ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিএনপির চোখে লু’র সফর

বিএনপির চোখে লু’র সফর

তিন দিনের সফর শেষে ঢাকা ছেড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। টানা দুই দিন ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করেন তিনি। এই সফরে তিনি সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের কয়েকটি বৈঠক এবং মতবিনিময় সভায় অংশ নেন। তবে দুই দিনের সফরে শুধু বিএনপি নয়; সমমনা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেননি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গত বছর ডোনাল্ড লুর সফর ছিল বেশ আলোচনায়। সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন করা বিএনপি তখন বেশ চাঙা হয়ে উঠেছিল। তবে লু’র এবারের সফর ঘিরে উৎসাহ ছিল না বিএনপির। দলটির নেতাকর্মীরা বলছেন, কে এলো আর কে গেল, তা নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই। তবে আওয়ামী লীগ বলছে, দুই দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে এ সফর গুরুত্বপূর্ণ।

লু’র আসার খবরে বিএনপি চাঙা হয়েছে- ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে এমন দাবি তুললেও এ বিষয়টিকে অতটা গুরুত্ব দেননি বিএনপির নেতারা। এদিকে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে লু’র সফর নিয়ে বিএনপির যে উচ্ছ্বাস ছিল; এবার তার বিন্দুমাত্র ছিল না। এ সফরের আলোচনাও দলটির দায়িত্বশীল নেতারা এড়িয়ে গেছেন সুকৌশলে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ডোনাল্ড লু’র আগমন নিয়ে আমরা কেউ ইন্টারেস্টেড নই। আমাদের ভরসা জনগণের ওপর, সেই আস্থার ওপর আমরা দাঁড়িয়ে আছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ কারো ওপর নির্ভর করে গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনবে- এটা আমরা মনে করি না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের কাছে লু অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। ডোনাল্ড লু তো অনেক দূরের মানুষ। আমরা শঙ্কিত আমাদের নিজের দেশের অবস্থা নিয়ে। বাংলাদেশের মানুষ তাদের সমস্যা সব সময় নিজেরা সমাধান করেছে। যারা মানুষের ন্যায্য আন্দোলনে সমর্থন করতে চায়, আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই; আর কেউ বিরোধিতা করলে নিন্দা জানাই। তবে দলের বৈদেশিক নীতি দেখেন এমন এক নেতা জানান, তারা জাতীয় নির্বাচনের আগে সংলাপ ইস্যুতে ডোনাল্ড লু’র ভূমিকায় হতাশ। বিএনপি ধারণা করেছিল, সংলাপে বসতে আরও জোরালো পদক্ষেপ নেবেন ডোনাল্ড লু। দায়িত্ব পাওয়ার পর চারবার বাংলাদেশ সফর করেছেন লু। সবশেষ গত বছরের জুলাইয়ে এসেছিলেন তিনি। জাতীয় নির্বাচনের আগে তার সেই সফর নিয়ে বিএনপিতে এক ধরনের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। নির্বাচন নিয়ে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রেক্ষাপটে ধারণা করা হচ্ছিল, বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপে বিএনপি বিশেষ সুবিধা পাবে। বিএনপির নেতাকর্মীদের কথায়ও এমন মনোভাবের বিষয়টি তখন ফুটে উঠেছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সেই প্রত্যাশার প্রতিফলন হয়নি। নির্বাচনের আগে ওই সফরে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সরকারকে নানা পরামর্শ দিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে সেই ভোট হয়ে যাওয়ার চার মাস পর যুক্তরাষ্ট্রের এই সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফের আসেন ঢাকায়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গত নির্বাচনে ক্ষমতায় যাওয়ার বিষয়ে বিএনপি অনেকটাই যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল ছিল; কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। তাছাড়া নানা কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বিএনপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। বিষয়টি আঁচ করতে পেরেই দলটি নিজেদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবমুক্ত হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করছে। আপাতত চুপ থেকেই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, লু’র সফর নিয়ে বিএনপির কোনো নেতা কোথাও কোনো কথা বলেননি। ডোনাল্ড লু’র বাংলাদেশ সফরে বিএনপি উৎসাহী নয় বলে মন্তব্য করেছেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক। তিনি বলেন, লু কী বার্তা নিয়ে এসেছেন, সেটা ক্ষমতাসীন দল জানে, আমাদের জানার কথা নয়। গত মঙ্গলবার ঢাকা পৌঁছে ডোনাল্ড লু নাগরিক সমাজ, সাংবাদিক ও পরিবেশ কর্মীদের সাথে বৈঠক করেন। রাতে, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বাসভবনে বৈঠক করেন। সেখানেই ছিলো নৈশভোজের আয়োজন। গত বুধবার তিনি পররাষ্ট্র সচিব, পরিবেশমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গেও বৈঠক করেন। যৌথ ব্রিফিংয়ে ডোনাল্ড লু বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কন্নোয়ন চায় যুক্তরাষ্ট্র।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত