ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন স্লোগানে মুখরিত গোটা দেশ

ঢাবিতে ছাত্রলীগের সমাবেশ

প্রকাশ : ০৭ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ঢাবি প্রতিনিধি

স্বাধীন ফিলিস্তিন ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলমান ফিলিস্তিনপন্থি ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে ফিলিস্তিনি পতাকা উত্তোলন, পদযাত্রা ও সমাবেশের ডাক দেয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। এ লক্ষ্যে গতকাল সকাল থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন স্লোগানে মুখরিত হয় পুরো বাংলাদেশ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা ছাড়াও ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজের হাজার হাজার নেতাকর্মী বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জড়ো হন। এ সময় সবার হাতে স্বাধীন ফিলিস্তিনের পতাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের পতাকা স্থান পায়। ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন স্লোগানে মুখরিত হয় পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। সমাবেশ শুরুর আগে একটি পদযাত্রা রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে শুরু করে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করে আবার রাজুতে এসে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

শুধু ঢাবি ক্যাম্পাস নয়, খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। সবার মুখে একটাই স্লোগান- ‘ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন।’

ঢাবিতে ছাত্রলীগের ডাকা সমাবেশে সংগঠনটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমরা দেখেছি যারা গণতন্ত্রের মোড়ল, বাকস্বাধীনতার সার্টিফিকেট দেয়, যারা বলে দেয় কোন দেশটি গণতান্ত্রিক আর কোন দেশটি অগণতান্ত্রিক তাদের মুখোশ কীভাবে উন্মোচিত হয়ে গেছে। আমরা দেখেছি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৪০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন আন্দোলন চলমান রয়েছে সেখানে আড়াই হাজারের অধিক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আন্দোলন করার জন্য শিক্ষার্থীদের ওপর বহিষ্কারাদেশ নেমে এসেছে।

সাদ্দাম বলেন, শুধু স্বাধীন ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলার কারণে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী মায়মুনাকে বহিষ্কারের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। শিক্ষার্থীকে বাঁচাতে গিয়ে শিক্ষকের পাঁজরের হাড় ভেঙে দেয়া হয়েছে। পৃথিবীর যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর যারা নিপীড়ন করে আমরা তাদের ধিক্কার জানাই।

ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সবচেয়ে বেশি জানে গণহত্যার বেদনা কত বেশি। ছাত্র সংগঠন হিসেবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ একটি অন্যতম সংগঠন, যেটি সবচেয় বেশি গণহত্যার শিকার হয়েছে। আমরা সেই অতীত অভিজ্ঞতা থেকে জানি এই যুদ্ধের বেদনা কত তীব্র, আমরা জানি স্বাধীনতার জন্য মানুষের আকাঙ্খা কত বেশি শক্তিশালী। সে কারণে আমরা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের দাবিতে দেশে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলাম। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি।

সাদ্দাম বলেন, আমরা মনে করি ফিলিস্তিনে যারা গণহত্যা চালাচ্ছে, নারী ও শিশুদের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে তারাও একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত, তারাও মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে তাদেরকে অভিযুক্ত করে এই মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

আমরা গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধ বিরতি চাই। জাতিসংঘ ও নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি প্রস্তাবের ভিত্তিতে আগ্রাসনবাদী শক্তি ফিলিস্তিনের মানচিত্রের যতটুকু দখল করেছে, সেই দখলদার শক্তির কাছ থেকে আমরা ফিলিস্তিনের নিরাপত্তা, নিশ্চয়তা ও স্বাধীনতা চাই।

বিশ্ব মোড়লদের প্রতি প্রশ্ন রেখে সাদ্দাম হোসেন বলেন, বিশ্বের মোড়লদের প্রতি প্রশ্ন রাখতে চাই, কবে এটাকে গণহত্যা বলা হবে? কত হাজার মরলে মানুষ বলবে তুমি শেষে, বড্ড বেশি মানুষ গেছে বানের জলে ভেসে।

ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, আজকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের যে বাঁধভাঙা গণজোয়ার তা সেই গাজা উপত্যকায় গিয়ে লাগবে এবং গাজা উপত্যকা থেকে সকল অন্যায়, অবিচার, অপশাসন ভেসে যাবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেছিলেন- ‘বিশ্ব আজ দুই ভাগে বিভক্ত- শোষক আর শোষিত; আমি শোষিতের পক্ষে।’ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন আমরাও জানিয়ে দিতে চাই সারা বিশ্বের শোষিত, নিপীড়িত মানুষের পক্ষে থাকব, অত্যাচারিত মানুষের পক্ষে থাকব।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনা প্রকৃত অর্থে যোগ্য পিতার যোগ্য কন্যা, গণতন্ত্রের মানসকন্যা। তিনি অন্যায় অবিচার, গণহত্যার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। বিশ্বের মোড়লদের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন যা সত্যিই অনেক সাহসিকতার বিষয়। সারা বিশ্বে শান্তি ফেরাতে শেখ হাসিনার যে মডেল সেটিকে গ্রহণ করার জন্য আমরা বিশ্ব নেতাদর প্রতি আমাদের আজকের এই বাঁধভাঙা জোয়ার থেকে আহ্বান জানাচ্ছি।

সমাবেশে ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী ইসহাক আহমেদ চলমান আন্দোলনে ছাত্র সমাজের সংহতি প্রকাশ এবং ফিলিস্তিনের পাশে থাকার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি ধন্যবাদ জানান। সমাবেশে বক্তব্য শেষে ছাত্রলীগ সভাপতি শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে ‘শান্তির জন্য স্মারকলিপি’ শীর্ষক একটি লিখিত বার্তা পাঠ করেন।

লিখিত বক্তব্যে সাদ্দাম বলেন, একাডেমিয়ার পবিত্র হলগুলোতে, পরিবর্তনের মশাল জেগে উঠেছে। কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে তুলান ইউনিভার্সিটি, নিউইয়র্কের সিটি ইউনিভার্সিটি থেকে ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত, ছাত্ররা ভীতি ও নিপীড়নকে অস্বীকার করে, নিপীড়ন ও গণহত্যার যন্ত্রকে ইন্ধন দেয় এমন অস্ত্র থেকে বিতাড়নের দাবি জানায়। তাদের সাহসিকতা আশার আলোকবর্তিকা, যুদ্ধ ও সংঘাতের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত বিশ্বের দিকে আলোকিত করে। তিনি বলেন, আজ যখন ফিলিস্তিনের ভূমিতে সূর্য অস্তমিত হচ্ছে, এর জনগণের হৃদয়ে অন্যায়ের ছায়া ফেলেছে, আমরা ইসরায়েলের গণহত্যামূলক শাসনের যুদ্ধের অবসান এবং প্রতিষ্ঠার দাবিতে বিশ্বব্যাপী ছাত্র আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করছি। সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন, সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতসহ ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।