নতুন উৎস থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য আরো তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যে আইওএম’র প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য তহবিল কমে গেছে আইওএম’র উচিত এজন্য আরো তহবিল সংগ্রহের জন্য নতুন অংশীদারদের খুঁজে বের করা।
গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মহাপরিচালক অ্যামি পোপ তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম গণভবনে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করতে আইওএমকে সহায়তা করার জন্যও বলেছেন। কারণ, সেখানে এক লাখ রোহিঙ্গজন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবা এবং কর্মসংস্থানসহ সব সুযোগ-সুবিধা সংবলিত আবাসন ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। ভাসানচরে এ পর্যন্ত ৩০ থেকে ৩৫ হাজার রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা হয়েছে। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে আইওএ’ম মহাপরিচালক প্রধানমন্ত্রীর কাছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তাদের নিরাপদ অবস্থান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ করেছে। রোহিঙ্গারা বিভিন্ন দল ও উপগোষ্ঠীতে বিভক্ত এবং তারা অভ্যন্তরীণ কোন্দলে লিপ্ত রয়েছে। রোহিঙ্গারা সংখ্যায় বেশি হওয়ায় স্থানীয় লোকজন এখন তাদের এলাকায় সংখ্যালঘু হয়ে গেছে।
অ্যামি পোপ স্বাগতিক দেশের চাহিদা অনুযায়ী তাদের দক্ষতা বাড়াতে ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর অভিবাসীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়ার ওপর জোর দেন।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার অন্য দেশের কাউকে বোঝানোর জন্য পেশা ও ভাষার ওপর যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদানকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। দক্ষ জনসংখ্যা তৈরিতে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য সরকার সারা দেশে ১১২টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করেছে।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, অভিবাসন একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। দারিদ্র্য কমলে অভিবাসনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। আওয়ামী লীগ সরকার অভিবাসীদের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে, যার মধ্যে কোনো জামানত ছাড়াই ঋণ দেওয়া রয়েছে। আয়োজক ও উৎস দেশ উভয়েরই অভিবাসীদের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে, যেহেতু তারা উভয় দেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতির জন্য কাজ করছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য অভ্যন্তরীণভাবেও মানুষ স্থানান্তরিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি এবং নদীভাঙন, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে স্থানান্তরিত হচ্ছে। সরকার কক্সবাজারের খুরুশকুলে ৪ হাজারের বেশি জলবায়ু উদ্বাস্তুকে বাড়ি দিয়েছে। বর্তমান সরকার জলবায়ু-সহিষ্ণু বাড়ি এবং বন্যাপ্রবণ এলাকার জন্য ভাসমান বাড়ি নির্মাণ করছে এবং গৃহহীনদের মধ্যে বিনামূল্যে বাড়ি দিয়েছে।
উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করার আগে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বিবেচনা করুন : ‘স্মার্ট বাংলাদেশ-২০৪১ বিনির্মাণে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কার্যক্রমের রূপরেখা’ উপস্থাপনা সংক্রান্ত পৃথক এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বলেন, উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হলে দেশের অর্থনীতি কতটা চাঙা হবে এবং স্থানীয়রা কতটা উপকৃত হবে তা বিবেচনায় নিতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।
তিনি বলেন, আমাদের প্রথমে ভাবতে হবে ফলাফল কি হবে এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে একটি প্রকল্প নেওয়ার পরে জনগণ কতটা উপকৃত হবে। আমাদের দেশের উন্নয়ন এমনভাবে করতে হবে যাতে আমাদের সক্ষমতা বাড়বে এবং অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে। রূপরেখা প্রত্যক্ষ করার পর, প্রধানমন্ত্রী প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যয় এড়াতে এবং প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অগ্রাধিকার দিতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব কেএম সাখাওয়াত মুন এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে দেশের কতটা উন্নয়ন হবে এবং মানুষ কতটা উপকৃত হবে তা আপনাদেরকে বিবেচনা করতে হবে। দ্রুত কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে বলে দেশবাসী এর সুফল পাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার একটি লক্ষ্য নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম অগ্রাধিকার ছিল জনগণের জন্য খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
