ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বীরোচিত সংবর্ধনা

প্রিয়জনের সান্নিধ্য পেলেন ‘আবদুল্লাহ’র ২৩ নাবিক

প্রিয়জনের সান্নিধ্য পেলেন ‘আবদুল্লাহ’র ২৩ নাবিক

বহু প্রতীক্ষা ও জল্পনা কল্পনা শেষে অবশেষে আপন ঠিকানায় ফিরলেন সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়া ২৩ নাবিক। ২৩ নাবিক সুস্থভাবেই তাদের পরিবারে ফিরে গেছেন। জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ ও ২৩ নাবিকের সর্বশেষ খবরই যেন ছিল টক অব দ্য কান্ট্রি। অবশেষে সে আশঙ্কার অবসান হয়েছে। গতকাল বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে তাদের বহন করা লাইটার জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল-১ (এনসিটি) নম্বর জেটিতে ভিড়ে। এরপর একে একে নাবিকরা জাহাজ থেকে নেমে আসেন। এনসিটি জেটিতে আগে থেকে অপেক্ষায় ছিলেন নাবিকদের অনেক স্বজন, জাহাজের মালিক পক্ষসহ বন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা। জেটিতে নাবিকরা নামার পর স্বজনরা তাদের জড়িয়ে ধরেন। এ সময় কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েন। বন্দরের এনসিটি এলাকায় আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। মুহূর্তে যেন নিস্তব্ধতা নেমে আসে কর্মচঞ্চল জেটিতে। এর আগে, কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় এসে ২৩ নাবিক এমভি আবদুল্লাহ ত্যাগ করেন। এ সময় তারা ছিলেন হাসিখুশি, উৎফুল্ল। হাত নেড়ে তারা দুঃসহ স্মৃতিবিজড়িত জাহাজটির নতুন দায়িত্ব নেওয়া টিমকে বিদায় জানান। সূত্র জানায়, গতকাল দুপুর পৌনে ১২টার দিকে তারা কুতুবদিয়া বহির্নোঙরে অবস্থানরত এমভি আবদুল্লাহ থেকে ‘এমভি জাহান মনি ৩’ নামের লাইটার জাহাজে উঠে পড়েন। তাদের পরবর্তী গন্তব্য নির্ধারণ হয় চট্টগ্রাম বন্দরের ‘এনসিটি ১’ জেটি। সেখানে বিকাল ৪টায় বীরোচিত সংবর্ধনা দেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এরা হচ্ছেন জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার মো. আতিক উল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট মো. সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এএসএম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ, এবি পদের মোহাম্মদ আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসাইন, জয় মাহমুদ, ওএস পদের মো. নাজমুল হক, অয়েলার পদের আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, ফায়ারম্যান মোশাররফ হোসেন শাকিল, চিফ কুক মো. শফিকুল ইসলাম, জিএস পদের মোহাম্মদ নুর উদ্দিন ও ফিটার মোহাম্মদ সালেহ আহমদ।

সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে কেএসআরএমএর গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত বলেন, জিম্মিদশা থেকে মুক্ত নাবিকরা এখন আরো সাহসী। কারণ, তারা ভয়কে জয় করে দেশে ফিরেছে। তাদের আরো অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়েছে। বাঙালি সাহসী বীরের জাতি। আজকে আমাদের আনন্দের দিন। তিনি আরো বলেন, নিরাপদ সমুদ্রযাত্রা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক শিপিং সংস্থাগুলো কাজ করছে। আশাকরি সফলতা আসবে। তিনি বলেন, এর আগে ২০১০ সালেও জাহান মনি নামের আমাদের আরো একটি জাহাজ জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল। সেখান থেকে তারা প্রায় ১০০ দিন পর মুক্তি পায়। সে পুরোনো অভিজ্ঞতা থেকে আমরা এগিয়ে গেছি। আজকের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। আজ সবার মুখে হাসি। চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানোর পর নাবিকদের বরণ করে নেন স্বজনরা। এছাড়া নাবিকদের সংবর্ধনা দেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

এরপর আনুষ্ঠানিকতা শেষে নাবিকেরা স্বজনদের সঙ্গে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। এদিকে নাবিকদের পরিবারেও শুরু হয়েছে স্বজনদের ঘরে ফেরার উৎসব। নানা আয়োজনে নাবিকদের বরণ করতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা। বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান, ভাই-বোন সবাই অধীর আগ্রহে তাদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। অবশেষে তাদের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হলো। মৃত্যুর দুয়ার থেকে সন্তান ফিরছেন এই আনন্দে মাতোয়ারা শিমুলের মা শাকেরা বেগম। স্বামীহারা এই নারী অধীর অপেক্ষায় ছিলেন ছেলেকে বুকে নেওয়ার জন্য। স্ত্রী ফারজানা আকতার স্বামীর জন্য রেঁধেছেন পছন্দের সব খাবার। তাদের মতোই নিজ দেশের সন্তানদের ফিরে পেয়ে আনন্দিত সারা দেশের মানুষ।

প্রসঙ্গত, মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে দুবাই যাওয়ার পথে গত ১২ মার্চ সোমালিয়ার দস্যুরা ২৩ নাবিকসহ এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজটি জিম্মি করেছিল। দেশটির উপকূল থেকে ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে ভারত মহাসাগর থেকে জাহাজটি জিম্মি করেছিল সশস্ত্র জলদস্যুরা। ১৪ এপ্রিল ভোররাতে জাহাজটি জলদস্যুমুক্ত হয়। এ সময় ৬৫ জন জলদস্যু জাহাজটি থেকে বোটে নেমে যায়। পরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুইটি যুদ্ধ জাহাজের পাহারায় এমভি আব্দুল্লাহ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পার হয়। বাড়তি সতর্কতা হিসেবে তখন জাহাজের চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া, ডেকে হাই প্রেসার ফায়ার হোস বসানো হয়, যাতে জলদস্যুরা ফের হামলা করলে উচ্চচাপে পানি ছিটানো যায়। গত ২২ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে জাহাজটি দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দরের জেটিতে ভিড়েছিল। কয়লা খালাস শেষে ২৭ এপ্রিল স্থানীয় সময় বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে নতুন ট্রিপের পণ্য লোড করতে ইউএই’র মিনা সাকার বন্দরে যায়। সেখান থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল এমভি আব্দুল্লাহ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত