চট্টগ্রামে কালবৈশাখির তাণ্ডব

বিদ্যুৎ বিড়ন্বনায় নগরবাসী

জলাবদ্ধতার দুর্ভোগে পথচারীরা

প্রকাশ : ০৮ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  তামীম রহমান, চট্টগ্রাম

মৌসুমের প্রথম কালবৈশাখি ঝড় ও অতি ভারি বর্ষণে চট্টগ্রামবাসীর নাগরিক জীবন প্রায় বিপর্যস্ত। গত সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস। ২৪ ঘণ্টায় ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হলে সেটাকে অতি ভারি বর্ষণ বলা হয়। ওই হিসেবে অতি ভারি বর্ষণ হয়ে হয়েছে নগরে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঝড়ে নগরীর কাজীর দেউড়ি ও জাকির হোসেন রোডসহ কয়েক জায়গায় গাছ উপড়ে পড়ে। এতে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। এছাড়া এমএইএস কলেজের সামনে বিদ্যুতের ট্রান্সফরমারসহ খুঁটি উপড়ে পড়ে। এছাড়া অন্যান্য জায়গায় বৈদ্যুতিক খুঁটিতে গাছ ও ডালপালা ভেঙে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎ সরবরাহ। এছাড়া পানিতে তলিয়ে যায় রাস্তাঘাট ও অলিগলি। সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এতে দুর্ভোগে পড়েন পথচারীরা। এ সময় স্কুলফেরত সন্তানকে নিয়ে বেশি বিপাকে পড়েন অভিভাবকরা। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ৯৭ দশমিক মিলিমিটার বৃৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়। একই পরিমাণ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে আমবাগান আবহাওয়া অফিসও। সোমবার দুপুর ২টার পর থেকে ধীরে ধীরে কালো মেঘে ডেকে যায় নগরের আকাশ। আড়াইটা-তিনটার দিকে পুরো শহর রাতের মতো অন্ধকার হয়ে যায়। যানবাহন চলে হেডলাইট জ্বালিয়ে। এরপর শুরু হয় কালবৈশাখি ঝড় ও বজ্রসহ বৃষ্টিপাত। তীব্র ঝড়ো বাতাসে ভেঙে পড়ে গাছপালা। এর মধ্যে কাজীর দেউড়িতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সামনে তিনটি গাছ উপড়ে পড়ে। এ সময় এক মোটরসাইকেল চালকের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ সময় এক পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অবশ্য খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে গাছটি সরিয়ে নেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। এদিকে জাকির হোসেন সড়কে গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে পড়ায় বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। প্রায় সাত ঘণ্টা পর রাত ১০টার দিকে সড়কের একাংশের গাছ সরিয়ে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় বলে জানান স্থানীয়রা।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অশোক কুমার চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, কয়েক জায়গায় গাছ পড়েছে, বিদ্যুতের পোল ও ট্রান্সফরমার পড়েছে। এর প্রভাবে অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করতে আমরা কাজ করছি। সন্ধ্যা ৭টার দিকে ৬০ শতাংশ এবং এখন ৮০ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে। কিছু জায়গায় গাছ পড়ে থাকায় এবং অন্ধকারের জন্য কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। তবে সেটাও রাতের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে। এদিকে গত রাত সোয়া ১০টার দিকে মির্জাপুল অ্যালুমিনিয়াম গলিসহ কয়েক জায়গায় বিদ্যুৎ আসেনি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

এদিকে ভারি বর্ষনের কারণে নগরীর বেশ কিছু জায়গায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টি শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই জলযট সৃষ্টি হয় প্রবর্তক মোড়ে। প্রায় হাঁটুসমান পানি ছিল সেখানে। বিকাল সাড়ে ৪টায়ও পানি নামেনি বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। সড়ক উঁচু করায় গতবার প্রবর্তকে তেমন জলযট হয়নি। এছাড়া নগরের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু এলাকা তলিয়ে যায় পানিতে। নিচু এলাকার বাসাবাড়ি ও দোকানপাটেও পানি ঢোকে। এতে পথচারী ও ঘরমুখো মানুষ দুর্ভোগে পড়েন।

এদিকে ৩ ঘণ্টার বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন পথচারীরা। বহদ্দারহাট এলাকার বাসিন্দা নাজিম বলেন, বর্ষা মৌসুম আসার আগেই শহর ডুবে যাচ্ছে। সামনে আরো ভয়াবহ অবস্থা হবে মনে হচ্ছে। তাহলে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে কি ফায়দা হবে। এভাবে উন্নয়ন করার নামে অর্থ অপচয়ের কোনো মানে হয় না। এদিকে হাঁটুর বেশি পানি জমে যায় মোহাম্মদপুর মাজার রোডে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়ও নামেনি সেই পানি। সড়কটির পাশের বিভিন্ন দোকানেও পানি ঢোকে। স্থানীয়রা জানান, চার-পাঁচ মাস আগে সড়কটি উঁচু করা হয়। কিন্তু সড়ক-সংলগ্ন নালা পরিষ্কার না করায় সুফল আসেনি। চকবাজারের মুহাম্মদ শাহ আলী লেনের আবদুল হামিদ বলেন, বৃষ্টি হলেই পানিতে তলিয়ে যাওয়া আমাদের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামনে আরো ভারি বর্ষণ হলে নগরীর প্রায় অধিকাংশ এলাকায় পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করবে। এতে নগরবাসীর দুর্ভোগের সীমা থাকবে না। তাই নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে গৃহীত পদক্ষেপ দ্রুত বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি বিশিষ্টজনদের।