প্রথম ধাপে ১৪১ উপজেলায় ভোট কাল

আচরণবিধি মেনে সুষ্ঠু ভোট করা ইসির চালেঞ্জ

প্রকাশ : ০৭ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথম ধাপে ১৪১ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে আগামীকাল। ভোটে নিরপেক্ষ থেকে সুষ্ঠুভাবে ভোট করা এখন বড় চ্যালেঞ্জ নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। অন্যদিকে এমপি মন্ত্রীদে অত্মীয়দের ভোটে প্রচারণা নিয়ে বিপাকে পড়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

সূত্র জানায়, দলীয় প্রতীকে ভোট না হওয়ায় এবারের ভোট অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে কি না, এ নিয়ে একটু চিন্তিত ইসি। শেষ পর্যন্ত কত ভোটার ভোট দিতে অসবে, সেদিকে নজর ইসির। জানা যায়, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দুর্গম এলাকার ৪২৪ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের আগের দিন ব্যালট পেপার পাঠানো হবে। আর ১১ হাজার ১৩২ কেন্দ্রে ব্যালট যাবে ভোটের দিন সকালে।

ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান জানিয়েছেন, যাতায়াতের অসুবিধার জন্য দুর্গম এলাকাগুলোয় ভোটের আগের দিন ব্যালট পাঠানোর জন্য সিদ্ধান্ত দিয়েছে ইসি। এ সংক্রান্ত নির্দেশনা রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ইতিমধ্যে পাঠানো হয়েছে।

জানা গেছে, ১০টি জেলার ২৪টি উপজেলার দুর্গম কেন্দ্রে ব্যালট আগের দিন পাঠানো হবে। উপজেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে- কুড়িগ্রামে চিলমারী, রৌমারী, চর রাজিবপুর; মৌলভীবাজারের বড়লেখা, জুড়ী, কুলাউড়া; হবিগঞ্জের বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ; ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর, সরাইল, সন্দ্বীপ; রাঙ্গামাটির রাঙামাটি সদর, কাউখালী, জুড়াছড়ি, বরকল; বান্দরবানের বান্দরবান সদর, আলী কদম; খাগড়াছড়ির লক্ষীছড়ি, মানিকছড়ি, মাটিরাংগা, রামগড়; সুনামগঞ্জের দিরাই, শাল্লা ও লালমনিরহাটের হাতিবান্দা। এসব উপজেলার ৪২৪টি কেন্দ্র দুর্গম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রথম ধাপে ১৪১ উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চার ধাপে অনুষ্ঠেয় উপজেলা নির্বাচনের সব ধাপেই দুর্গম কেন্দ্রে আগের দিন ব্যালট পেপার পাঠানো হবে। অন্যগুলো যাবে ভোটের দিন সকালে। মাঠ প্রশাসন থেকে দুর্গম এলাকা চিহ্নিত করে প্রতিবেদন পাঠাল নির্বাচন কমিশন, সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়। কয়েক বছর ধরে ভোটে কারচুপি রোধ করতে আগের রাতে ব্যালট না পাঠিয়ে সকালে পাঠায় কমিশন।

তপশিল অনুযায়ী, দ্বিতীয় ধাপে ১৬০ উপজেলায় ২১ মে, তৃতীয় ধাপে ১১২ উপজেলায় ২৯ মে ও চতুর্থ ধাপে ৫৫ উপজেলায় ৫ জুন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ধাপে ২২টি, দ্বিতীয় ধাপে ২৪টি, তৃতীয় ধাপে ২১ ও চতুর্থ ধাপে দুটি উপজেলায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে

এদিকে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন করার অভিযোগে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীকে শোকজ নোটিশ দিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। নোটিশপ্রাপ্ত প্রার্থীরা হলেন- বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন (আনারস) ও রাশেদ ইউসুফ জুয়েল (দোয়াত কলম)।

গতকাল রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, আচরণবিধি লঙ্ঘন করার অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের শোকজ করা হয়েছে। মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিনকে ১২ ঘণ্টা এবং রাশেদ ইউসুফ জুয়েলকে ২৪ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে।

শোকজ নোটিশে উল্লেখ করা হয়, দোয়াত কলম প্রতিকের প্রার্থী রাশেদ ইউসুফ জুয়েল আচরণবিধি লঙ্ঘন করে কর্মী-সমর্থক দিয়ে নির্বাচনি প্রচারণায় বাধা সৃষ্টি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন- মর্মে প্রার্থী মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন লিখিত অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনায় উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা ২০১৬ এর বিধি ৩ ও বিধি ৩১ এর পরিপন্থি।

এ অবস্থায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারণে রাশেদ ইউসুফ জুয়েলের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা জানতে ৫ মে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় উপজেলা পরিষদ বিধিমালা ২০১৩ ও উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা ২০১৬ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

সূত্র জানায়, অনেক উপজেলায় এমপিদের বিরুদ্ধেও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। মন্ত্রীর ছেলে বা আত্মীয়স্বজনের বিরুদ্ধেও উঠেছে বিধিলঙ্ঘনের অভিযোগ। বিভিন্ন স্থানে সম্ভাব্য প্রার্থীদের হয়রানি করার অভিযোগ তো আছেই। সাবেক একজন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারকে প্রার্থী না হতে থানায় তলবের ঘটনাও ঘটেছে। বাধ্য হয়ে অনেক প্রার্থী ইসি কাছে এমপিদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ইসি থেকে বারবার বিধি মেনে প্রচারণার কথা বলা হলেও প্রভাবশালীরা তা একের পর এক অবজ্ঞা করে চলেছেন। ভোটারদের মন জয় করার পরিবর্তে পুলিশ প্রশাসন ও মাঠ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে মরিয়া প্রভাবশালীরা।

কয়েকজন এমপির বিরুদ্ধে অভিযোগ : উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনি প্রচারণায় অভিযোগ উঠেছে রেলমন্ত্রী জিল্লুর হাকিমের পুত্র আশিক মাহমুদ মিতুল হাকিমের বিরুদ্ধে। বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও প্রার্থী মো. ফরিদ হাসান ওদুদ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বরাবর মন্ত্রীপুত্রের অবৈধ প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে তিনি বলেন, মন্ত্রিপুত্র বিভিন্ন জনসভায় প্রকাশ্য আমাকে ও আমার কর্মী-সমর্থকদের হত্যা ও দেখে নেওয়ার হুমকি প্রদান করেছেন। অভিযোগ এসেছে শেরপুর-৩ (শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী) আসনের সংসদ সদস্য এডিএম শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে। ওই উপজেলার অন্য চেয়ারম্যান প্রার্থীদের অভিযোগ- সংসদ সদস্য এডিএম শহিদুল ইসলাম দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ঝিনাইগাতী উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায়ের পক্ষে নির্বাচনি প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। চাঁদপুরের মতলব উপজেলা নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্য কর্তৃক আচরণবিধি লঙ্ঘন করে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ ইসিতে দেওয়া হয়েছে। সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী কাজী শুভ রহমান চৌধুরীকে ব্যাখ্যা দিতে বলেছে রিটার্নিং অফিসার। কাজী শুভ রহমান চৌধুরী ঘোড়াঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান।

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী ফজলুল করিমের পক্ষে তাকে নিয়ে কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ও সভায় সরাসরি ভোট চাওয়ার অভিযোগ করেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জাফর আলম। সংশ্লিষ্টদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি। নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে জাতীয় পার্টি (জাপা) নেতা ও চেয়ারম্যান প্রার্থী মাকসুদ হোসেনকে শোকজ করেছে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা। নেত্রকোনার দুর্গাপুরে ওসির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছেন সাত চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে ছয়জনই। গত শনিবার এ নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর এক লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তারা। কুমিল্লার নাঙ্গলকোট পৌরসভার মেয়র আব্দুল মালেকের বিরুদ্ধে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ জমা পড়েছে রিটার্নিং অফিসারের কাছে। এদিকে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর এজেন্ট কেন্দ্রে ঢুকলে হাত, দাঁত ও চাপার হাড্ডি ভেঙে যমুনা নদীতে নিক্ষেপের হুমকিদাতা আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে আটক করেছে ডিবি পুলিশ। এছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলামকে (আনারস প্রতীক) শোকজ করেছেন নির্বাচন কর্মকর্তা।