মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযান নিয়ে প্রশ্ন

‘চার পুরিয়া গাঁজা এজাহারে চার কেজি’

* অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে খোদ এজারের সাক্ষীরাও * প্রবাসফেরত জাহাঙ্গীরের ‘ছকে’ অভিযান অভিযোগ স্ত্রীর * পিতা-পুত্র কারাগারে

প্রকাশ : ২১ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার হলদিয়া পালংয়ের জোলারপাড়ায় ৪ কেজি গাঁজা দিয়ে বাবা-ছেলেকে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় জাহাঙ্গীর নামের এক ব্যক্তির সাথে যোগসাজস করে কক্সবাজার মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিদর্শক তন্তু মনি চাকমা এ কাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী পরিবার। এ ফাঁসানোর ঘটনায় চেহের আলী এবং তার ছেলে আলমগীর বর্তমানে কারান্তরিণ।

ওই অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া তন্তু মনি চাকমার বিরুদ্ধে এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা লুটেরও অভিযোগ করেছেন অভিযোগকারীরা। এই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক সমালোচনা চলছে।

অভিযোগকারী পরিবারের সদস্যরা জানান, গেল ১৫ মে ভোর ৬টার দিকে তন্তু মনির চাকমার নেতৃত্বে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি দল চেহের আলীর বাড়িতে অভিযানে যান। তারা চেহের আলির বাড়িতে ঢুকে তল্লাশি শুরু করে। এ সময় বাড়ি থেকে একটি ছোট পুটলিতে চার পুরিয়া গাঁজা পান, যা চেহের আলী সেবনের জন্য রেখেছিল। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে সেই সামান্য চার পুরিয়া গাঁজা পরে চার কেজিতে রূপ নেয়। চার কেজি গাঁজা উদ্ধারে কথা উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেছেন উপ-পরিদর্শক তন্তু মনি চাকমা। গ্রেপ্তার চেহের আলীর স্ত্রী দিলওয়ারা বেগম অভিযোগ করেন, তন্তু মনি চাকমার নেতৃত্বে আকস্মিক একদল সাদা পোশাকের লোক বাড়িতে ঢুকে তল্লাশি শুরু করে। বাড়িতে ঢুকেই তারা ভয় দেখিয়ে আলমিরা ও খাটের বক্সের চাবি নেয়। পরে চাবি দিয়ে বক্সের ভেতর রক্ষিত চেহের আলীর সেবনের চার পুরিয়া গাঁজা পায়, যার পরিমাণ ৫০ গ্রামের মতো। এ সময় তাদের ছোট ছেলের বিদেশ যাওয়ার জন্য রক্ষিত দিলওয়ারা বেগম ও তার ছেলে আলমগীরের কক্ষ থেকে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে নেয় তন্তু মনি চাকমা।

দিলোয়ারা বেগম আরো অভিযোগ করেন, তার ছেলে আলমগীরকে সৌদি আরব নিয়ে যাওয়া নিয়ে স্থানীয় প্রবাসী জাহাঙ্গীর আলমের সাথে তাদের দীর্ঘদিনের চরম বিরোধ চলে আসছে। এই ঘটনায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মামলা করে চেহের আলীর পরিবার। জাহাঙ্গীর উচ্চ আদালত থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নিয়ে গত ১৫ মে স্থায়ী জামিন নিতে নিম্ন আদালতে যাওয়ার দিন ছিল। সেখানে চেহের আলীর পরিবার জামিনা বিরোধিতা করার সম্ভাবনার কথা জানতে পেরে জাহাঙ্গীর আলম মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিদর্শক তন্তু মনি চাকমার সাথে যোগসাজস করে ৪ কেজি গাঁজা দিয়ে ১৫ মে ভোরে চেহের আলী ও তার ছেলে আলমগীরকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। তারা কারান্তরীণ হয়ে আদালতে যেতে না পারায় তাদের সাথে বিরোধ থাকা জাহাঙ্গীর বিনা বাধায় জামিন পেয়েছে।

অন্যদিকে, অভিযানে চেহের আলীর ছেলেকে বিদেশ পাঠানোর জোগাড় করা ১ লাখ ৩৫ হাজার তন্তু মনি চাকমা নিয়ে গেলেও গাঁজা উদ্ধারের এজাহারে উল্লেখ করেছেন মাত্র ৫ হাজার টাকা। বাবা-ছেলেকে আটক করে রাস্তায় নিয়ে ২ লাখ টাকা দিলে ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাবও দেন তন্তু মনি চাকমা।

এই অভিযানের মামলায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দল প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সাক্ষী করেছেন স্থানীয় তৈয়ব আলী প্রকাশ আবু তাহের এবং মোহাম্মদ আসাদ উদ্দিন খুলুকে।

কিন্তু তারা গণমাধ্যমকে বলেছেন, ৪ কেজি গাঁজা নয়, চার পুরিয়া গাঁজা পেয়েছিল অভিযানকারীরা। কিন্তু এজাহারে চার কেজি হলো কেন বুঝে আসছে না।

স্থানীয় মেম্বার সরওয়ার কামাল বাদশা প্রতিবেশীদের বরাত দিয়ে বলেন, চেহের আলী নিয়মিত গাঁজা সেবন করলেও ব্যবসা করেন না। দীর্ঘদিন ধরে তার গাঁজা সেবনের বিষয়টি ওপেন সিক্রেট। খোঁজ নিয়ে জেনেছি, চার কেজি গাঁজা উদ্ধারের তথ্যটি সঠিক নয়। কোনো কুচক্রী মহলের প্যাঁচে তারা বাবা-ছেলে ফেঁসে গেছেন বলে দাবি স্থানীয়দের।

তবে, অভিযোগ অস্বীকার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিদর্শক তন্তু মনি চাকমা বলেন, চেহের আলী বিরুদ্ধে আগেও গাঁজা-সংক্রান্ত মামলা রয়েছে। সাক্ষীদের উপস্থিতিতেই তাকে গাঁজাসহ গ্রেপ্তার করা হয়।

কিন্তু গণমাধ্যমকে সাক্ষীদের দেয়া বক্তব্য বিষয়ে তাকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে, তিনি কথা ঘুরিয়ে বদলির আবেদন করেছেন উল্লেখ করে অসংলগ্ন কথা বলেন।

এ বিষয়ে জানতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সিরাজুল মোস্তফার সরকারি মুঠোফোনে কল দেয়া হয়। রিসিভ না করায় খুদে বার্তা পাঠানো হয়, তারও উত্তর করেননি।

ঘটনাটি অধিকতর তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সেহের আলীর পরিবার ও এলাকাবাসী।