ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

টুঙ্গিপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী

শুধু বর্তমান নয়, আগামীর জন্যও কাজ করছি

পহেলা আষাঢ় প্রত্যেকের গাছ লাগানো উচিত
শুধু বর্তমান নয়, আগামীর জন্যও কাজ করছি

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা শুধু বর্তমানের জন্য নয়, ভবিষ্যতের জন্যও কাজ করছি। প্রতিটি মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল করতে সরকার কাজ করছে। আমরা বহুমাত্রিক কর্মসূচি হাতে নিয়ে প্রত্যেক মানুষকে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।

গতকাল দুপুরে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দাড়িয়ারকুল একটি বাড়ি, একটি খামার প্রকল্পের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে অনেক উদ্যোগ নিয়েছি। সরকারের নেওয়া কর্মসূচিগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে দেশে কেউ গরিব থাকবে না। এ সময় তিনি আমার বাড়ি, আমার খামার, জনগণকে আর্থিক অনুদান প্রদান, সর্বজনীন পেনশন প্রকল্প এবং গ্যারান্টি ছাড়া ঋণ প্রদান, সমাজ থেকে দারিদ্র্য বিমোচন করার জন্য যুবকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদান ইত্যাদি বহুমাত্রিক কর্মসূচির বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, আমরা সবার জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কীম চালু করেছি। সর্বজনীন পেনশন স্কীমের সুবিধাভোগীদের ভবিষ্যৎ জীবন সুরক্ষিত করবে। এতে কেউ যদি ৫০০ টাকা জমা দেয় তাহলে তাকে সরকারের পক্ষ থেকে আরো ৫০০ টাকা দেওয়া হবে। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা চালু করেছি। এ সময় সারা দেশে সমবায় ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষুদ্র সঞ্চয় নিশ্চিত করতে হবে এবং এইভাবে দেশের উন্নয়নে সহায়তা করার জন্য সমগ্র বাংলাদেশে সমবায় সমিতি গঠনের করতে হবে। প্রতিটি এলাকায় সমবায় সমিতি গঠন করে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণে আওয়ামী লীগ নেতাদের আন্তরিক হতে হবে। মানুষকে নিয়ে যৌথভাবে খাদ্য নিশ্চয়তা, আর্থ সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। সমবায় ব্যবস্থায় জমির মালিকানা পরিবর্তন হবে না এবং ফসলকে তিন ভাগে ভাগ করা হবে। প্রতিটি ফসলের একটি অংশ মালিক, কৃষকরা একটি অংশ এবং সমবায়ের কাছে একটি অংশ যায়। পরিবারগুলো ভাগ হয়ে গেলে, জমিতে আইল পড়ে। সমবায়ের মাধ্যমে যা উৎপাদন হবে, সেখান থেকে কেউ সঞ্চয় করতে চাইলেও পারবেন। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক এক্ষেত্রে সহায়তা করবে। বিনা জামানতেও ঋণ দেয়া হচ্ছে। আমরা কর্মসংস্থান ব্যাংক খুলেছি, যাতে যুবকরা বিনা জামানতে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হতে পারে। চাকরির পেছনে না ছুটে, নিজেরা উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে পারে। সবাই যাতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, সে জন্য আমরা কাজ করছি।

তিনি বলেন, পরিবেশ রক্ষায় শুধু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী নয়, দেশের প্রত্যেক মানুষের পহেলা আষাঢ়ে একটি করে গাছ লাগানো উচিত। আজকের শিশু-কিশোর যুবক তারাই হবে স্মার্ট বাংলাদেশের সৈনিক। জলবায়ু পরিবর্তন থেকে দেশকে বাঁচাতে প্রত্যেকে যেন দুই-তিনটা করে গাছ লাগায়। দেশে দ্বিতীয় স্যাটেলাইট নির্মাণের কাজ চলছে, এটি চালু হলে আমরা আবহাওয়া থেকে শুরু করে সব প্রয়োজনীয় তথ্য পাব।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতির পিতার কনিষ্ঠ কন্যা ও প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম। সুবিধাভোগীরা তাদের সরঞ্জাম এবং আর্থিক অনুদান পাওয়ার নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করেন। দরিয়াকুল গ্রাম উন্নয়ন সমিতির উপদেষ্টা শেখ হাসিনা সমবায় পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগের প্রশংসা করেন। শেখ হাসিনার দেওয়া ৯ দশমিক ০৫ একর জমিতে গড়ে উঠেছে দরিয়াকুল সমবায় সমিতি।

এদিকে আমাদের গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছার পরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার বোন শেখ রেহানা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শহীদ তার পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের জন্যও দোয়া করেন। এরপর তিনি সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। পরে দোয়া মোনাজাতে অংশ নেন।

এসময় বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দিন জুয়েলসহ পরিবারে সদস্যরা এবং গোপালগঞ্জে জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম, পুলিশ সুপার আল-বেলি আফিফা উপস্থিত ছিলেন। এরআগে একদিনের সফরে সকাল ৭টার পর গণভবন থেকে সড়কপথে রওনা হয়ে সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটে টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছান শেখ হাসিনা। সফরে প্রধানমন্ত্রী তার নির্বাচনী এলাকায় দড়িয়াকুল গ্রাম উন্নয়ন সমিতির উপদেষ্টা সদস্য হিসাবে সমিতির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সেখানে সুবিধাবঞ্চিত কৃষকদের মাঝে কৃষি উপকরণ ও শিক্ষা উপকরণ এবং দুঃস্থ নারীদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ করেন। টুঙ্গিপাড়া উপজেলা মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এছাড়া আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলীয় কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। বিকেলে সড়ক পথে ঢাকায় পৌঁছান। প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে টুঙ্গিপাড়াসহ জেলাজুড়ে নেয়া হয়েছে ব্যপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সড়কে সড়কে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে তোরণ নির্মাণ করা হয়, টাঙ্গানো হয় ব্যানার ও ফেস্টুন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত