ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঢাকা ছাড়লেন ডোনাল্ড লু

সবকিছু ছাপিয়ে সম্পর্কোন্নয়নে জোর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের

* আমরা সামনে তাকাতে চাই : লু * বাংলাদেশের ফুচকার প্রশংসা
সবকিছু ছাপিয়ে সম্পর্কোন্নয়নে জোর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের

বাংলাদেশ নিয়ে কৌশল বদলাতে শুরু করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহ দেখাচ্ছে দেশটি। উত্তেজনার পারদ কমাতে বাংলাদেশে দুই দিনের সফর করলেন যুক্তরাষ্ট্র্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। বৈশ্বিক অগ্রাধিকারের বিষয়গুলোকে সামনে রেখে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করবে বলেও জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের জ্যেষ্ঠ এ কর্মকর্তা। একই সাথে র‌্যাব, শ্রমিক অধিকার ও মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং দুর্নীতি রোধে অগ্রগতি দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের পাশে থাকার স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে দেশটি।

গতকাল ডোনাল্ড লুর সফরের শেষ দিনে নানা ব্যস্ততায় কেটেছে তার। দিনের শুরুতেই গুলশানের ইএমকে সেন্টারে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও একটি বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজন খাতে অ্যাওয়ার্ড প্রদানের এক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। তাতে স্বাক্ষর করেন মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু এবং ইস্টার্ন ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ শাহীন। এরপর বাংলাদেশ সচিবালয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর বৈঠক করেন ডোনাল্ড লু। সেখানেও বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক আরো জোরদার করার বিষয়টি উঠে আসে। এ সময় তার সঙ্গে আরো ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস; দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোর চিফ অফ স্টাফ নাথানিয়েল হাফট; নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ব্যুরো অফিসের রাজনৈতিক ইউনিট প্রধান সারাহ অলড্রিচ; ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক কাউন্সেলর আর্তুরো হাইন্স, ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের পলিটিক্যাল ইউনিট চিফ শেরিন ফিটজেরাল্ড এবং ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের পলিটিক্যাল অফিসার ম্যাথু বেহ প্রমুখ। পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, পরিবেশ ও জলবায়ু-সংক্রান্ত পদক্ষেপের ভিত্তিতে আগামী দিনে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো শক্তিশালী হবে। যুক্তরাষ্ট্র জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আমাদের সহযোগিতা করতে চায়। আমরাও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরো গভীর করতে চাই। এই বৈঠকে আমাদের দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরো জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়ার জন্য বিনা মূল্যে রিয়াল টাইম স্যাটেলাইট ডেটা অফার করার পরিকল্পনা করেছে বলে জানান পরিবেশমন্ত্রী।

পরিবেশমন্ত্রীর পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের জ্যেষ্ঠ এ কর্মকর্তা ডোনাল্ড লু। বৈঠক শেষে সরাসরি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এ সময় যুক্তরাষ্ট্র্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যু পেছনে ফেলে যুক্তরাষ্ট্র সামনের দিকে তাকাতে চায়। আমাদের লোকজনের মধ্যে বিশ্বাস পুনর্নির্মাণের জন্য আমি গত দুই দিন ধরে বাংলাদেশ সফর করছি। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু এবং সহিংসতা মুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছিল। আমরা সামনের দিকে তাকাতে চাই, পেছনের দিকে নয়। আমাদের সম্পর্ককে মজবুত করার জন্য উপায় বের করতে চাই। এজন্য আমি পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের দুই দেশের মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু আছে। যেমন র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা, শ্রম আইনের সংস্কার, মানবাধিকার এবং ব্যবসায়িক পরিবেশ সংস্কার। এ সম্পর্ক জোরদার করার জন্য আমাদের ইতিবাচক দিক নিয়ে সহযোগিতা বাড়াতে হবে।

ডোনাল্ড লু বলেন, আমরা নতুন বিনিয়োগের কথা বলেছি। অধিকসংখ্যক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করবে, এটা নিয়ে আলোচনা করেছি। ক্লিন এনার্জি নিয়ে কথা বলেছি। সর্বশেষ যে বিষয়টি নিয়ে আমি মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি, সেটা হলো দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের লড়তে হবে। আমরা যেটা করতে পারি সরকারের স্বচ্ছতা, সরকারি কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার মাধ্যমে। আমরা করসীমা বাড়ানোর কথা বলেছি, যাতে বাংলাদেশ সেখান থেকে উপকৃত হতে পারে।

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক আরও এগিয়ে নেওয়ার আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে বলে দাবি করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পঞ্চমবারের মতো সরকার গঠনের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। তার চিঠিতে দুই দেশের সম্পর্ককে উচ্চতর ভিন্নমাত্রায় নিয়ে যাওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিলেন তিনি। সেই অভিপ্রায়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক খুবই চমৎকার। আমাদের বহুমাত্রিক সহযোগিতার ক্ষেত্র রয়েছে। একইসাথে গত ৫৩ বছরের আমাদের অভিযাত্রায় যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। যে কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে সফরে আসা মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুকে ধন্যবাদ জানিয়েছি।

এদিকে বাংলাদেশি ফুচকা ও ঝালমুড়ি খেয়ে প্রশংসা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। ‘বাংলাদেশের ফুচকা ইজ দ্য বেস্ট’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের ফেসবুক পেইজে দেওয়া একটি ভিডিও ক্লিপ দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ফুচকা ও ঝালমুড়ির স্বাদ নিচ্ছেন। এ সময় ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসও উপস্থিত ছিলেন। সেলিব্রিটি শেফ রহিমা সুলতানার ফুচকা ও ঝালমুড়ির স্বাদ নিতে নিতে ডোনাল্ড লু ও রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, ‘বাংলাদেশের ফুচকা ইজ দ্য বেস্ট’। দুই দিনের সফরে গত মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকায় আসেন ডোনাল্ড লু। বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর প্রথম ঢাকায় এলেন লু। ঢাকা বিমানবন্দরে লু-কে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকা অনুবিভাগের মহাপরিচালক খন্দকার মাসুদুল আলম। সফরের শুরুতে ঢাকায় গুলশানে পিটার হাসের বাসায় নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন লু। রাতে লু প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের নৈশভোজে যোগ দেন। ঢাকা ও ওয়াশিংটনের মধ্যে টেকসই কূটনৈতিক সম্পর্কের নয়া সমীকরণ বৈশ্বিক অঙ্গনে বিশেষ বার্তা দেবে বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, ভূ-রাজনীতিতে দিন দিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে বাংলাদেশ। বিশ্বরাজনীতির অন্যতম শক্তি চীন ও আঞ্চলিক শক্তি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নৈকট্য এবং দক্ষিণ এশিয়াসহ এ অঞ্চলে এ দুই দেশের প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাংলাদেশ বিষয়ে আলোচনায় এক নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। এ বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য বৈশ্বিক শক্তির কাছে বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ে গুরুত্ব পাচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত