয়ন ও তদারকির যে গতি থাকত, এখন সেটি নেই। সেবাপ্রার্থীরা খুব অসহায় বোধ করছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেজিস্ট্রি বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, সারা দেশে অবস্থিত সাবরেজিস্ট্রি অফিসগুলো থেকে সরকারের শত শত কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়। অথচ আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা নিবন্ধন অধিদপ্তরেই মিলছে না স্থায়ী মহাপরিদর্শক। বিভিন্ন জেলার মাঠপর্যায়ে সাবরেজিস্ট্রি অফিসে বালাম বই সংকট তৈরি হয়েছে। অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক রুটিন ওয়ার্ক করে থাকেন। এর বাইরে বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ নেই ওনার। তবে নিবন্ধন অধিদপ্তরে স্থায়ী মহাপরিদর্শক থাকলে যে কোনো সিদ্ধান্ত দ্রুত নেওয়া যেত। তাই নিবন্ধন অধিদপ্তরে মহাপরিদর্শক নিয়োগ জরুরি।

আইজিআরের অভাবে সারা দেশের জেলা রেজিস্ট্রি ও সাবরেজিস্ট্রি অফিসগুলোর কার্যক্রম মনিটরিং, নতুন পরিকল্পনা কিংবা উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সারা দেশের জেলা রেজিস্ট্রি ও সাব-রেজিস্ট্রি অফিসগুলো জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এসব অফিস নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিং করে নিবন্ধন অধিদপ্তর। অথচ এক বছর চার মাস ধরে স্থায়ী আইজিআর নিয়োগ দেয়া হয়নি। ফলে নিবন্ধন অধিদপ্তরের বেশকিছু কাজ স্থবির হয়ে আছে।

নিবন্ধন অধিদপ্তরের বেশ কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, নিবন্ধন অধিদপ্তরের পদটি দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন আইন ও বিচার বিভাগের যুগ্মসচিব (মতামত) উম্মে কুলসুম। তিনি যগ্মণ্ডসচিবের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) দায়িত্বে রয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কাজের ব্যস্ততার কারণে নিবন্ধন অধিদপ্তরে অধিকাংশ দিনে ১ থেকে ২ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করছেন। অধিদপ্তরে এসে রুটিনমাফিক কাজ করে মন্ত্রণালয়ে চলে যান। অথচ এ পদই অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এই পদে পদায়নের জন্য অনেক কর্মকর্তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে তদবির করেন। পদের অভাবে পদায়ন পাচ্ছেন না বহু মেধাবী জেলা জজ। আর নিবন্ধন অধিদপ্তরের মতো আকর্ষণীয় প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদ মাসের পর মাস ফাঁকা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে এ ধরনের নজির আগে কখনো ছিল না। অন্য সময়ে দেখা গেছে, পদ ফাঁকা হলে সঙ্গে সঙ্গেই তা পূরণ হয়ে গেছে। তবে প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদ দীর্ঘদিন ফাঁকা থাকার পেছনে কারণ রয়েছে। প্রশাসনিক কার্যক্রম হযবরল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

আইন মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মন্ত্রণালয়ের খামখেয়ালির জন্য হযবরল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলেন, মহাপরিদর্শক পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদ। এটি পূরণে মন্ত্রণালয়ের গড়িমসি করছে। বিষয়টি ‘টপ অব দ্য, আইন মন্ত্রণালয়ে পরিণত হয়েছে। এছাড়া মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়মণ্ডশৃঙ্খলায় টালমাটাল অবস্থা বিরাজ করছে। পাশাপাশি, চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। নিবন্ধন অধিদপ্তরের একটি সূত্র বলছে, মহাপরিদর্শক না থাকার সুযোগ নিয়ে যেমন প্রশাসনে গাছাড়া ভাব দেখা দিয়েছে তেমনি মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখায়ও গাছাড়া ভাবের কারণে নিবন্ধন বিভাগের কয়েকজন জেলা রেজিস্ট্রার ও সাব রেজিস্ট্রারদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সারা দেশে ভূমি নিবন্ধনের দায়িত্ব সাব-রেজিস্ট্রারের। আর সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়গুলো দেখভাল এবং জমি কেনাবেচা ও জমির মূল্য নির্ধারণের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান এক বছর চার মাসের বেশি সময় ধরে নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক পদটি অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিয়ে চলছে। দ্রুত মহাপরিদর্শক নিয়োগ দেয়া না হলে নানামুখী সংকটে পড়বে নিবন্ধন অধিদপ্তর।

উল্লেখ্য, নিবন্ধন বিভাগের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৭৮১ সালে। ১৭৯৩ সালে বেঙ্গল রেগুলেশনের মাধ্যমে ঢাকায় প্রথম রেজিস্ট্রি অফিস স্থাপন করা হয়। এরপর ১৯০৮ সালে উপমহাদেশের রেজিস্ট্রেশনের জন্য পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণীত হয়। প্রায় দুই বছরের বেশি সময় নিবন্ধন বিভাগ সুনাম যতটা অর্জন করেছে তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি অর্জন করেছে দুর্নাম। অভিযোগ আছে, সাব-রেজিস্ট্রারের অফিসে ঘুষ না দিয়ে সচরাচর জমিজমা নিবন্ধন করা সম্ভব নয়। নিবন্ধন বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে, মূলত প্রতিষ্ঠানটির কাঠামোগত দুর্বলতার কারণে দুর্নীতির বিস্তার ঘটেছিল। নতুন কাঠামো দাঁড়িয়ে গেলে দুর্নীতি ও অনিয়ম বহুলাংশে কমবে। অথচ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসগুলো যে প্রতিষ্ঠানের অধীনে চলছে, সেই প্রতিষ্ঠানটি চলছে অতিরিক্ত দায়িত্বে। এ ব্যাপারে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে মোবাইলে কল করা হলে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত