১৫৭ উপজেলায় নির্বাচন কাল

প্রকাশ : ২০ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ১৫৭টি উপজেলা ভোটগ্রহণ আগামীকাল অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীন ভোটগ্রহণ চলবে। ভোট উপলক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

সংশ্লিষ্টরা জানান, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কিছু দল অংশগ্রহণ না করায় প্রথম ধাপে ভোট কম পড়েছে। এ ধাপেও ভোটার উপস্থিতি কম হতে পারে। তবে ইসি বলেছে, ধানকাটার মৌসুম হওয়ার কারণে ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছিল।

জানা যায়, উপজেলা ভোটে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর বিষয়ে ইসি কোনো উদ্যোগ না নিলেও ভোট সুষ্ঠু করার বিষয়ে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। নির্বাচন উপলক্ষ্যে ১৫৭ উপজেলায় তিন দিনের (৭২ ঘণ্টা) জন্য মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইসি। একই সঙ্গে ভোটের আগে পরে ২৪ ঘণ্টার জন্য ট্যাক্সি ক্যাব, পিক আপ, মাইক্রোবাস, ট্রাক বন্ধ থাকবে। ভোটারদের যাতায়াত সুবিধার্থে সীমিত বাস চলাচল থাকবে। ভোটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পর্যাপ্ত পরিমাণে নিয়োজিত থাকবে।

প্রথম ধাপের ভোটের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছিলেন, সহিংসতা নয় বৃষ্টি ও ধানকাটার মৌসুম হওয়ায় প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছে। প্রথম ধাপে ১৩৯টি উপজেলায় শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। বর্যা ও ধান কাটার মৌসুম হওয়ায় অপেক্ষাকৃত কম ভোট পড়েছে। ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে সিইসি বলেন, বর্ষার কারণে অনেকে ভোট সেন্টারে আসতে পারেননি। এছাড়া এখন ধান কাটার মৌসুম চলছে। এ কারণেও ভোট কম পড়েছে। আমাদের কাছে এমনটাই মনে হয়। তিনি বলেন, কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। তেমন কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। মোটামুটিভাবে শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে।

এদিকে গতকাল নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে ভোট বর্জনের আহ্বান করতে পারে। সেটি তাদের রাজনৈতিক অধিকার। তবে তারা সহিংসতা করতে পারবে না।

এ সময় তিনি আরো বলেন, সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও ভোটের হার বাড়ার নিশ্চয়তা নেই। ভোটের হার কম হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। জাতীয় নির্বাচন ও প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন যেহেতু শান্তিপূর্ণ হয়েছে, তাই এবারও শান্তিপূর্ণ হবে বলে আশা করি।

গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনের সার্বিক বিষয়ে ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। তিনি বলেন, সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে ভোটের হার বাড়বে তাও বলা যায় না। ভোটের হার কম হওয়ার পেছেনে অনেকগুলো ফ্যাক্টর কাজ করে। অনাস্থা নিয়ে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর একের প্রতি অপরের অনাস্থা থাকতে পারে। তবে নির্বাচন কমিশনের ওপর কারো অনাস্থা নেই। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, দেশের রাজনীতি পরিবার কেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে বিভাজন দেখা যাচ্ছে। দলের পতাকা না হলেও কে কোন দলের, জনগণ জানে। মানুষের মধ্যে যেনো ভোটের বিষয়টি হারিয়ে যাচ্ছে, যে ভোট হলেই কী আর না হলেই কী। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন কখনো প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয় না। যেসব দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না, কেন অংশ নিচ্ছে না, সেই অচলাবস্থার কোনো সমাধান করা হচ্ছে না। বর্তমানে ভোট হচ্ছে একদলীয় প্রার্থীদের মধ্যে। ভোটের মূল্যায়ন যেহেতু হচ্ছে না; তাই মানুষ ভোট দেওয়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। তিনি বলেন, বর্যা ও ধানকাটার জন্য ভোট কম পড়েছে এটি উদাহরণ হতে পারে না। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটানো না গেলে আগামীতে নির্বাচনি ব্যবস্থা ভেঙে যাবে। আর এ দায় ক্ষমতাসীন দলকেই নিতে হবে। দলগুলোর দিকে তাকিয়ে না থেকে কমিশনকেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক করার সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দিতে হবে। ইসি ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী, তৃতীয় ধাপে ১১২ উপজেলায় ২৯ মে ও চতুর্থ ধাপে ৫৫ উপজেলায় ৫ জুন ভোটগ্রহণ হওয়ার কথা রয়েছে।