চাকরিতে প্রবেশে বয়সসীমা

সংসদে যা বললেন জনপ্রশাসন মন্ত্রী

প্রকাশ : ০৭ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়টি নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয় বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আরও আলাপ-আলোচনা করবেন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আপাতত বয়সসীমা বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত সরকারের নেই। আগামীতে বাড়াবো কী-বাড়াবো না, বাড়ালে ভালো হবে কি না? এটা আমাদের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। বিষয়টি আরও আলোচনা-পর্যালোচনা করে ভবিষ্যতে দেখব, তখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারব।

গতকাল জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে পৃথক দুটি সম্পূরক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে মন্ত্রী এ তথ্য জানান। এর আগে সম্পূরক প্রশ্নের চাঁদপুর-৫ আসনের রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম ও সংরক্ষিত আসনের এমপি ফরিদা ইয়াসমিন চাকরির বয়সসীমা বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে কি না তা জানতে চান।

রফিকুল ইসলাম তার প্রশ্নে বলেন, সরকারি চাকরিতে যোগদানের যে বয়সসীমা রয়েছে তা অনেক আগে নির্ধারণ করা হয়েছিল। এরইমধ্যে আমাদের দেশের মানুষের আয়ুষ্কাল ৬২ বছর থেকে ৭২ বছরে এসে পৌঁছেছে। এখন এটা অত্যন্ত যৌক্তিক হবে সরকারি চাকরিতে যোগদানের বর্তমান বয়সসীমা শিথিল করে অন্তত ৩৫ বছরের কাছে নিয়ে যাওয়া। এটা হলে কর্মসংস্থানের অভাবে আমাদের হতাশাগ্রস্ত তরুণ ও যুব সমাজ প্রতিযোগিতায় এসে সরকারি চাকরিতে ঢুকতে পারবে। আমি সরকারকে অনুরোধ করব বয়সসীমা শিথিল করার সময় এসেছে। সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টির সময় হয়েছে। আমাদের ‘না’ একটা মনোভাব রয়েছে- এটা থেকে বেরিয়ে ‘হ্যাঁ’-তে চলে আসতে হবে।

জবাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, গত ১৫ বছরে সরকার অনেক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। চাকরির বয়স ছিল ২৭ বছর সেখান থেকে বৃদ্ধি করে ৩০ বছরে উন্নীত করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য সেটা ৩২ বছর করা হয়েছে। চাকরি থেকে অবসরের বয়স ৫৭ বছর থেকে বাড়িয়ে ৫৯ বছর করা হয়েছে। আমরা সবসময় যুগের সাথে তাল মিলিয়ে জনবল কাঠামো ও নিয়োগ প্রক্রিয়া আধুনিকায়ন করে থাকি। যুগের সাথে সম্পর্ক রেখে আমরা পরিবর্তনও করে থাকি।

চাকরিতে প্রবেশ ও বেরিয়ে যাওয়ার (অবসর) বয়সটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সরকারি চাকরি ঘিরে এখন বেশ আকর্ষণ তৈরি হয়েছে।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যন্ত মেধাবীরা ক্যাডার সার্ভিসে যোগদান করছেন। সরকারি চাকরির পরিবেশ থেকে শুরু করে বেতন কাঠামো নতুন প্রজন্মের কাছে বড় আকর্ষণ তৈরি করেছে। সরকারের কাজের সাথে সম্পৃক্ততা একটি সম্মানের বিষয়। আবার চাকরির নিরাপত্তা থেকে শুরু করে বেতন কাঠামো অত্যন্ত সুন্দর এবং কাজের পরিবেশও সুন্দর হয়েছে।

বয়স বাড়ানো প্রশ্নে তিনি বলেন, এটি নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। আমরা সবসময় বলে আসছি, ফ্রেশ গ্রাজুয়েট যারা তাদের রিক্রুট করতে চাই। এটা সরকারের একটা পলিসি। আমরা বিসিএস-এর মাধ্যমে দেখে থাকি ২২-২৩ বছর বয়স থেকেই তারা বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে থাকেন। তারা ৬-৭ বছর সময় পেয়ে থাকেন। এজন্য তারা যোগদানের যথেষ্ট সময় পাচ্ছেন।

প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়টি সংসদে জানিয়েছেন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমরা সবসময় যুগের প্রয়োজনে নতুন যেটা করলে ভালো হবে সেটা চিন্তা-ভাবনা করে থাকি।

তবে আমি মনে করি, এটা নীতিগত সিদ্ধান্ত। আমরা চাকরির বয়স- আগামীতে বাড়াব কী বাড়াব না, বাড়ালে ভালো হবে কি না? এটা আমাদের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। এটা নিয়ে ভবিষ্যতে আরও আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারব।

সংরক্ষিত আসনের ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, চাকরির বয়স ৩৫ বছর করার জন্য শিক্ষামন্ত্রী একটি আধাসরকারি পত্র (ডিও লেটার) দিয়েছেন। সরকারের এটা নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে কি না? জবাবে মন্ত্রী বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর থেকে এ ধরনের একটি পত্র আমরা এরইমধ্যে পেয়েছি। আগেই বলেছি এটা আমাদের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। প্রধানমন্ত্রীর সাথে আরও আলাপ-আলোচনা করব। তবে আপাতত চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর ক্ষেত্রে আমাদের সিদ্ধান্ত নেই। এটা নিয়ে আরও আলোচনা-পর্যালোচনা করে ভবিষ্যতে দেখব। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠকের শুরুতে প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠিত হয়।