ওলামা লীগের প্রতিষ্ঠা সাল নিয়ে ধূম্রজাল

প্রকাশ : ১৯ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রাহাত হুসাইন

২০২৩ সালের ২০ মে সব পক্ষ নিয়ে ত্রিবার্ষিকী সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগ। সম্মেলন হলেও এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সহযোগী বা সমমনা সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি ওলামা লীগ। ‘সমর্থক’ সংগঠন হিসেবেই সাংগঠনিক তৎপরতা চালাচ্ছেন ওলামা লীগের নেতাকর্মীরা।

সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বিশেষ অতিথি ছিলেন দলটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। সম্মেলনের মাধ্যমে পুনরায় আওয়ামী লীগের দাপ্তরিক স্বীকৃতি পায় সংগঠনটি। সম্মেলনের ২৫ দিন পর ওলামা লীগের কমিটি গঠন করা হয়। ঘোষিত কমিটি নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারেননি ওলামা লীগের একটি অংশ। তারা পাল্টা কমিটি করে। পৃথক পৃথক চলে সংগঠনটির দুই অংশের কার্যক্রম। তবে বাধ সেধেছে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন নিয়ে। ওলামা লীগের প্রতিষ্ঠা সাল নিয়েও বিপরীত অবস্থান নিয়েছে দুই পক্ষ। এতে বিভ্রান্তিতে পড়েন সংগঠনটির তৃণমূলের কর্মীরা। ওলামা লীগের একটি অংশ বলছে প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন হবে আসছে ২০ মে। অপর একটি অংশ বলছে ৫৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কথা। ঢাকায় লেগেছে পাল্টাপাল্টি পোস্টার-লিফলেটও। এত করে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। ২০২৩ সালের ২০ মে ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের দিনটিকে প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের উদ্যোগ নিয়েছেন সংগঠনের একটি অংশের নেতাকর্মীরা।

প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে থাকার কথা রয়েছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের। এ নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পোস্টারও সাঁটিয়েছে তারা। তবে প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের মাধ্যমে ‘ওলামা লীগের অতীত ইতিহাস মুছে ফেলার চক্রান্ত হচ্ছে’ বলে পাল্টা বিবৃতি দিয়েছে সংগঠনের আরেক অংশের সভাপতি দাবি করা আলহাজ কাজী মাওলানা মোহাম্মদ আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী। বিবৃতিতে তিনি বলেন, গত বছরের ২০ মে বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগের ত্রি-বার্ষিকী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের তারিখকে প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বলে ‘ওলামা লীগের অতীত ইতিহাস মুছে ফেলার চক্রান্ত হচ্ছে করা হচ্ছে।’ ১৯৬৬ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ‘আওয়ামী উলামা পার্টি’ নামে সংগঠনটি যাত্রা শুরু করে। পাকিস্তান আমলে ‘আওয়ামী উলামা পার্টি’ পূর্ব-পাকিস্তানে ছয় দফার পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে দেশব্যাপী কাজ করা হয়। তখন উলামা পার্টির নেতা ছিলেন মাওলানা অলিউর রহমান। এরপর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ‘ওলামা লীগ’ নবরূপে যাত্রা শুরু করে। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে ২০০১-২০০৭ সাল পর্যন্ত; ওলামা লীগের নেতাকর্মীরা রাজপথে থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, যা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ছাপা হয়েছে।

জানতে চাইলে মাওলানা আবুল হাসান বলেন, ‘আমরা ৫৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করব। এজন্য লিফলেট ছাপিয়ে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বিতরণ করা হয়েছে। যারা ওলামা লীগ নিয়ে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করছে, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।’

ওলামা লীগের বর্তমান সভাপতি ড. আব্দুল মমিন সিরাজী আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগের নামকরণ করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সারাদেশে ওলামা লীগকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য গত বছরের ২০ মে সম্মেলনের পর থেকে আমরা এক বছরে পদার্পন করেছি। মূলত এই সংগঠনটি সৃষ্টি হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে। ১৯৬৬ সালের ১৩ এপ্রিল ‘উলামা পার্টি’ নামে এই সংগঠনের জন্ম হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ‘ওলামা লীগ’কে সুসংগঠিত করতে অনেককে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তারা সেভাবে ওলামা লীগকে সংগঠিত করতে পারেননি। ৮ থেকে ১০ জন ওলামা লীগের সভাপতির দাবি করে ভিজিটিং কার্ড নিয়ে ঘুরতেন। বিভিন্ন চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্যদিয়ে ২০২৩ সালের ২০ মে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে একটা সফল সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

বিশেষ অতিথি ছিলেন দলটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। ড. আবদুস সোবহান গোলাপ আমাদের ওলামা লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করতে নির্দেশ দেন। তার নির্দেশে আমরা ২০২৩ সালের ২০ মে প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করতে যাচ্ছি। আমরা মনে করি, গত বছরের ২০ মে ওলামা লীগ পুনঃপ্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। পুনঃপ্রতিষ্ঠার তারিখে প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সভাপতির সম্মতি আছে বলে আমরা মনে করি। তবে ৫৮ বছর আগেই এই সংগঠন বঙ্গবন্ধুর হাতে সৃষ্টি হয়েছে।