ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ইইউ’র পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধানের বিবৃতি

রাফায় সামরিক অভিযান অবিলম্বে বন্ধের আহ্বান

রাফায় সামরিক অভিযান অবিলম্বে বন্ধের আহ্বান

ইউরোপীয় ইউনিয়ন গতকাল ইসরাইলকে গাজার রাফাতে চালানো তাদের সামরিক অভিযান ‘অবিলম্বে’ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, এটি করতে ব্যর্থ হলে, এ ব্লকের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক নষ্ট হবে। খবর এএফপি’র।

ইইউ’র পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল ইউরোপীয় ইউনিয়নের নামে জারি করা বিবৃতিতে বলেন, ‘ইসরাইল রাফাতে তাদের সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখলে, তা অনিবার্যভাবে ইসরাইলের সঙ্গে ইইউ’র সম্পর্কের উপর একটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’

বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইসরাইলকে রাফাতে তাদের সামরিক অভিযান অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে এবং তারা সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ‘এটি গাজায় মানবিক সহায়তা বিতরণকে আরো ব্যাহত করছে এবং সেখানের লোকজন দুর্ভিক্ষের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।’ ফিলিস্তিনের প্রধান সাহায্য দাতা এবং ইসরাইলের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, ইসরাইল রাফাহ ও এর আশপাশের ১০ লাখেরও বেশি লোকজনকে অন্য অঞ্চলে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে- যা নিরাপদ বলে বিবেচিত হতে পারে না- বলে জাতিসংঘ উল্লেখ করেছে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ইইউ ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকারকে স্বীকৃতি দিলেও দেশটিকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তা করতে হবে এবং বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে হবে।

ইসরায়েলকে নতুন করে একশ’ কোটি ডলারের অস্ত্র দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র : মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন ইসরায়েলকে নতুন করে ১০০ কোটি ডলারের অস্ত্র দেয়ার পরিকল্পনার কথা কংগ্রেসকে জানিয়েছে। গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় হামলা চালালে কিছু অস্ত্রের চালান বন্ধ করে দেয়া হবে বলে বাইডেনের হুমকির এক সপ্তাহের মধ্যে এ পরিকল্পনার কথা জানাল তার প্রশাসন।

একজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, প্রশাসন গত মঙ্গলবার কংগ্রেসকে অনানুষ্ঠানিকভাবে এ পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কংগ্রেসের অনুমোদন লাগবে।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কংগ্রেসের এক সহকারী জানিয়েছেন, মার্কিন অস্ত্র প্রস্তুতকারীদের কাছ থেকে যে অস্ত্র নেয়া হবে তা ১০০ কোটি ডলার মূল্যের।

এর আগে মার্কিন কংগ্রেস ইউক্রেন, ইসরায়েল ও তাইওয়ানের জন্য ৯ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের একটি প্যাকেজ অনুমোদন করে। এদিকে নতুন করে অস্ত্র দেয়ার পরিকল্পনার কথা এমন একসময়ে আসল যখন কেবল সপ্তাহ খানেক আগে বাইডেন ইসরায়েলকে হুঁশিয়ার করে বলেছিল, রাফায় স্থল হামলা চালানো হলে যুক্তরাষ্ট্র বোমা ও কামানের গোলা সরবরাহ বন্ধ করে দেবে। যদিও বাইডেনের এ হুঁশিয়ারি অগ্রাহ্য করেই ইসরায়েল রাফায় বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছে এবং রাফা ক্রসিংয়ে সৈন্য ও ট্যাংক জড়ো করেছে।

ইসরায়েলের কাছে নতুন করে অস্ত্র বিক্রির খবরটি প্রথম প্রকাশ করে ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’। জার্নালের খবরে বলা হয়েছে, এতে সম্ভবত ৭০ কোটি ডলারের ট্যাংক গোলাবারুদ এবং ৫০ কোটি ডলারের কৌশগলগত যানবাহন রয়েছে। এদিকে ৭ অক্টোবর ইসরায়েল গাজায় প্রতিশোধমূলক পাল্টা হামলা শুরু করে যা এখনো চলছে।

গাজায় নিহত ফিলিস্তিনিদের অন্তত ৫৬ শতাংশ নারী ও শিশু - জাতিসংঘ :

ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা সাত মাসেরও বেশি সময় ধরে চালানো এই হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন প্রায় ৩৫ হাজার ফিলিস্তিনি। বর্বর এই আগ্রাসনে নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এবার জাতিসংঘও এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। সংস্থাটি বলছে, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহত ফিলিস্তিনিদের অন্তত ৫৬ শতাংশই নারী ও শিশু। গতকাল বুধবার এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

জাতিসংঘ বলছে, গাজা যুদ্ধে নিহত হাজার হাজার মানুষের মধ্যে অন্তত ৫৬ শতাংশ নারী ও শিশু। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে চলা ইসরায়েলের নিরলস আগ্রাসনে অন্তত ৩৫ হাজার ১৭৩ জন নিহত হয়েছেন।

মূলত গাজা কর্তৃপক্ষ ক্রমাগত বলেছে, উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, গত ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত গাজায় নিহতদের মধ্যে প্রায় ২৫ হাজার জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৪০ শতাংশ পুরুষ, ২০ শতাংশ নারী এবং ৩২ শতাংশ শিশু এবং ৮ শতাংশ বয়স্ক মানুষ রয়েছেন। মঙ্গলবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মুখপাত্র ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডমেয়ার বলেছেন, নতুন এই পরিসংখ্যাটি এখন পর্যন্ত সরবরাহ করা তথ্যগুলোর মধ্যে ‘সবচেয়ে ব্যাপক’। তিনি জেনেভায় সাংবাদিকদের বলেন, অজ্ঞাত পরিচয়ের ক্ষেত্রে একই অনুপাত প্রয়োগ করলে এবং নিহত বয়স্ক নাগরিকদের অর্ধেক নারী হলে এটা আশা করা যেতেই পারে যে, নিহত ৩৫ হাজারেরও বেশি মানুষের মধ্যে অন্তত ‘৫৬ শতাংশ নারী ও শিশু’ রয়েছে।

তিনি বলেন, তারপরও এটি বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে না, কারণ হাজার হাজার মানুষ এখনও সম্ভবত ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে রয়েছে বলে বিশ্বাস করা হয়। এছাড়া তাদের মধ্যে আরও বেশিসংখ্যক নারী এবং শিশু থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশি। কারণ, নারী ও শিশুরাই সাধারণত বাড়িতে অবস্থান করে থাকেন। মুখপাত্র ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডমেয়ার বলেন, সুতরাং ‘ন্যূনতম পরিসংখ্যানগত গণনা’ থেকে বলা যায়, গাজায় নিহতদের ৬০ শতাংশ নারী এবং শিশু হতে পারে।

এদিকে জাতিসংঘের শিশু নিরাপত্তা ও অধিকার বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের প্রধান বলেছেন, গত বছরের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় ১৯০ জনেরও বেশি জাতিসংঘ কর্মী নিহত হয়েছেন। ক্যাথরিন রাসেল সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছেন, ‘সেবা করার সময় মানবতাবাদীদের অবশ্যই সবসময় সুরক্ষিত রাখতে হবে।’ মূলত গতকাল ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর জাতিসংঘের প্রথম কোনো বিদেশি কর্মীকে হত্যা করেছে। রাফাতে পরিষ্কারভাবে চিহ্নিত জাতিসংঘের একটি গাড়িতে হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা করে ইসরায়েলি সেনারা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত