এসএমই মেলা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

শিল্প খাত পরিবেশবান্ধব হওয়া উচিত

দেশের অগ্রযাত্রায় উদ্যোক্তা সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই

প্রকাশ : ২০ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

শিল্প খাত পরিবেশবান্ধব হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘যারা শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবেন, অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন যেন; শিল্পের বর্জ্য নদীতে না পড়ে। পানি যেন কোনো রকম দূষিত না হয়। সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখার জন্য আমি অনুরোধ জানাচ্ছি। আমাদের শিল্প খাতকে পরিবেশবান্ধব করতে চাই।’

গতকাল সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সাত দিনব্যাপী ১১তম জাতীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) মেলা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত এই মেলা চলবে ২৫ মে পর্যন্ত। মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

দেশের সবকিছু পরিকল্পিতভাবে হওয়া উচিত জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ভৌগোলিক সীমারেখায় আমাদের দেশ অত্যন্ত ছোট, কিন্তু জনসংখ্যার দিক দিয়ে বড়। সে ক্ষেত্রে দেশের পরিবেশসহ সবকিছু পরিকল্পিতভাবে হওয়া উচিত, স্বাস্থ্যসম্মত হওয়া উচিত। শিল্প বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অবশ্যই সবাইকে করতে হবে। সামান্য একটু কেমিক্যালের পয়সা বাঁচাতে গিয়ে দেশের সর্বনাশ, নিজের সর্বনাশ করবেন না। আমরা চাই শিল্প গড়ে উঠুক। পাশাপাশি পরিবেশের দিকেও দৃষ্টি দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি খুব আনন্দিত কেননা আজকের এসএমই পণ্য মেলায় দেখা যাচ্ছে উদ্যোক্তা ৬০ শতাংশই নারী। সমাজের একটা অংশকে বাইরে রেখে সেই সমাজ কখনো এগিয়ে যেতে পারে না। আমাদের দেশের নারী-পুরুষ সকলকেই যদি আমরা উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরী করতে পারি তাহলে সমানভাবে দেশটা দ্রুত উন্নত হবে। এজন্য নারী উদ্যোক্তা আমাদের দরকার। শিল্প মন্ত্রণালয় এবং এসএমই ফাউন্ডেশন থেক নারী উদ্যোক্তাদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে; পুরুষরাও ঘরের নারীদের (স্ত্রী-কন্যা-বোন) নামে, তাদের সঙ্গে নিয়ে এখানে যুক্ত হতে পারেন।

তিনি বলেন, কেন না অন্যত্র তো আর ৪ শতাংশ সুদে ঋণ পাওয়া যাবে না। কাজেই পুরুষরা বিশেষ করে আমাদের যুব সমাজ এই সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেন। কারণ, আমরা চাই আমাদের শিল্প খাতে আরো উদ্যোক্তার সৃষ্টি হোক। দেশের অগ্রযাত্রায় নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই। তরুণসমাজ, যুবসমাজকে এটাই বলব, কোনোরকম একটা পাস করে চাকরির পেছনে না ছুটে নিজে উদ্যোক্তা হয়ে উঠুক। নিজেকে নিজের চাকরি দেয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে সরকারের দেওয়া সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, স্টার্টআপ প্রোগ্রামে আমরা বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে। আলাদা বাজেট থাকছে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে আমরা যে সুযোগ সুবিধা দিচ্ছি ছেলেমেয়েদের সেটা গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে হবে। বিশেষ করে নারীদের আরো উদ্যোক্তা হতে হবে।

সরকারপ্রধান বলেন, ২০০৭-০৮ অর্থবছরের জিডিপিতে শিল্পখাতের অবদান ছিল ১৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ সেখানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে ৩৭ দশমিক ৫৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে এবং অর্থনীতির প্রায় প্রতিটি সুচকে বাংলাদেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৭৯৬ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা বিএনপির শাসনামলে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ছিল মাত্র ৫৪৩ মার্কিন ডলার। বক্তব্যে রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ এবং গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা ফলে বিশ্ব অর্থনীতির নাজুক পরিস্থিতির কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

শিল্পক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আরো কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে চাই। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে মাথায় রেখে আমাদের আরো উদ্যোক্তা এবং কাজের লোক প্রয়োজন পড়বে। আমাদের দেশের মানুষকে কাজ দিতে হবে। আমরা যখন পদক্ষেপ নেব, সে সময় বিশেষ করে শিল্প মন্ত্রণালয় ও এসএমই ফাউন্ডেশনকে খেয়াল রাখতে হবে যে, শ্রমঘন শিল্প যেন আমাদের দেশে গড়ে ওঠে।

শ্রমবান্ধব কর্মপরিবেশ সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, শ্রমিকদের বিষয়ে সবাইকে আন্তরিক হতে হবে। আপনি যদি বেশি কাজ চান, তাহলে তাদের সেই কর্মপরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। শুধু হুকুম দিয়ে হয়না। হুকুম দিয়ে যা অর্জন করতে পারবেন, ভালোবাসা দিয়ে পারবেন তারচেয়ে অনেক বেশি। আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করে আরো বেশি কাজ করিয়ে নিতে পারবেন। সেদিকে অবশ্যই সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে।

রপ্তানি বাজারে হস্তশিল্পের চাহিদার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশে হস্তশিল্পের আলাদা কদর আছে, সেটাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে। রপ্তানি বহুমুখীকরণ করতে হবে, পাশাপাশি দেশের ভেতরে অভ্যন্তরীণ বাজার যাতে সৃষ্টি হয়, সেজন্য দারিদ্র্য বিমোচন করে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানো। এসএমই খাতের উন্নয়নে আমাদের ঐতিহ্যবাহী পণ্যের পাশাপাশি উন্নত বিশ্বে ভোক্তাদের চাহিদানুযায়ী শতভাগ রপ্তানিমুখী পণ্য উৎপাদনে আরো মনোনিবেশ করতে হবে। কেন না, এখন ইকোনমিক ডিপ্লোমেসির যুগ। সেভাবেই বহিঃবিশ্বে আমাদের দূতাবাসগুলোকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। যে যেখানে অবস্থান করছেন, সেখানকার চাহিদানুযায়ী পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করার প্রচেষ্টা এবং বিনিয়োগ নিয়ে আসার প্রচেষ্টার ওপরও জোর দেন তিনি।

তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস দেশীয় এসএমই শিল্পের উন্নয়নে এই মেলা ক্রমান্বয়ে আন্তর্জাতিক মাত্রা পাবে এবং এরফলে দেশীয় পণ্যের প্রসারও ঘটবে। নতুন নতুন শিল্প স্থাপন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখবে বলেও আমি বিশ্বাস করি। আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা যারা তাদের প্রতিই আমি মনে করি বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কারণ তারাই একসময় বড় শিল্পে পরিণত হবে। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার অনুযায়ী শিল্প মন্ত্রণালয় প্রণীত ২০২৪ থেকে ২০২৮ কর্মপরিকল্পনার ওপর রচিত একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী এ উপলক্ষ্যে বেশ কিছু ক্ষুদ্র, মাঝারি ও স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের হাতে ক্রেস্ট ও অ্যাক্রিডিটেশন সার্টিফিকেটসহ জাতীয় এসএমই পুরস্কার-২০২৩ হস্তান্তর করেন।

শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা, এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম এবং এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. মো. মাসুদুর রহমান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। এবারের মেলায় সাড়ে তিন শতাধিক কোম্পানি অংশগ্রহণ করছে।