উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথম ধাপ

শান্ত পরিবেশে নিরুত্তাপ ভোট উবে গেল সহিংসতার শঙ্কা

বৃষ্টি ও ধান কাটার মৌসুম হওয়ায় ভোটের হার কম : সিইসি

প্রকাশ : ০৯ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথম ধাপের ১৩৯টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ শান্তু পরিবেশে শেষ হয়েছে। রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনে না থাকা এবং দুই এক জায়গা ছাড়া প্রায় সব উপজেলায় নিরুত্তাপ ছিল প্রথম ধাপের ভোট। অন্যদিকে ভোট সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হওয়ায় উবে গেল ভোট নিয়ে সহিংসতার আশঙ্কা।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ১৩৯ উপজেলায় প্রথম ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে যে তথ্য পেয়েছি, নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, কিছু কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছে। কিছু সংঘর্ষে কিছু আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কয়েকটি কেন্দ্রে সীমিত অনিয়ম হয়েছে। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে পদক্ষেপ নিয়েছি। দুটি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রশাসন, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথেষ্ঠ সতর্ক ছিল। তারা দায়িত্ব পালনে যথেষ্ট তৎপর ছিল। পেশাদারত্বের সঙ্গে তারা দায়িত্ব পালন করেছে। সে কারণে পরিস্থিতি যথেষ্ট ভালো ছিল। আমাদের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী ৩৪টি ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন ২৫ জন ও আটক হয়েছেন ৩৭ জন। তবে ভোটকেন্দ্রে বাইরে এসব ঘটনা ঘটেছে।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ভোট পড়ার হার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের মধ্যে হতে পারে। সকালে বৃষ্টি এবং ধান কাটার মৌসুম বিধায় ভোট পড়ার হার কম হতে পারে। ভোটাররা ধান কাটতে থাকায় ভোটকেন্দ্রে আসেনি, এটা জানতে পেরেছি। এছাড়া কিছু কিছু জায়গায় ঝড় বৃষ্টি হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ভোটার বেশি আসলে আরও বেশি ভালো হতো। কিন্তু আমরা গণনা করি কে বেশি ভোট পেয়েছেন। আমার বিষয় হচ্ছে ভোট হয়েছে কি না, ভোটাররা আসতে পেরেছেন কি না, ভোট দিতে পেরেছেন কি না, কোথাও কোনো অনিয়ম হলো কি না। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি। এর আগে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, বড় ধরনের গোলোযোগের ঘটনা ঘটেনি। দুয়েকটি জায়গায় বিচ্ছিন্ন ঘটনা যেখানে ঘটেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে, কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ির উপজেলার একটি কেন্দ্রের বাইরে গোলোযোগের কারণে কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করা হয়। এর বাইরে কোথাও ভোট বন্ধ করা হয়নি। বগুড়া জেলার একটি ভোটকেন্দ্রে অবৈধভাবে ভোট দিতে সহায়তা করায় এক প্রিসাইডিং অফিসারকে আটক করা হয়েছে।

তিনি জানান, আরো দুয়েকটি জায়গায় কেন্দ্রের বাইরে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের ইউএনও’র গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। মাদারীপুরেও কেন্দ্রের বাইরে ঝামেলা হলেও ভোট নিতে বাধা হয়নি।

ব্যালটের পাশাপাশি ইভিএমে কোনো ধরনের ত্রুটি ছাড়াই ভোট হয়েছে বলে জানান সচিব। তিনি বলেন, আমাদের কর্মীরা রাতের ২টা পর্যন্ত কাজ করেছে। ইভিএম নিয়ে কোথাও ঝামেলা হয়নি। যথাসময়ে ভোট শুরু হয়।

সূত্র জানায়, নির্বাচন চলাকালে দেশের কয়েকটি যায়গায় বিচ্ছিন্ন কিছু সংঘর্ষ হয়েছে। সকালে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী আমিরুল ইসলাম (আনারস) ও মনসুর আহমেদ খান জিন্নাহর (কাপ পিরিচ) সর্মথকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ছয় রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পুলিশ।

সুনামগঞ্জের শাল্লার চব্বিশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রের সামনে ঘোড়া ও আনারস প্রতীকের দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ১০ জন আহত হন।

এদিকে সাংবাদিক মারধরের ঘটনা ঘটেছে সিলেটের সদর উপজেলায়। সদরের ঘোপাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জাল ভোট দিতে গিয়ে এক যুবক আটক হলে তাকে ছাড়িয়ে নিতে না পেরে ছবি তুলতে যাওয়া সাংবাদিকের ওপর চড়াও হন কাপ-পিরিচ প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকরা।

ভোটে অনিয়মের অভিযোগে বগুড়ার সোনারায় উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের দুই সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এছাড়া কুসুমকলি কেন্দ্র থেকে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাসহ দুজন আটক হন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের জাল ভোট দিতে না দেওয়ায় পোলিং অফিসারকে মারধর করার অভিযোগ ওঠে। বেলা ১১টায় উপজেলার রতনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষর সংবাদ পাওয়া যায়।

জানা যায়, ভোটকে সুষ্ঠু করতে ১৩৯ উপজেলায় ৮২ হাজার ৭৩৩ জন পুলিশ মোতায়েন ছিলে। ১২ হাজার ৭৮০ জন বিজিবি সদস্য স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। রিজার্ভ ছিল ১ হাজার ৮৩০ জন। ভোটকেন্দ্র এবং মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৮৭৪ জন আনসার সদস্য মোতায়েন ছিল। ভোটের পরিবেশ শান্ত রাখতে স্বাভাবিক এলাকায় সাধারণ কেন্দ্রে ১৭ জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮ বা ১৯ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন ছিল। এছাড়া বিশেষ এলাকায় (পার্বত্য ও দুর্গম এলাকা) সাধারণ কেন্দ্রে ১৯ জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২০ বা ২১ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন ছিল।

এছাড়া উপজেলার আয়তন, ভোটার সংখ্যা ও ভোটকেন্দ্রের গুরুত্ব বিবেচনায় প্রতি উপজেলায় ২ থেকে ৪ প্লাটুন বিজিবি দায়িত্ব পালন করেছে।

প্রথম ধাপে তিনটি পদে ১৬৬৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৫৭০, ভাইস চেয়ারম্যান ৬২৫ এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৪০ জন প্রার্থী ছিলেন।

প্রথম ধাপে ১৩৯ উপজেলার মধ্যে ২২টিতে ইভিএম ও বাকিগুলোতে ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ হয়েছে। এই ধাপে মোট ১ হাজার ৬৩৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৫৭০, ভাইস চেয়ারম্যান ৬২৫ এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৪০ জন প্রার্থী রয়েছেন।

এর মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন, পাঁচ উপজেলার আটজন চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০ জন করে মোট ২৮ জন প্রার্থী। উপজেলাগুলো হলো, নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলা, মুন্সিগঞ্জ জেলার সদর উপজেলা, বাগেরহাট জেলার সদর উপজেলা, ফেনী জেলার পরশুরাম উপজেলা ও মাদারীপুর জেলার শিবচর।

এছাড়া যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান থাকায় পার্বত্য জেলা বান্দরবানে তিনটি উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত করেছে ইসি। দেশের ৪৯৫টি উপজেলার মধ্যে চার ধাপে ৪৭৬টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্য কিছু উপজেলায় মামলা জটিলতা ও বৈধ প্রার্থীর মৃত্যু ঘটনায় নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। বাকি ১৯টি উপজেলা পরিষদে নির্বাচনের সময় হয়নি, পরবর্তীতে সেসব পরিষদে ভোটগ্রহণ হবে বলে জানায় সংস্থাটি। ইসি ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী, দ্বিতীয় ধাপে ১৬০ উপজেলায় ২১ মে, তৃতীয় ধাপে ১১২ উপজেলায় ২৯ মে ও চতুর্থ ধাপে ৫৫ উপজেলায় ৫ জুন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ধাপে ২২টি, দ্বিতীয় ধাপে ২৪টি, তৃতীয় ধাপে ২১ ও চতুর্থ ধাপে দুটি উপজেলায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে।