দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচন

১৫৬ উপজেলায় ভোটগ্রহণ আজ

ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো ইসির জন্য বড় চালেঞ্জ

প্রকাশ : ২১ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দ্বিতীয় ধাপে ১৫৬টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ হবে আজ। ভোট উপলক্ষে সব প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রথম ধাপে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ায় দ্বিতীয় ধাপে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো ইসির জন্য এখন বড় চালেঞ্জ।

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, উপজেলা নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আগের চেয়ে বেশিসংখ্যক অস্ত্রধারী পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে। এ ধাপের নির্বাচনে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, কোস্ট গার্ড ও আনসারের প্রায় ৩ লাখ সদস্য মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্থানীয় পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রশাসনের চাহিদা অনুযায়ী ১৬টি উপজেলায় নির্দিষ্ট হারের চেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাড়তি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে ১২ হাজার ৩২৩টি কেন্দ্রে ভোটের দিন সকালে ব্যালট পেপার পাঠানো হচ্ছে। শুধু দুর্গম, পাহাড়ি ও চরাঞ্চল বিবেচনায় ৬৯৭ কেন্দ্রে গত কাল সোমবার ব্যালট গিয়েছে। প্রথম ধাপের চেয়ে এ ধাপের ভোট আরো সুষ্ঠু হবে বলে গত রোববার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে। ছোটোখাটো যেসব সমস্যা মাঠে আছে, সেগুলো যাতে না হয়, সেজন্য পুলিশ ও প্রশাসন অত্যন্ত সতর্ক রয়েছে। আশা করি, দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন প্রথম ধাপের চেয়েও সুষ্ঠু হবে।’

নির্বাচন পরিচালনা শাখা জানায়, দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে ১ হাজার ৮২৪ জন প্রার্থী রয়েছেন। তাদের মধ্যে চেয়ারম্যান ৬০৩, ভাইস চেয়ারম্যান ৬৯৩ এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ৫২৮ জন রয়েছেন। নির্বাচনে ভোটার ৩ কোটি ৪২ লাখ। ভোটকেন্দ্র ১৩ হাজার ১৬টি এবং ভোটকক্ষ ৯১ হাজার ৫৮৯টি। এ নির্বাচনে সাতজন চেয়ারম্যানসহ ২২ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ওই সব পদে ভোট হবে না।

নির্বাচনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ৩ লাখ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৯৩ হাজার আনসার, ৮৯ হাজার ৮৬৩ জন পুলিশ, ২ হাজার ৭৬৮ জন র‌্যাব এবং ৪৫৮ প্লাটুন বিজিবি সদস্য রয়েছেন। স্বাভাবিক এলাকার ভোটকেন্দ্রের পাহারায় ১৭ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮ থেকে ১৯ জন সদস্য মোতায়েন থাকবেন। গতকাল নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর বলেছেন, ভোটের হার বেশি হলে আমরা খুশি। কিন্তু না হলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নাই। প্রথম ধাপে ভোট শান্তিপূর্ণ হলে ভোট পড়ার হার ছিল ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করবে। ভোটাররাও আগের নির্বাচন যেহেতু শান্তিপূর্ণ হয়েছে, তাই দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে স্বাচ্ছন্দ্যে ভোট দিতে পারবে।

ধানকাটা তো শেষ, এখনো কি ভোট কম পড়বে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনারা যেভাবে বলছেন বিষয়টাতো এ রকম নয়। আরো তো কারণ আছে। ভারতের যে নির্বাচন হচ্ছে সেখানে সব দলগুলো অংশ নিয়েছে। তারপরও ৬০ শতাংশের মতো ভোট পড়েছে। আমাদের যে প্রথম ধাপের নির্বাচন হলো ওইদিন সকালে বৃষ্টি ছিল, ধান কাটা ছিল, একটি বড় দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এই তিনটা কারণ তো আছেই। এছাড়া আরো অন্যান্য কারণ আছে, সেগুলো হয়তো আমরা জানি না। আবার স্থানীয় নির্বাচনে অনেকেই কর্মস্থল থেকে এসে ভোট দিতে চান না। এটাও একটা কারণ।

ভোটের হার দিন দিন নিচে নামছে, এর দায় আপনারা দলগুলোর ওপর দিচ্ছেন, ইসির কোনো দায় আছে কি- এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি আলমগীর বলেন, আমাদের প্রথমেই দায় দিতে হবে ভারতের ওপর। কেন না, সেখানে সব দল অংশ নিচ্ছে, নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই, নির্বাচন কমিশনের আন্তরিকতা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই, কোনো বিতর্কও নেই। কিন্তু সেখানে ৬০ শতাংশ ভোট পড়ছে। তাহলে এখানে কি নির্বাচন কমিশন দায়ী। সেটা আপনারা যদি বলতে পারেন ভারতের নির্বাচন কমিশন দায়ী, তাহলে আমরাও দায়ী। তাদের দায়ী না করলে আমরাও দায়ী না।

তাদের গণতন্ত্র আর আমাদের গণতন্ত্র কি এক- এ বিষয়ে মো. আলমগীর বলেন, তাদের গণতন্ত্র, আমাদের গণতন্ত্র একই। সংবিধানও অনেকটা একই রকম। ভারতে যে কারণে ভোটের হার কমে যাচ্ছে আমাদের এখানেও একই কারণ। শুধু বাংলাদেশ নন সারা পৃথিবীতেই একই রকম। এটা কেন হচ্ছে তা গবেষণার বিষয়।

সাবেক এই ইসি সচিব বলেন, ভোট পড়ার হার কম হওয়ার জন্য দায়ী কমিশনও না, অন্য কেউও না। কারণ হলো যে বিভিন্ন কারণে ভোটাররা ভোট দিতে চান না।

দ্বিতীয় নির্বাচনে কেমন কাস্টিং হতে পারে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২১ মে কেমন আবহাওয়া থাকবে, প্রার্থীর জনপ্রিয়তা কেমন এসবের ওপর নির্ভর করবে। ভোটের হার বেশি হলে আমরা খুশি, কিন্তু নাহলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।

সন্তুষ্টি নিয়ে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমরা সবটাতেই সন্তুষ্ট। কেন না, ভোটের হার টার্গেট করা নেই। ফ্রান্সের নির্বাচনে যেমন বলা আছে এত শতাংশ ভোট না পড়লে আবার নির্বাচন হবে। তুরস্কে আছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই আছে এর কম। তাদের সংবিধানে যেটা বলে দিয়েছে যে এত শতাংশ ভোট পড়তে হবে, সেটা না হলে ফের নির্বাচন হবে। আমাদের এ রকম আইন নেই। তাই যে হার হলেই আমরা খুশি।

ভোটের হার বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা ইসির কাজ না। অনেক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আছে যারা স্থানীয় সরকার নিয়ে কাজ করে, তারা গবেষণা করে প্রতিবেদন সরকারের কাছে দেবে। আমাদের গবেষণা করার দক্ষতা বা সক্ষমতা নেই। আমরা গবেষণা করলে সেই গবেষণা তো আপনারা বিশ্বাস করবেন না। গবেষণা করতে হবে তৃতীয় পক্ষ থেকে।

এদিকে উপজেলা নির্বাচনে নিরেপেক্ষতা ক্ষুন্ন হওয়ায় বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট মডেল থানার ওসি ও জেলার ডিবির ওসিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন ইসি।

ইসির উপসচিব মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠির মাধ্যমে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজির বরাবর এই নির্দেশনা পাঠানো হয়। ইসি জানায়, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ সাধারণ নির্বাচন-২০২৪ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ জনাব আশরাফুল আলম এবং বাগেরহাট জেলার ডিবির ওসি স্বপন রায়কে খুলনা পুলিশ রেঞ্জে সংযুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সেই সাথে নির্বাচনের সময় পর্যন্ত সংযুক্ত করে উক্ত কর্মকর্তাদ্বয়ের পরবর্তী কোন কর্মকর্তাকে ফকিরহাট মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ এবং ডিবির ওসি’র দায়িত্ব প্রদানের জন্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন।