ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আইইবি’র ৬১তম কনভেনশনে প্রধানমন্ত্রী

উন্নয়ন হতে হবে গণমুখী পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী

* খেটে খাওয়া মানুষরাও ফ্ল্যাটে থাকবে * বিদ্যুৎ উৎপাদনকে বহুমুখী করেছি * দেশে ‘কিছু ভালো লাগে না’ একটা গোষ্ঠী রয়েছে
উন্নয়ন হতে হবে গণমুখী পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, উন্নয়ন হতে হবে গণমূখী, পরিবেশবান্ধব, ব্যয় সাশ্রয়ী, উপযুক্ত ও টেকসই। আর আওয়ামী লীগ সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, তৃণমূল থেকেই উন্নয়নটা করা। তৃণমূল থেকে মানুষের মাথাপিছু আয়টা বৃদ্ধি এবং তৃণমূল থেকে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। গতকাল সকালে ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের (আইইবি) ৬১তম কনভেনশনে তিনি এসব কথা বলেন। আইইবি ঢাকা সেন্টার রাজধানীতে আইইবি সদর দপ্তর প্রাঙ্গণে ‘প্রকৌশল ও প্রযুক্তির জন্য স্মার্ট বাংলাদেশ’ মূল প্রতিপাদ্য নিয়ে অনুষ্ঠানটির আয়োজন কর হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব এখন একটি গ্লোবাল ভিলেজ। কাজেই বিশ্বের সাথে আমাদের তাল মিলিয়ে চলতে হবে। বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলতে হবে। সেইভাবে আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। সেইভাবেই আমি পরিকল্পনা করছি। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি এবং ২০২৬ সাল থেকে তা বাস্তবায়ন শুরু হবে। কাজেই এখন থেকেই এর জন্য যথাযথ পরিকল্পনা আমরা নিচ্ছি। কিন্তু, এখান থেকে যে সুযোগগুলো আমরা পাব, সেগুলো যথাযথভাবে আমাদের কাজে লাগাতে হবে। আর যে চ্যালেঞ্জগুলো আসবে সেগুলো আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। কাজেই এখন থেকেই আমাদের সে প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সবসময়ই চায় কীভাবে দেশের মানুষ ভালো থাকবে এবং তাদের জীবন-মান উন্নত হবে। আমি অবাক হয়ে যাই আমাদের দেশের কিছু কিছু মানুষ আছেন আপনি যা-ই করেন, কিছুই তাদের ভালো লাগে না। ‘কিছু ভালো লাগে না’ একটা গোষ্ঠীই রয়েছে। যেমন- কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন পদ্মা সেতুতে রেল যোগাযোগের কী দরকার ছিল বা স্যাটেলাইট-২ এরই বা প্রয়োজন কি আছে? পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র কেন করা হলো? শুধু শুধু টাকা নষ্ট। মেট্রো রেলের তো প্রয়োজনই ছিল না। ৩০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে মেট্রোরেল না করে ৩ হাজার কোটি টাকা খরচ করলেই তো যানজট দূর হয়ে যেত। এই যে কিছু ভালো লাগে না গোষ্ঠীর এগুলো সফলভাবে নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ায় পরে মানুষের জীবনযাত্রা আরো সহজ হয়ে যাওয়ায় তাদের কী অসুবিধা হচ্ছে, তারা কী এর সুবিধা ভোগ করছেন না? সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।

পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের ভুয়া দুর্নীতির অভিযোগকে মিথ্যা প্রমাণ করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। অনেকেই বলেছিলেন বিশ্ব ব্যাংক ছাড়া হবে না। কিন্তু আমরা নিজের অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছি যে, আমরাও পারি। জাতির পিতা ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন ‘বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না’ আমাদের কেউ দাবিয়ে রাখতে পারেনি।

দেশের উন্নয়নে প্রকৌশলীদের গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করে সরকারপ্রধান বলেন, দেশে এখন ২৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে; যা আমরা ২০৪১ সাল নাগাদ ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করতে চাই। সেক্ষেত্রে আমি বলব, আমাদের প্রকৌশলীদেরও গবেষণা দরকার। আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদনকে বহুমুখি করেছি। আগামীতে আরেকটি দিক আসছে হাইড্রোজেন। হাইড্রোজেন বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রেও আমাদের গবেষণা দরকার। একই সঙ্গে স্বল্প খরচে টেকসই যন্ত্রপাতি নির্মাণ, স্থাপনা নির্মাণ ও মেরামতেও গবেষণা প্রয়োজন। প্রকৌশল ক্ষেত্রে আরো বেশি গবেষণা করে- আপনাদের যে উদ্ভাবনী শক্তি ও মেধা রয়েছে সেটাকে কীভাবে আমরা দেশের কাজে লাগাতে পারি সে দিকে আপনারা বিশেষ দৃষ্টি দেবেন। কারণ, আমাদের সবকিছুই নির্মাণের দায়িত্ব পড়ে প্রকৌশলীদের ওপর।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অতি দরিদ্রদের জন্য ঘরবাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ায় আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার জন্য প্রকৌশলীদের ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এখানে প্রশাসন থেকে প্রকৌশলী এমনকী সংশ্লিষ্ট সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন। যার জন্য আজ ২১টি জেলা এবং ৩৩৪টি উপজেলাকে ভূমিহীন-গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা দিতে পেরেছি। ইনশাআল্লাহ এই বাংলাদেশে একটি পরিবারও ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না।

আরো অল্প খরচে এই সাধারণ মানুষগুলোর জন্য একটি স্বাস্থ্যকর ও সুন্দরভাবে বসবাস উপযোগী আবাসস্থল নির্মাণে কারো যদি কোনো পরামর্শ বা পরিকল্পনা থাকে তা দেওয়ার জন্যও তিনি প্রকৌশলীদের প্রতি আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, বিত্তশালীরা কেবল নয়, আমি চাই আমার রিকশাওয়ালা, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষসহ দিন মজুররাও ফ্ল্যাটে থাকবে। আমার প্রত্যেকটি কাজ হচ্ছে এই তৃণমূল মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। আমরা প্রত্যেকটা পদক্ষেপ নিচ্ছি বাংলাদেশকে আর্থ-সামাজিক উন্নতি করে উন্নত-সমৃদ্ধ ‘স্মার্ট সোনার বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে। সেখানে মূল চালিকা শক্তি হবে আমাদের প্রকৌশলীরা।

ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের (আইইবি) নেতাদের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আপনাদের এই কনভেনশন যখন হয়; তখন অতীতে বিভিন্ন সময়ে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত তাদের যে কর্মকাণ্ড তার সাফল্য ব্যর্থতা সম্পর্কে পর্যালোচনা করবেন, বিশ্লেষণ করবেন। পাশাপাশি আমরা ভবিষ্যতে কীভাবে এগিয়ে যাব, আরও দ্রুত উন্নতি করতে পারব সেই কৌশল কী হবে? সেই বিষয়গুলোও আপনারা আলোচনা করবেন এবং সেই কৌশল নির্ধারণ করবেন। অন্তত আমরা যখন সরকারে আছি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবার ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারব। সেটাই আমি আপনাদের কাছ থেকে আশাকরি। তিনি বলেন, আমার একটা অনুরোধ থাকবে যে পরিকল্পনা হোক সেই পরিকল্পনা যেন প্রথমত পরিবেশবান্ধব হতে হবে। কারণ, জলবায়ুর অভিঘাত থেকে আমাদের দেশকে রক্ষা করা আমাদের লক্ষ্য এবং এটা আমাদের করতেই হবে। আমাদের খরা, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস প্রতিনিয়ত মোকাবিলা করতে হয়। কাজেই সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। জলাধারগুলোকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। প্রয়োজনে জলাধার সংরক্ষিত রেখে এবং নদী-নালা, খাল-বিল, হাওড় এলাকায় পানির প্রবাহ ধরে রেখে স্থাপনা নির্মাণ করতে হবে। বৃষ্টির পানি ধরে রেখে তা কাজে লাগানোর প্রচেষ্টা নিতে হবে। পাশাপাশি পরিকল্পনাগুলো যেন টেকসই হয় এবং খরচের দিকটাও বিবেচনায় নিতে হবে। অহেতুক কোনো পরিকল্পনা যেন আমরা গ্রহণ না করি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা একনেক বৈঠকেও তিনি নির্দেশ দিয়েছেন যে, কোন পরিকল্পনা গ্রহণ করলে এর থেকে জনগণ কতটুকু লাভবান হবে বা এর রিটার্ন কী আসবে বা যেটা আমাদের জন্য উপযোগী সেই পরিকল্পনা নিতে হবে। শুধুমাত্র একটা নির্মাণ কাজের জন্য যেন নির্মাণ করা না হয়, এটা আমার অনুরোধ। একটা কনস্ট্রাকশন হলে কিছু লোক কাজ পাবেন কিছু কমিশন বা কিছু লোক নানা সুবিধা পাবেন সেটা যেন না হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত প্রকৌশলীদের যৌক্তিক দাবিগুলো দেশের উন্নয়নে তাদের অবদানের কথা মাথায় রেখেই তিনি যাচাই-বাছাই পূর্বক পূরণের ব্যবস্থা নেবেন বলেও আশ্বাস দেন। প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন স্তরের প্রকৌশলী, কেন্দ্র, উপকেন্দ্র, প্রকৌশল বিভাগ এবং এএমআইই পরীক্ষার স্নাতকদের হাতে স্বর্ণপদক ও সনদসহ পুরস্কার তুলে দেন। আইইবি সভাপতি প্রকৌশলী মো. আব্দুস সবুর এমপি, আইইবি সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী এসএম মঞ্জুরুল হক মঞ্জু, আইইবি ঢাকা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হোসেইন ও আইইবি ঢাকা কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। আইইবি’র ৬১তম কনভেনশনের থিম সংয়ের পাশাপাশি একটি অডিও-ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনা অনুষ্ঠানে প্রদর্শন করা হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত