ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শেখ হাসিনার আগমন ছিল দেশ ও দল রক্ষায় অনিবার্য

স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে বিশিষ্টজনের অভিমত
শেখ হাসিনার আগমন ছিল দেশ ও দল রক্ষায় অনিবার্য

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪৪তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যাকাণ্ডের পর প্রায় ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালে আজকের এই দিনে দেশে ফেরেন তার জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা। সেদিন বিকাল সাড়ে ৪টায় ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি বোয়িং বিমানে তিনি ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে কলকাতা হয়ে তৎকালীন ঢাকা কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের দৃঢ় অঙ্গীকার, বঙ্গবন্ধু হত্যা ও জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার এবং স্বৈরতন্ত্রের চির অবসান ঘটিয়ে জনগণের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সার্বভৌম সংসদীয় পদ্ধতির শাসন ও সরকার প্রতিষ্ঠার শপথ নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার আগমন দেশ ও দলের জন্য অনিবার্য ছিল বলে মত দিয়েছেন বিশিষ্টজন। তাদের মতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর রক্ত ও আদর্শের উত্তরসূরী। মৃত্যুকে উপেক্ষা করে তিনি বাঙালি জাতির কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বিশ্বমঞ্চে বাঙালিকে আত্মণ্ডমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট রয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের হাল না ধরলে দলও টিকত না। বিভিন্ন খণ্ডে বিভক্ত হয়ে যেত। একমাত্র শেখ হাসিনার হাতেই আওয়ামী লীগ নিরাপদ ছিল। তাই ১৯৮১ সালের ১৩-১৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিলে শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আন্দোলন ও সংগ্রামের মধ্য নিয়ে ৫ বার রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছে আওয়ামী লীগ। গতকাল শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম আয়োজিত এক আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি মণ্ডলির সদস্য এবং বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ছিল একটা জাগরণ। যারা মুক্তিযুদ্ধের পরাজয়কে মেনে নিতে পারেনি, তারাই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল, তারাই বাংলাদেশকে আবার উল্টোপথে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। ১৭ই মে শুধু বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন হয়নি, হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যাবর্তন, হয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যাবর্তন। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার পথ রুদ্ধ করার জন্য তাকে ৯বার কারারুদ্ধ করা হয়েছিল, ১৪বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। তবুও থামাতে পারেনি। শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ‘বাংলাদেশের পুনর্জন্ম’ বলে মত দিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান। তার মতে, শেখ হাসিনার আগমন গণজোয়ার নিয়ে আসে সারা দেশে। হতাশাগ্রস্ত আওয়ামী লীগ কর্মীরা সুসংগঠিত হতে শুরু করে। বিপন্ন যে জাতি দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের সব অর্জন হারাতে বসেছিল, তাদের মনে আবারও হারানো মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ ফিরে পাওয়ার আশা জাগে। শুরু হয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার আন্দোলনের পথ চলা। ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনার ঢাকা বিমানবন্দরে অবতরণের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃগ্রথিত হওয়ার যাত্রার শুভ সূচনা হয়। শেখ হাসিনাকে পেয়ে বাঙালি তার ‘বাঙালিত্ব’ ও ‘বাংলাদেশকে’ ফিরে পাওয়ার আশায় বুক বাঁধে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘শেখ হাসিনা যখন দেশে ফিরেছিলেন তখন গোটা দেশ ছিল এক রুদ্ধ কারাগার। তিনি দেশে ফিরেই যেন দেশের ভার গ্রহণ করেছিলেন। শেখ হাসিনা দেশে ফেরার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ প্রাণশক্তি ফিরে পেয়েছিল।’ শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যার্বতন দিবস প্রসঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস বলেন, শেখ হাসিনার ফিরে আসা খুব বেশি প্রয়োজন ছিল দেশ ও জনতার স্বার্থে। প্রকৃতপক্ষে ১৭ মে এদেশের ইতিহাসের মাইলফলক। সেদিন থেকেই দেশের রাজনৈতিক মঞ্চে দ্রুত দৃশ্যপট পরিবর্তন হতে থাকে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে বঙ্গবন্ধু ও জয়বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ ছিল। সেদিন থেকেই সেই স্লোগান প্রকম্পিত হয়ে উঠল আকাশে-বাতাসে; রাজপথ জনগণের দখলে চলে গেল। সেনাশাসক জিয়াউর রহমান শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের বিরুদ্ধে ছিলেন। কিন্তু প্রত্যাবর্তনের পূর্বে সেই বছরই শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং জিয়ার অভিসন্ধি ভেস্তে যায়। রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবির) গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মশিয়ার রহমান (মশিউর) আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা যদি সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করে দেশে না ফিরতেন, তাহলে বাংলাদেশের গণতন্ত্র পূর্ণতা পেত না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা উদ্ধার হতো না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ রক্ষা করা সম্ভব হতো না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রতিষ্ঠিত দল আওয়ামী লীগকেও রক্ষা করা যেত না। আজকে যে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মণ হচ্ছে তা বাস্তবায়ন হতো না। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ফিরে এসেছিলেন বলেই বাঙালি পূর্ণতা পেয়েছে। দেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরে পেয়েছে, গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ বিশুদ্ধ জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে শুধুমাত্র শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন বলেই।’

গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ১৯৮১ সালের ১৭ মে সমস্ত রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ প্রত্যাবর্তন করেন, আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়ে। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার আগমন ঠেকানোর জন্য সমস্ত প্রচেষ্টা চালিয়েছেন জিয়াউর রহমান। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা যখন ফিরে এলেন এবং দলের দায়িত্ব নিলেন তখনই সব নেতাকর্মী উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন। তার আগমনে বিমানবন্দরে জনসমুদ্র সৃষ্টি হয়। শেখ হাসিনাকে ১৯বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েছেন তিনি। জীবনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে পদ চলেছেন; এখনও চলছেন। কিন্তু কখনোই ‘জনগণের অধিকার আদায়ের কাফেলা’ থেকে বিচ্যুত হননি।

শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যার্বন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত বেদনাভারাক্রান্ত মন নিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরেছিলেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশকে পাকিস্তানের খাদের কিনারায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেদিন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ফিরে বাংলাদেশকে সঠিক জায়গায় নিয়ে এসেছেন। তার প্রত্যাবর্তন বাঙালি জাতির জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যেদিন বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়, শেখ হাসিনা তখন তার ছোট বোন শেখ রেহানা, স্বামী ও দুই সন্তানসহ তখনকার পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন। ফলে তারা প্রাণে বেঁচে যান।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত