ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন

ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে উদ্যোগ নিচ্ছে না ইসি

* দ্বিতীয় ধাপের ভোট ২১ মে * বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ২১ জন
ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে উদ্যোগ নিচ্ছে না ইসি

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথম ধাপে ভোটের হার কম থাকলেও আগামী ধাপগুলোতে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নিবে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ফলে দ্বিতীয় ধাপের ভোটে উপস্থিতি কম হবে বলে মনে করছে বিশ্লেষকরা। ইসি সূত্র জানায়, সংবিধান অনুযায়ি ভোট করবে ইসি। এতে ভোটার উপস্থিতি যেমনি হোক, সেটি নিয়ে চিন্তিত নয় সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। আর আগামী ধাপগুলোতে কোনো দল নির্বাচনে অংশ নিবে কি না, এ নিয়ে ইসির কোনো মাথাব্যথা নেই। সংবিধান অনুযায়ী ভোট আয়োজন করা ইসির দায়িত্ব। উপজেলা ভোটে একজন ভোটার ভোট দিলেও ইসির কাছে সে ভোট বৈধ হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় সংসদ বা স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার নির্বাচন সব ধরনের ভোটেই মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। এর প্রতিফলন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর উপজেলায়ও দেখা যাচ্ছে।

নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ভোটের হার কম হওয়ার পেছনে অন্তত পাঁচটি কারণ দেখেন তিনি। তিনি বলেন, বৈরী আবহাওয়া, একটি বড় দলের ভোটে না আসা, প্রার্থীর জনপ্রিয়তা, শহর এলাকায় শ্রমিকদের অনুপস্থিতি এবং হাওরে ধানকাটার ব্যস্ততার কারণে ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছে। স্থানীয় নির্বাচনে ক্রমান্বয়ে ভোটের হার কমে যাওয়ার বিষয়ে গবেষকরাই ভালো বলতে পারবেন বলে মন্তব্য করেন মো. আলমগীর।

বিএনপি নিয়ে মো. আলমগীর বলেন, প্রধান দুটি দলের একটি (বিএনপি) নির্বাচনে আসেনি। তাদের সমর্থকরা অংশগ্রহণ করেছে। রাজনৈতিকভাবে সমর্থন না পাওয়ায় তাদের লোকজন ভোট দিতে আসেনি। শহর এলাকায় ছুটি থাকলে শ্রমিকরা বাড়ি চলে যায়। গাজীপুরে ভোট কম পড়েছে। শুধু ধান কাটা বা বৃষ্টি- এ দুই কারণে নয়, নানা কারণে ভোটের হার কম পড়েছে। এর বাইরে কোনো কারণ থাকলে তা গবেষকরা বলতে পারেন, কেন ভোট কমছে।

তিনি বলেন, ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশ। বাংলাদেশে আমরা নির্বাচনগুলোয় দেখেছি ভোটের হার এমনই থাকে। কোনো কোনো এলাকায় বিশেষ করে স্থানীয় সরকারের পৌর, ইউপি নির্বাচনে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত হয়। দেখা যায়, প্রার্থীর জনপ্রিয়তা, নানা কারণে ৭০-৭৫ শতাংশ পর্যন্ত ভোট পড়েছে, আবার ১৭ শতাংশ ভোটও পড়েছে।

আগামীতে আরো তিন ধাপে ভোট রয়েছে। আগামীতে ভোটের হার বাড়বে কি না, সেটা তখনকার আবহাওয়া পরিস্থিতি, প্রার্থীদের ভূমিকা, নির্বাচনি পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে বলে মনে করেন এই নির্বাচন কমিশনার।

রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিয়ে তিনি বলেন, কোনো দল ভোটে আসছে বা আসছে না, সেটি রাজনৈতিক বিষয়। দেশের অনেক দল রয়েছে, সবার সক্ষমতা এক রকমও না। রাজনৈতিক দল যদি মনে করে ভোটে এলে জিততে পারবে না, সক্ষমতা তৈরি হয়নি; সেটা তাদের বিষয়। নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে আসা, ভোটের পরিবেশ ভালো রাখাটাই ইসির মূল কাজ। সংশ্লিষ্ঠরা জানান, সবশেষ গত তিনটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটের যে হার ছিল, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে এসে দেখা গেল, এটিই সবচেয়ে কম ভোটের হার।

২০১৯ সালের পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে গড়ে ৪১ শতাংশের বেশি ভোট পড়ে। ২০১৪ সালের চতুর্থ উপজেলা নির্বাচনে ৬১ শতাংশ এবং ২০০৯ সালের তৃতীয় উপজেলা নির্বাচনে ৬৭.৬৯ শতাংশ ভোট পড়ে। অর্থাৎ ভোট পড়ার হার ক্রমান্বয়ে কমেছে।

সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এ কমিশন আগের দুই কমিশনের (কাজী রকিব কমিশন ও নূরুল হুদা কমিশন) ধারাবাহিকতা রক্ষা করছে। যদিও বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর জনগণের আস্থা অর্জনের চেষ্টা চালাবে বলে ওয়াদা করেছিল। তিনি বলেন, ‘নিয়ন্ত্রিত’ পরিবেশে প্রভাবশালীর ‘পূর্বনির্ধারিত’ প্রার্থীকে ভোট দিতে মানুষের কেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ না থাকাটাই স্বাভাবিক।

এদিকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ২১ জন একক প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন; যাদের ৭ জন করে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান। দ্বিতীয় ধাপে ১৬০ উপজেলায় ২১ মে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা প্রতীক পেয়ে এরইমধ্যে প্রচারে রয়েছেন। এ ধাপে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ছিল ৩০ এপ্রিল। ২ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত প্রচারণা করতে পারবেন তারা।

ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার কর্মকর্তারা জানান, দ্বিতীয় ধাপে চেয়ারম্যান পদে ৭ জন, সাধারণ ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

জয়ী চেয়ারম্যানরা হলেন- কুমিল্লা আদর্শ সদরে মো. আমিনুল ইসলাম, জামালপুরের ইসলামপুরে মো. আ. ছালাম, ফরিদপুরের নাগরকান্দায় মো. ওয়াহিদুজ্জামান, চট্টগ্রামের রাউজানে একেএম এহছানুল হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় আবুল কাশেম চিশতী, সাভারে মঞ্জুরুল আলম রাজীব ও মৌলভীবাজার সদরে মো. কামাল হোসেন।

ভাইস চেয়ারম্যান পদে রাজশাহীর বাগমারায় মো. শহীদুল ইসলাম, রাঙামাটির রাজস্থালীর শ্রী হারাধন কর্মকার, কুমিল্লা আদর্শ সদরে আহাম্মেদ নিয়াজ, চট্টগ্রামের রাউজানে নুর মোহাম্মদ, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে মো. রফিকুল ইসলাম, রূপগঞ্জে মো. মিজানুর রহমান ও চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে সুমন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

এছাড়া মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে রাঙ্গামাটির রাজস্থালীর গৌতমী খিয়াং, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় সাঈদা সুলতানা, কুমিল্লা আদর্শ সদরে হোসনে আরা বেগম, চট্টগ্রামের রাউজানে রুবিনা ইয়াছমিন রুজি, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় হোসনে আরা বেগম, নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজারে শাহিদা মোশারফ ও রূপগঞ্জের ফেরদৌসী আক্তার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

এ ধাপে ১৬০ উপজেলা ভোটে মনোনয়নপত্র দাখিল, বাছাই, আপিল শেষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন এক হাজার ৮২৮ জন। এদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৬০৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬৯৪ জন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫২৯ জন প্রার্থী রয়েছেন।

এবার চার ধাপে উপজেলা ভোট হচ্ছে। প্রথম ধাপে ভোট হয়ে গেছে গত ৮ মে। দ্বিতীয় ধাপে ১৬০ উপজেলায় ভোট হবে ২১ মে। এরপর তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের ভোট হবে যথাক্রমে আগামী ২৯ মে ও ৫ জুন। সবশেষ ২০১৯ সালে চার ধাপের উপজেলা ভোটে প্রায় ৫০০ উপজেলার মধ্যে ৪৬৫টিতে ভোট হয়। সেসময় তিনটি পদে সব মিলিয়ে ২২৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তাদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ১১২ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫২ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫৯ জন নির্বাচিত হন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত