ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঢাকায় ডোনাল্ড লু

ফুরফুরে সরকার-চুপসে বিএনপি

ফুরফুরে সরকার-চুপসে বিএনপি

দুই দিনের সফরে গতকাল ফের ঢাকায় এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ পরিচিত তিনি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গত বছর জুলাই মাসে এ দেশে এসেছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের জ্যেষ্ঠ এ কর্মকর্তা। বাংলাদেশের রাজনীতি, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ইস্যুতে বরাবরই সোচ্চার ছিল যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। ভোটের আগে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টি আকর্ষণে নানা তৎপরতা চালায় বিএনপি। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকাণ্ডে বেশ উজ্জীবিত ছিল দলটি। বিএনপি নেতারাও ইউরোপ-আমেরিকার ঢাকার দূতাবাসগুলোতে প্রায়ই আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করতেন।

বাংলাদেশের ভোট নিয়ে সবর ছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং ডোনাল্ড লু। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তিন দলকে নিয়ে সংলাপে বসতে ক্ষমতাসীনদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন তিনি। তবে তার এ আহ্বানে সাড়া দেয়নি আওয়ামী লীগ সরকার।

বিএনপির বর্জনের মধ্যে অনুষ্ঠিত জানুয়ারির নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নও তুলেছিল ওয়াশিংটন। তবে ভোটের কয়েক সপ্তাহ পর টানা চতুর্থবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে ওয়াশিংটনের সমর্থন থাকবে। পাশাপাশি মুক্ত ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় ঢাকাকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চার মাস পর বাংলাদেশ সফরে এলেন ডোনাল্ড লু। তার সফর ঘিরে বিবাদে জড়িয়েছেন দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা। পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে সরগরম রেখেছে রাজনৈতিক অঙ্গন। ভোটের আগে বিদেশিদের দিকে মুখিয়ে থাকলেও এখন অনেকটা চুপসে গেছে বিএনপি। এবার ডোনাল্ড লুর সফর নিয়ে তেমন কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছে না দলটি। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের জ্যেষ্ঠ এ কর্মকর্তার সফর নিয়ে বিএনপির নেতারা নানা রকম বক্তব্য দিচ্ছেন। ডোনাল্ড লুর সফর প্রসঙ্গে বেশি কথা বলতে চান না দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গণঅধিকার পরিষদের একাংশের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ মন্তব্য করেন। ‘ডোনাল্ড লুর সফর নিয়ে বিএনপি উৎসাহী নয়’ বলে দাবি করেছেন দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জাতীয় সংসদের সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক অবস্থান কর্মসূচিতে থেকে তিনি এ দাবি করেন। জয়নুল আবেদিন ফারুক বলেন, ডোনাল্ড লুকে নিয়ে এত উৎসাহিত আমরা নই, লুকে নিয়ে উৎসাহিত আওয়ামী লীগ। লু কী বার্তা নিয়ে এসেছেন, সেটা আপনারা (আওয়ামী লীগ) জানেন, আমাদের জানার কথা নয়।

এদিকে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু নিজ দেশের এজেন্ডা বাস্তবায়নে আলোচনা করতে এসেছেন। ডোনাল্ড লু বাংলাদেশে আসলেও, তাদের ভিসা নীতিসহ কোনো ইস্যুকেই আমরা কেয়ার করি না। তিনি কোনো মন্ত্রীও নন, তাকে নিয়ে এত মাতামাতি কেন? তাকে আমরা নিমন্ত্রণ করে আনছি না, তারা তাদের বিভিন্ন প্রয়োজনে এদেশে আসেন। সম্পর্ক থাকলে আসতে হয়। তবে ডোনাল্ড লুর এ সফরে ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে সরকার। ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশের অবস্থান বিবেচনায় সরকারের সাথে সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র। সফরকালে ডোনাল্ড লু ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করবেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশের নতুন সরকারের কাছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গী তুলে ধরবেন তিনি। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন, শ্রম অধিকার, বাণিজ্য ও বিনিয়োগসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবেন।

এদিকে গতকাল বিকালেই ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের গুলশানের বাসায় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক সেরেছেন ডোনাল্ড লু। বৈঠকে গণমাধ্যমকর্মী, মানবাধিকার কর্মী, শ্রমিক নেতা ও জলবায়ু কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের সমসাময়িক অবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া এদিন রাতে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বাসায় নৈশভোজে অংশ নেন তিনি। আজ সকালে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন ডোনাল্ড লু। এরপরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে তার সৌজন্য সাক্ষাতের কথা রয়েছে।

উল্লেখ্য, চীনা বংশোদ্ভূত আমেরিকান ডোনাল্ড লু ২০২১ সাল থেকে পররাষ্ট্র দপ্তরে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। তার আগে তিনি কিরগিজস্তানে ও আলবেনিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফরেইন সার্ভিসে যোগ দেওয়ার পর লু পাকিস্তানে এবং ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের মিশনেও কাজ করেছিলেন। পাকিস্তানে দুই বছর আগে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে উৎখাতের ক্ষেত্রে লু’র বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল। গত বছর ঢাকা সফর করেছিলেন ডোনাল্ড লু। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তার ওই সফর নিয়ে ঢাকায় ব্যাপক আলোচনা ছিল। দিন যতই আগাচ্ছে, ততই পশ্চিমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে বাংলাদেশ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত