ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অপরিপক্ব ফল দিয়ে শুরু হলো মধু মাস

এবার অফ সিজনে আমে থাকবে মনোকষ্ট
অপরিপক্ব ফল দিয়ে শুরু হলো মধু মাস

আজ থেকে শুরু হলো মধু মাস জ্যৈষ্ঠ। মধু মাসে মিলবে বিভিন্ন রসালো ফল। মিলবে বাড়তি পুষ্টি। মিলবে বাড়তি তৃপ্তি। আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে ফল পাঠানো বাঙালি পরিবারের একটা শ্বাশত রীতি। জামাইকে জ্যৈষ্ঠ মাসে দাওয়াত দিয়ে ফল খাওয়াতে কেনা ভালোবাসে। মাছে-ভাতে বাঙালির সঙ্গে যোগ হয়েছে আমে দুধে বাঙালি। দুধের সঙ্গে আম মিশিয়ে খাওয়ার তৃপ্তি এই মাসে মানুষ গ্রহণ করে থাকে। বিশেষ করে রাতের খাবারের সঙ্গে জ্যৈষ্ঠ মাসের রসালো ফল আম খাওয়ার যেন কোনো জুড়ি নেই। ফলের গন্ধে মৌ মৌ করবে বাঙালি পরিবারের আঙ্গিনা। কাঁচা-পাকা আমের নানা রকমফের আইটেম খেতে খেতে মানুষ নাস্তা কিংবা ভাত খাওয়ার কথা ভুলে যায়। সুস্বাদু বিভিন্ন ফলের অধিক সরবরাহ থাকায় সবার কাছে জ্যৈষ্ঠ মাসটি মধুমাস নামেই পরিচিত। বছরজুড়ে কমবেশি ফল পাওয়া গেলেও সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় জ্যৈষ্ঠ মাসের শুরু থেকে। এবারো বিভিন্ন রসালো ফলের সমাহার নিয়ে মধু মাসের আগমন ঘটেছে। আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, জামরুল, তরমুজ, আনারস, কলা ছাড়াও এ মাসে মিলবে লটকন, পেয়ারা, বাঙ্গি। এরই মধ্যে অনেক ফল বাজারে চলে এসেছে।

ষড়ঋতুর বাংলাদেশে গ্রীষ্মের গরম হাওয়ায় মধুরসে ভরা বিভিন্ন জাতের ফলের মিষ্টি সৌরভ নিয়ে আগমন হয়েছে জ্যৈষ্ঠের। জ্যৈষ্ঠের তাপপ্রবাহে সারা দেশ মেতে ওঠবে পাকা ফলের মিষ্টি রসে। মধু মাসের মিষ্টি ও সুস্বাদু ফল মিশে আছে আমাদের ঐতিহ্যের সাথে। দেশীয় ফল আমাদের সংস্কৃতি, সভ্যতা ও ঐতিহ্যের বড় একটি অংশ। তবে খুব বেশি দিন স্থায়ী হয় না বাঙালির রসনাতৃপ্তির মিষ্টি ফল আম, লিচু ও কাঁঠালের এই মাস। মূলত গ্রীষ্ম ঋতুর খরতপ্ত বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ দুই মাসই মিষ্টি ফলের মাস। ফলের সমাহার জমে ওঠে জ্যৈষ্ঠ মাসেই। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচুতে ভরে ওঠে দেশের সব ফলের দোকানগুলো। জ্যৈষ্ঠ মাস বাংলার গ্রামীণ সমাজের ঐতিহ্যেরও অনিবার্য অংশ। গ্রামের মানুষ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আমণ্ডকাঁঠাল উপহার পাঠিয়ে থাকে এই জ্যৈষ্ঠ মাসেই। শহর জীবনে আয়োজন করা ফলের উৎসব। সেই সঙ্গে ফলের মেলা। আয়োজকরা রাসায়নিকমুক্ত ফল মেলার বিক্রি করার দাবি করলেও সেই দাবি পুরোপুরি সত্যতা মিলে না। কয়েক দিন পর শহরের ফুটপাতে এবং ফলের দোকানগুলোতে আরো বেশি নজর কাড়বে গ্রীষ্মের মৌসুমি ফল। এক হিসেবে দেখা গেছে বাংলাদেশে ফলের উৎপাদন প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ টন। এর প্রায় ৫০ শতাংশ উৎপাদিত হয় জ্যৈষ্ঠ থেকে শ্রাবণ মাসের মধ্যে। বাকি ৫০ শতাংশ উৎপাদিত হয় অবশিষ্ট ৯ মাসে। ফল উৎপাদনে পৃথিবীর প্রথম সারির ১০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান। রসালো ফলের মৌসুম এখনো পুরোপুরি শুরু হয়নি। সপ্তাহখানেক পরে বাজারে আসবে পরিপক্ব আম ও লিচু। তবে এরই মধ্যে রাজধানীর বাজারগুলো ছেয়ে গেছে টক-মিষ্টি স্বাদের অপরিপক্ব আম ও লিচুতে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দোকানে দোকানে সবুজাভ ও হালকা লাল রঙের লিচু পাওয়া যাচ্ছে। তবে পুরোপুরি মৌসুমে পাওয়া লিচুর তুলনায় এগুলোর আকার কিছুটা ছোট।

বিক্রেতাদের দাবি, এসব লিচু নাটোর, রাজশাহী, যশোর, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর থেকে আসে। তবে তাদের এ দাবি অনেকটা সঠিক নয়। বর্তমানে বাজারে পাওয়া বেশিরভাগ লিচুই আসছে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও ও গাজীপুরের কাপাসিয়া থেকে। এছাড়া মাদ্রাজি জাতের এসব লিচুর বেশিরভাগই এখনও পরিপক্ব হয়নি। এই কথা বিক্রেতারাও স্বীকার করেছেন। যে কারণে এসব লিচুর স্বাদও টক-মিষ্টি। জানা যায়, রাজশাহী, নাটোর ও দিনাজপুরের বোম্বাই ও বেদানা লিচু আরো এক সপ্তাহ পর বাজারে উঠবে। সেসব পরিপক্ব লিচুর আকার যেমন এখনকার তুলনায় বড় হবে, তেমনি স্বাদও মিষ্টি হবে। সেসব লিচুর রঙ হবে লাল। লিচু বিক্রেতারা বলছেন এখন যেসব লিচু বাজারে আছে সেগুলো পুরোপুরি মিষ্টি না। কিছুটা টক মিষ্টি স্বাদের। মিষ্টি লিচু সপ্তাহখানেক পরে আসবে। বছরের প্রথম লিচু বাজারে উঠেছে। ক্রেতাও আছে মোটামুটি। আরও ১০ দিন পর আরও ভালো লিচু আসবে। তখন বিক্রিও বাড়বে।

সোনারগাঁও ও গাজীপুর থেকে আসা লিচু একটু টক-মিষ্টি স্বাদের। দিনাজপুরের লিচু আরও পরে উঠবে। বাজারে এখনও পরিপক্ব লিচু না উঠলেও অনেক ক্রেতা পরিবারের জন্য অপরিপক্ব লিচু কিনছে। আবার লিচু পরিপক্ব না হওয়ায় অনেক ক্রেতাকে সেগুলো কেনা থেকে বিরত থাকতেও দেখা যায়। কোনো কোনো ক্রেতা বলেন, বছরের প্রথম লিচু উঠেছে। ঘরে ছোট সন্তান আছে। তাদের জন্য বছরের প্রথম লিচু কেনা। তবে অনেকে বলছেন বাজারে এখন যেসব লিচু উঠছে সেগুলো পরিপক্ব নয়। ঝড়ে ডাল ভেঙে যেসব লিচু পড়েছে, সেগুলোই বাজারে এনে বিক্রি করা হচ্ছে। আবার অনেক মুনাফালোভী বিক্রেতা কাঁচা লিচু বাজারে নিয়ে আসছেন। এগুলোর স্বাদ মিষ্টি নয়। এসব লিচু খেলে পেট ব্যথা হতে পারে। তাই অন্য ফল কিনছি। তবে আশংকার কথা হচ্ছে এবার আমের অফ সিজন। তাই এবার আমের ফলন কম। এছাড়া অধিক কুয়াশা ও তাপপ্রবাহের কারণে আমের ফলন ভালো হয়নি। সে কারণে এবার আমের দাম তুলনামূলক বেশি হবে। ফলে মানুষ ইচ্ছা মতো রসালে ফলের স্বাদ হয়তো গ্রহণ করতে পারবে না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত