সুন্দরবনে লাগা আগুন ৩০ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে
পুড়ে ছাই কয়েক একর বনের গাছ লতাগুল্ম
প্রকাশ : ০৬ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
বাগেরহাট প্রতিনিধি
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়ি সংলগ্ন লতিফের ছিলা এলাকায় লাগা আগুন ৩০ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে শতভাগ নির্বাপণ হয়নি এখনো। গতকাল বিকালে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করেন ফায়ার সার্ভিসের মোংলা স্টেশন কর্মকর্তা মো. কায়মুজ্জামান ও সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. নূরুল করিম। আগুন লাগার দ্বিতীয় দিন গতকাল ভোর থেকে সুন্দরবন বিভাগের চারটি অফিসের কর্মকর্তা ও বনরক্ষীসহ ফায়ার সার্ভিসের বাগেরহাট, মোরেলগঞ্জ, মোংলা, শরণখোলা, কচুয়া ও খুলনাসহ পাঁচটি স্টেশনের সদস্য, নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড, পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও সুন্দরবন সুরক্ষায় টিমের স্থানীয় সদস্যরা একযোগে আগুন নিয়ন্ত্রণে দিনব্যাপী কাজ করেছে। দুপুরে সুন্দরবনে আগুন নিয়ন্ত্রণে এই প্রথম যুক্ত হয় বিমান বাহিনীর হ্যালিকপ্টার। হ্যালিকপ্টার থেকেও আগুন লাগা স্থানগুলোতে ফেলা হয় পানি। এরআগেই বিশ্ব ঐতিহ্য এই সংরক্ষিত বনের বিভিন্ন স্থানের বেশ কয়েক একর এলাকার ছোট-ছোট গাছপালাসহ লতাগুল্ম আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। বন বিভাগের দেয়া তথ্য মতে ২০০২ সাল থেকে সুন্দরবনে ২৫টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৮৬ একর বন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তবে বেসরকারিভাবে বন পুড়ে যাওয়ার পরিমাণ আরো অনেক বেশি। দিনভর এই অগ্নিকাণ্ডের স্থান ঘুরে কোনো বন্যপ্রাণী মারা যাওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি।
চাঁদপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়ি সংলগ্ন লতিফের ছিলা এলাকায় গত শনিবার সকাল ১১টার দিকে লোকলয়ের লোকজন সুন্দরবন বিভাগের বনের বিভিন্ন স্থানে ধোঁয়ার কুন্ডলী দেখতে পায়। পরে স্থানীয়রা দুপুরে আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়ি বন কর্মকর্তা ও বন রক্ষীদের বিষয়টি জানায়। তারা বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে দ্রুত বনের দুই কিলোমিটার গহীনে লতিফের ছিলা এলাকার বিভিন্ন স্থানে দাউ-দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখে। আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়িসহ আশপাশের চারটি বন অফিসের কর্মকর্তা ও বন রক্ষীসহ স্থানীয়রা আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করে। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে মোরেলগঞ্জ, মোংলা, শরণখোলা ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও আশপাশে পানির উৎস্য না থাকা ও সন্ধ্যা হয়ে আসায় দিনের আলো না থাকায় তারাও বন কর্মকর্তা ও বনরক্ষীসহ স্থানীয়দের সাথে গহীন অরণ্য থেকে লোকালয়ে ফিরে আসে।
গত রোববার সকালে খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো’র নেতৃত্বে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মোহম্মদ নুরুল করিম বন কর্মকর্তা, বনরক্ষী ও সুন্দরবন সুরক্ষায় টিমের সদস্যদের দিয়ে প্রথমেই আগুন লাগার স্থানগুলোকে ঘিরে লাইন অব ফায়ার (নালা) কেটে দেয়। দ্রুত দুই কিলোমিটার দূরে ভোলা নদী থেকে লাইন টেনে লাইন অব ফায়ার নালায় পানি ভরে দেয়। যাকে আগুন বনের অন্য স্থানগুলোতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে। এরপর ফায়ার সার্ভিসের বাগেরহাট, মোরেলগঞ্জ, মোংলা, শরণখোলা, কচুয়া ও খুলনার পাঁচটি স্টেশনের সদস্য বনের বিভিন্ন স্থানে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করে। এ সময়ে নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড, পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও সুন্দরবন সুরক্ষায় টিমের স্থানীয় সদস্যরা একযোগে আগুন নিয়ন্ত্রণে ঝাঁপিয়ে পড়েন। দুপুরে সুন্দরবন আগুন নিয়ন্ত্রণে এই প্রথম যুক্ত হয় বিমান বাহিনীর হ্যালিকপ্টার। হ্যালিকপ্টার থেকেও আগুন লাগা স্থানগুলোতে ফেলা হয় পানি। দুপুর ২টার মধ্যে আগুনের তীব্রতা কমে আসতে থাকে।
৩০ ঘণ্টা পর গতকাল বিকাল ৫টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করেন ফায়ার সার্ভিসের মোংলা স্টেশন কর্মকর্তা মো. কায়মুজ্জামান ও বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. নুরুল করিম। তারা জানান, সুন্দরবনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও আজ সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। ধোঁয়ার কুন্ডলী দেখলে দ্রুত পানি দিয়ে ভিজিয়ে দেয়া হবে। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন প্রধান বন সংরক্ষক (সিসিএফ) মো. আমির হোসাইন চৌধুরী, বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালিদ হোসেন ও পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত খান।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মোহম্মদ নুরুল করিম জানান, আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কীভাবে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে সে বিষয়ে চাঁদপাই রেঞ্জে কর্মকর্তা (এসিএফ) রানা দেবকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাত কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট পাওয়ার পর কীভাবে আগুন লেগেছে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।