স্মার্ট হচ্ছে এসিল্যান্ড অফিস অ্যানালগেই রেজিস্ট্রি বিভাগ

প্রকাশ : ১৯ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ফারুক আলম

সারা দেশে জমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন ও মানুষের ভোগান্তি দূরীকরণে অনলাইনভিত্তিক ‘স্মার্ট ভূমি ব্যবস্থাপনা’ কার্যক্রম এগিয়ে গেলেও পিছিয়ে পড়েছে ভূমি রেজিস্ট্রি বিভাগ। এতে জমি বেচাকেনায় রেজিস্ট্রি বিভাগে পুরোনো দৃশ্যের পরিবর্তন হয়নি।

ভূমি ব্যবস্থাপনায় অনলাইনে আবেদন করে নামজারি বা মিউটেশন সহজেই করা যায়। সেজন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে নামজারির (মিউটেশন) জন্য আবেদন করতে হয়। কিন্তু ভূমি রেজিস্ট্রি বিভাগে এখনো অনলাইন ভূমি রেজিস্ট্রেশনের ছোঁয়া লাগেনি। ফলে অ্যানালগেই ভূমি রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চালাচ্ছে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসগুলো।

ভূমি রেজিস্ট্রেশন বিভাগ থেকে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ই-রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রমের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য ‘ভূমি নিবন্ধন ব্যবস্থাপনা ডিজিটালাইজেশনের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্প’ গ্রহণ করা হয়েছিল। পরীক্ষামূলকভাবে অনলাইনে ১৭টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ভূমি রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চালুর পর সফলতা পায়। এরপর ২০২৩ সালের জুলাইয়ে আইন এবং বিচার বিভাগ থেকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে ৫ বছর মেয়াদি প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হলেও প্রকল্পটি অনুমোদন হয়নি। ফলে অনলাইন ভূমি রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম আটকে যায়।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দেশজুড়ে অনলাইনভিত্তিক ভূমি রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া চালু হলে মানুষের ভোগান্তি কমবে। ভূমি রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়ে যেসব কাগজ লাগবে তা সহজেই সংগ্রহ করতে পারবে। নিবন্ধিত দলিলের অনুলিপি তাৎক্ষণিকভাবে সংগ্রহ করতে পারবে। ফলে ভূমি ক্রয়-বিক্রয়ে শৃঙ্খলা আসবে এবং জাল-জালিয়াতি প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। এরইমধ্যে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসকে স্ব স্ব প্রশাসনিক এখতিয়ারের মধ্যে রেখে এরই মধ্যে আন্তঃসংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। ভূমি রেজিস্ট্রেশন শতভাগ অনলাইন করা গেলে এসিল্যাল্ড ও সাব-রেজিস্ট্রারদের কাজের গতি আরও বাড়বে। মানুষের ভোগান্তি কমবে ও সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন সহকারী কমিশনার (ভূমি) বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা এসিল্যান্ড অফিসগুলো ভূমি নামজারি বা মিউটেশনের কার্যক্রম করছে। অন্যদিকে আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা রেজিস্ট্রি বিভাগগুলো ভূমি রেজিস্ট্রেশনের কাজ করছে। সেজন্য জমি সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে দুই মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় প্রয়োজন হয়ে পড়ে। কিছু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও জটিলতা তৈরি হয়।

এসিল্যান্ড অফিসে আবেদনের এক মাসের মধ্যে ডিজিটাল মাধ্যমে ভূমির নামজারি সম্পন্ন হচ্ছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে ই-নামজারির নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আবেদন করতে হয়। আবেদনের সঙ্গে সাধারণত মালিকের পরিচয়পত্র, ছবি, মোবাইল নম্বরসহ জমির বিস্তারিত পরিচয় দিতে হয়। খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর, জমির পরিমাণ, মৌজা, জেলা উল্লেখ করতে হবে এবং দলিলের স্ক্যান কপি আপলোড করতে হবে। পরবর্তী সময় সমস্ত দলিলের এক সেট সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে জমা দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। অনলাইনেই নামজারির ফি জমা দেওয়া যায়। নামজারি আবেদনটি কোন স্তরে আছে, ওয়েবসাইট থেকেই তা যাচাই করা যায়। অন্যদিকে সেই পুরোনো দিনের মতো সাব-রেজিস্ট্রি অফিসগুলো চলছে। ২০২১ সালের ১০ জুন ১৭টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল ই-রেজিস্ট্রশন সিস্টেমে নিবন্ধিত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে : ঢাকার উত্তরা, খিলগাঁও, গুলশান এবং সাভার সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, চট্টগ্রামের আনোয়ারা এবং পাহাড়তলী, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা, কুষ্টিয়ার কুমারখালী, টাঙ্গাইলের বাসাইল এবং নাগরপুর, রাজশাহীর চারঘাট, সিলেটের তাজপুর, দিনাজপুরের চিরিরবন্দর, ময়মনসিংহের নান্দাইল এবং বরিশালের হিজলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস। ২০২১ সালের ১০ জুন থেকে ২০২৩ সালের ১৩ জুন পর্যন্ত ১৭টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের ৭৮ হাজার ১৯৫টি দলিল ই-রেজিস্ট্রশন সিস্টেমে নিবন্ধিত হয়।

নিবন্ধন অধিদফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (নিবন্ধন) মো. আবদুস সালাম আজাদ আলোতি বাংলাদেশকে বলেন, ভূমি নিবন্ধন ব্যবস্থাপনা ডিজিটালাইজেশনের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্প’ সফলতার সঙ্গে সমাপ্ত হওয়ায় পরবর্তী সারা দেশে ভূমি অনলাইন রেজিস্ট্র্র্র্রেশন চালুর সিদ্ধান্ত নেয় আইন মন্ত্রণালয়। এজন্য নতুন করে উন্নয়ন প্রকল্প পরিকল্পনা-ডিপিপি তৈরি করা হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে আছে। প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে সারা দেশে ভূমি রেজিস্ট্রেশন অনলাইনভিত্তিক করা হবে। এতে মানুষের ভোগান্তি কমবে। একইসঙ্গে জমির মালিকানা নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি ভুয়া দলিল রেজিস্ট্রেশন দূর হবে।

ভূমি নিবন্ধন ব্যবস্থা ডিজিটালাইজেশনে সফটওয়্যার ব্যবহারের সাব-রেজিস্ট্রি অফিসগুলোতে কাগজের ভলিউমে দলিল রেজিস্ট্রির পরিবর্তে অনলাইনে দলিল রেজিস্ট্রি ও রেকর্ড সংরক্ষণ কার্যক্রম প্রকল্পটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে আটকে যাওয়ায় বেশিদূর এগোতে পারেনি রেজিস্ট্রি বিভাগ। তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জমির মালিকানা, খতিয়ান, জাতীয় পরিচয়পত্র ইত্যাদি অনলাইনে অটোমেটিক যাচাই এবং বায়োমেট্রিক টিপ গ্রহণ করে দলিল অনলাইনে রেজিস্ট্রি ও রেকর্ড সংরক্ষণ করা যাবে। ফলে সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ে শৃঙ্খলা আসবে ও জাল-জালিয়াতি প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। এতে রেজিস্ট্রি সেবা গ্রহণে মানুষের হয়রানি, সময় ও খরচ এবং আদালতে জমি-জমাসংক্রান্ত মামলা-মোকদ্দমা কমবে।