৪৩ ঘণ্টা পর সুন্দরবনের আগুন শতভাগ নিয়ন্ত্রণে

প্রকাশ : ০৭ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ইয়ামিন আলী, বাগেরহাট প্রতিনিধি

বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনে লাগা আগুন টানা তৃতীয় দিনে ৪৩ ঘণ্টা পর শতভাগ নিয়ন্ত্রণে আসার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তবে শত ভাগ আগুন নির্বাপণে তিন দিন পর্যন্ত একাধিক টিম আগুন লাগা স্থান ড্রোন দিয়ে গভীর পর্যবেক্ষণ করবেন।

গতকাল সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে আগুন লাগার ঘটনাস্থল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের কাছে এই ঘোষনা দেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (প্রশাসন ও রক্ষনাবেক্ষণ) লেফটেনেন্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী। এই ঘোষণার আগে তিনি সুন্দরবনের গহীনে আগুন লাগা স্থানে গিয়ে ফায়ার ফাইটারদের আগুন নির্বাপণের নির্দেশনা দেন। এ সময় তিনি আগুন লাগা ২ কিলোমিটার এলাকার ফায়ার লাইনে পানি দিয়ে পরিপূর্ণ করার নির্দেশনা দেন।

এ সময় তিনি আরো বলেন, বনের আগুন নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়। এটা সাধারণ কোনো আগুন নয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। এ কাজে নৌ বাহিনী, কোস্ট গার্ড, ট্যুরিস্ট পুলিশ, থানা পুলিশ, গ্রাম পুলিশ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, জন সাধারণসহ বন বিভাগের সার্বিক সহযোগিতা পেয়েছি। সুন্দরবন দুর্গম এলাকা হওয়ায় বিমান বাহিনী হেলিকপ্টারে করে আগুন নেভাতে পানি ছিটিয়েছে। সবাই মিলে একযোগে কাজ করে আগুন শতভাগ নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছি। তবে আগুন পুরোপুরি নিভতে আরো এক থেকে দুই দিন সময় পর্যবেক্ষণে রাখব। কারণ এটা বিশ্ব ঐতিহ্য এটাকে তীক্ষèভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী আরো বলেন, এখানে প্রতি বছরই এরকম সময়ে এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। আর এ ঘটনায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে অনেক প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। যেহেতু সুন্দরবন আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত একটি ঐতিহ্য। তাই এই বনকে রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার।

খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষণ মিহির কুমার দে’র কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ আনতে গতকাল সোমবার ভোর থেকে তৃতীয় দফায় কাজ শুরু করা হয়। এখন আর কোথাও আগুন এমনকি ধোয়াও বের হচ্ছে না। কাজেই আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে। যেতেতু বনের আগুন তাই বনবিভাগের পক্ষ থেকে আরো দুই তিন দিন এই এলাকা ড্রোনের সাহায্যে বিশেষভাবে নজরদারিতে রাখবেন বন কর্মীরা।

এর আগে সুন্দরবনের আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে তৃতীয় দিনের মতো গতকাল ভোর থেকে বনবিভাগ, নৌবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা কোথাও কোনো ধরনের আগুনের ধোঁয়া দেখা যায় কি না, সেজন্য ড্রোনের মাধ্যমে অনুসন্ধান করতে থাকেন। আর এই অনুসন্ধানে কোথাও কোনো ধোঁয়া বা আগুনের অস্তিত্ব না পাওয়ায় আগুন শত ভাগ নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো: নূরুল করিম জানান, রোববার দিবাগত রাত ১টা পর্যন্ত বনবিভাগ এককভাবে আগুন নিভাতে পাম্প মেশিন দিয়ে পানি স্পে করেছে। এর ফলে এখন আর কোথাও আগুন দেখা যাচ্ছে না। যেখানে ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে, সেখানেই পানি দেয়া হচ্ছে। নিয়ন্ত্রিত আগুন পুরোপুরো নেভাতে গতকাল সকাল ৭টা থেকে বনবিভাগের সহায়তায় কাজ শুরু করেন নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। এছাড়া বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার দিয়ে পানি ছিটিয়ে আগুন নেভাতে সহায়তা করেছে। এছাড়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সুন্দরবন সংলগ্ন লোকালয়ের জন সাধারণ সুন্দরবন রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করেছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক মো: ইকবাল হোসেন ও বাগেরহাট জেলার উপ-পরিচালক মো: কামরুজ্জামান সরকার ঘটনাস্থল সরে জমিনে পরিদর্শন করে জানান, সুন্দরবনের আগুন লাগা এলাকায় বেশ কিছু সুন্দরী গাছ ও গুল্ম লতা পুড়ে গেছে। আমাদের জানা মতে, কোনো ধরনের বণ্যপ্রাণীর প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। তবে পরিবেশের কি ধরনের ক্ষতি হয়েছে, তা এই মুহূর্তে নিশ্চিত করে বলা যাবে না। এটি তদন্তসাপেক্ষ ব্যাপার। বিষয়টি গুরুত্বে সাথে দেখছি। গত শনিবার দুপুরে সুন্দরবনের আমরবুনিয়ার লতিফের ছিলা এলাকায় আকস্মিক এ আগুন লাগে। এদিকে আগুন লাগার কারণ এখনো পর্যন্ত জানাতে পারেনি বনবিভাগ। তবে তা উদ্ঘাটনে কাজ করছে বনবিভাগের গঠিত তদন্ত কমিটি।