এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ

এবারও এগিয়ে মেয়েরা

* ছেলেদের সংখ্যা কম দেখে উদ্বেগ প্রকাশ প্রধানমন্ত্রীর * পাসের হারে এগিয়ে যশোর, পিছিয়ে সিলেট * ৫১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থীই এবার পাস করেনি

প্রকাশ : ১৩ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

চলতি বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এবার গড় পাসের হার ৮৩ দশমিক ০৪ শতাংশ। গতবারের তুলনায় এবার বেড়েছে পাসের হার। গতবার পাসের হার ছিল ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ৯টি সাধারণ, মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ডে গড় পাসের হার ৮৩.০৪ শতাংশ।

গতকাল সকাল ১০টার দিকে গণভবনে ফলাফলের সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফল প্রকাশ কার্যক্রমের উদ্বোধন করলে বেলা সাড়ে ১১টার পর নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং অনলাইনে একযোগে ফল প্রকাশিত হয়। শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট ও মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে ফলাফল জেনেছে।

শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, যশোর বোর্ডে পাসের হার সবচেয়ে বেশি ৯২.৩২ শতাংশ। এছাড়া ঢাকায় ৮৯.৩২, রাজশাহীতে ৮৯.২৫, বরিশালে ৮৯.১৩, ময়মনসিংহে ৮৪.৯৭, চট্টগ্রামে ৮২.৮০, কুমিল্লায় ৭৯.২৩, দিনাজপুরে ৭৮.৪০ এবং সিলেটে ৭৩.৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। ২০২৪ সালের এসএসসি, দাখিল, এসএসসি (ভোকেশনাল) ও দাখিল (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন। কারিগরি (ভোকেশনাল) শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৮১.৩৮ শতাংশ আর মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭৯.৬৬ শতাংশ। গতবারের চেয়ে এবার পরীক্ষার্থী কমেছে প্রায় ৪৮ হাজার। এবার ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসির তত্ত্বীয় পরীক্ষা ১৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ১২ মার্চ শেষ হয়। ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষ হয় ২০ মার্চ। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন দাখিলের তত্ত্বীয় পরীক্ষা ১৪ মার্চ এবং ব্যবহারিক পরীক্ষা ২১ মার্চ শেষ হয়। আর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি ও ভোকেশনালের তত্ত্বীয় পরীক্ষা ১২ এবং ব্যবহারিক পরীক্ষা ২১ মার্চ শেষ হয়। সারা দেশে ২৯ হাজার ৭৩৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ৩ হাজার ৭০০টি কেন্দ্রে পরীক্ষা দেয়। আর বিদেশের আট কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বিদেশের কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ৮৫.৮৮ শতাংশ। বিদেশের কেন্দ্রে ৩৪৭ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে পাস করেছে ২৯৮ জন। কোভিডের পর এবারই প্রথম পূর্ণাঙ্গ সিলেবাস, পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। নিয়মানুযায়ী, এবারো পরীক্ষা শেষ হওযার ৬০ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশিত হয়। সারা দেশে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন শিক্ষার্থী।

এ বছরও পাসের হার ও জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যার দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছে মেয়েরা। পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের সংখ্যা বেশি ছিল। পরীক্ষায় অংশ নেয় ৯ লাখ ৮৮ হাজার ৭৯৪ জন ছেলে এবং ১০ লাখ ২৪ হাজার ৮০৩ জন মেয়ে। ফলাফলে দেখা যায়, মোট উত্তীর্ণ ছাত্রের চেয়ে ৫৯ হাজার ৪৭ জন বেশি ছাত্রী পাস করেছে। ছাত্রদের চেয়ে ১৫ হাজার ৪২৩ জন ছাত্রী বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছে। এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছেলেদের সংখ্যা কম দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেন ছেলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে তা জানতে শিক্ষা বোর্ড প্রধানদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপের সময়ও এই বিষয়ে তথ্য জানার চেষ্টা করতে বলেছেন। শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যার যার বোর্ডে আপনারা খবর নেন, কী কারণে ছেলেরা পিছিয়ে। ইদানীং কিশোর গ্যাং দেখছি। এগুলো তো আমরা দেখতে চাই না। সেখান থেকে তাদের বিরত করা, একটা সুষ্ঠু পরিবেশে নিয়ে আসা আমাদের দায়িত্ব। আমরা বিবিএসকেও বলব দেখতে। যারা পাস করেছে, তাদের আন্তরিক অভিনন্দন। এ জন্য বাবা-মা-অভিভাবক ও শিক্ষকদেরও অভিনন্দন জানাই। যারা কৃতকার্য হতে পারেনি, আমি বলব, তাতে মন খারাপ করার কিছু নেই। আবার চেষ্টা করলে হয়তো ভালো করতে পারবে।

এদিকে ৫১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থীই এবার পাস করেনি। শতভাগ ফেল করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়ে গতকাল শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, এবার পরীক্ষায় অংশ নেওয়া মোট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৯ হাজার ৮৬১টি। এর মধ্যে শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দুই হাজার ৯৬৮টি। ৫১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থীই পাস করেনি। শতভাগ ফেল করা এমপিওভুক্ত স্কুল একীভূত হতে পারে পাসের স্কুলের সঙ্গে। ফল প্রকাশের পর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উচ্ছ্বসিত হয়ে আনন্দ প্রকাশ করেছে পাস করা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। সন্তান ভালো ফলাফল করায় অনেক অভিভাবককে দেখা গেছে আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের মিষ্টিমুখ করাতে। অনেকে আবার সামাজিক মাধ্যমে সন্তানের জন্য দোয়াও চেয়েছেন।