জোড়াতালিতে চলছে বিএনপি

প্রকাশ : ২২ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আমিরুল ইসলাম অমর

প্রায় দেড় যুগ ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির সর্বশেষ জাতীয় নির্বাহী কমিটির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ। গত ১৯ মার্চ কাউন্সিলের ৮ বছর পূর্ণ হয়। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৩ বছর পর পর কাউন্সিল করার বিধান রয়েছে। ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর ৪৬ বছরে বিএনপিতে কাউন্সিল হয়েছে ছয়বার। এরই মধ্যে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, আ স ম হান্নান শাহ, তরিকুল ইসলাম ও সাদেক হোসেন খোকাসহ অনেক সিনিয়র নেতা মারা গেছেন। বার্ধক্যজনিত কারণে খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াসহ অনেকে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। এছাড়া দীর্ঘদিন দলটি ক্ষমতার বাইরে থাকায় অনেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে আছেন। আবার অনেকে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেও যোগ্যতা অনুযায়ী পদণ্ডপদবি পাচ্ছেন না। এরই মধ্যে জাতীয় কাউন্সিল ছাড়াই মেয়াদোত্তীর্ণ কেন্দ্রীয় কমিটিতে মাঝেমধ্যে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কাউকে কাউকে দলের বিভিন্ন পদে পদায়ন করা হচ্ছে।

সর্বশেষ গত ২১ ফেব্রুয়ারি ঝালকাঠি জেলা বিএনপির সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম জামালকে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এতে দলের অভ্যন্তরে আরো আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়, যার ফলশ্রুতিতে চরমভাবে ক্ষুব্ধ হচ্ছেন পদবঞ্চিতরা। অনেকে এটাকে জোড়াতালি দিয়ে দল চালানোর সঙ্গেও তুলনা করে থাকেন। সুতরাং কাউন্সিল ছাড়াই প্রায় ৯ বছর ধরে জোড়াতালি দিয়ে চলছে দেশের রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও দলটির পরবর্তী কাউন্সিল কবে হবে তা জানা নেই কারো। দলের নেতাকর্মীদের দাবি, আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রামকে গতিশীল করতে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব জরুরি। এক্ষেত্রে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিও পুনর্গঠন করতে হবে। অযোগ্য ও বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামে পরীক্ষিত যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের নিয়ে ঢেলে সাজাতে হবে কেন্দ্রীয় কমিটি। এ জন্য কাউন্সিল করার তাগিদ মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের। একাধিক সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র মতে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুসারে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর ৩ বছর পর পর জাতীয় কাউন্সিল করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও বিএনপি তা তোয়াক্কা করছে না। করোনাকালে কাউন্সিলের জন্য সময় বৃদ্ধির আবেদন করলেও এখন পর্যন্ত দলের নেতারা এ নিয়ে কিছু ভাবছে না। তাই ইসি আইন অনুসারে যে কোনো সময় বিএনপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে। এটি জানার পরও বিএনপি হাইকমান্ড দলের কাউন্সিলের চিন্তা না করে নতুন করে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিচ্ছে। অথচ যোগ্যতা থাকার পরও যুগ যুগ ধরে কেন্দ্রীয় কমিটির পদ পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন যারা তাদের পদ দেওয়া হচ্ছে না বলে জানা যায়।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে না আসায় বিএনপি কিছুটা নিবন্ধন ঝুঁকিতে রয়েছে। কারণ, কোনো কারণে আর একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলেই আরপিও অনুসারে দলটির নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বেশ কয়েকদফা জাতীয় কাউন্সিল করার কথা দলীয় শীর্ষ পর্যায় থেকে হলেও শেষ পর্যন্ত আর তা করার চেষ্টা করেনি বিএনপি। অবশ্য এরপর করোনাকালে নির্বাচন কমিশন থেকে জাতীয় কাউন্সিল করতে সময় বাড়িয়ে নেয় তারা। তবে করোনা পরিস্থিতি ভালো হলে জাতীয় কাউন্সিল করবে বলে নির্বাচন কমিশনকে জানালেও পরে সার্বিক পরিস্থিতি অনুকূলে থাকার পরও আর জাতীয় কাউন্সিল করেনি বিএনপি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি গণতন্ত্রের কথা বলে রাজনীতি করলেও তাদের দলেই গণতন্ত্র নেই। তাই তারা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) তোয়াক্কা করছে না। দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরাও বারবার জাতীয় কাউন্সিলের দাবি তুলছেন। কিন্তু বিএনপি হাইকমান্ড তাদের দাবি আমলে নিচ্ছেন না।

বিএনপির গঠনতন্ত্রেও ৩ বছর পর পর জাতীয় কাউন্সিল করার কথা উল্লেখ রয়েছে। সে হিসেবে ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ আগের কাউন্সিল হওয়ায় পরবর্তী কাউন্সিল ২০১৯ সালের ১৯ মার্চের মধ্যে হওয়ার কথা থাকলেও তারা তা করেনি। এরপর ২০২২ সালের ১৯ মার্চের মধ্যে আরো একটি কাউন্সিল হওয়ার কথা ছিল। দলের গঠনতন্ত্র এবং আরপিও কোনটারই তোয়াক্কা করছে না বিএনপি।

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দি থাকায় লন্ডনপ্রবাসী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রাজি না থাকায় যতবারই দলের কাউন্সিলের চেষ্টা হয়েছে, ততবারই সে চেষ্টা ব্যাহত হয়েছে। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাউন্সিল না হলে যে কোনো সময় দলের নেতাকর্মীরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে বিএনপির জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারেন বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন।

নির্ধারিত সময়ে কাউন্সিল করতে না পারার জন্য সরকারের দমন-পীড়ন ও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে দায়ী করছে বিএনপি। বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিলের প্রায় পাঁচ মাস পর ২০১৬ সালের ৬ আগস্ট স্থায়ী কমিটির ১৭ সদস্যসহ ৫০২ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি ঘোষণা করা হয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের ৭৩ সদস্যের নাম। তবে গত আট বছরের বেশি সময়ে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের অনেক নেতার মৃত্যু ঘটেছে। কেউ কেউ পদণ্ডপদবি থেকে বাদ পড়েছেন। সব মিলিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির অনেক পদ এখন শূন্য। বয়সজনিত কারণেও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন দলটির কোনো কোনো নেতা। বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটিতে বর্তমানে পদ রয়েছে ১৯টি। এর মধ্যেও পাঁচটি পদ খালি রয়েছে।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দি হন। এর আগে দলের নির্বাহী কমিটির বৈঠকে খালেদা জিয়া সর্বস্তরে দল গুছিয়ে জাতীয় কাউন্সিল করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। কিন্তু তার অনুপস্থিতিতে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করে বিএনপি।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে ভরাডুবির পর দলকে ঢেলে সাজাতে সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা জাতীয় কাউন্সিলের দাবি তুললেও লন্ডনপ্রবাসী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রাজি না থাকায় তখন জাতীয় কাউন্সিল করতে পারেনি বিএনপি। এরপর আরো কয়েক দফা দলের সিনিয়র নেতারা জাতীয় কাউন্সিলের দাবিতে সোচ্চার হন। সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরও দলের একাংশ জাতীয় কাউন্সিলের দাবি তুলে। কিন্তু তাদের দাবি আমলে নিচ্ছে না বিএনপির হাইকমান্ড।

বিএনপির কয়েকজন নেতার সাথে কথা হলে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর সবাই আশা করেছিলেন জাতীয় কাউন্সিল করে দলের সর্বস্তরে কমিটি পুনর্গঠন করা হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আগের জাতীয় কাউন্সিলের পর ৮ বছর পার হয়ে ৯ বছর চললেও আমরা জাতীয় কাউন্সিল করতে পারছি না। এ কারণে, অনেক যোগ্য নেতা কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসতে পারছে না। এতে আন্দোলন-সংগ্রামও বেগবান হচ্ছে না। তারা আরো জানান, দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে শূন্য থাকা অনেক পদ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কোনো কোনো পদে এখনো নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু দলের ত্যাগী নেতারা চান জাতীয় কাউন্সিলর পর শূন্য পদগুলো পূরণ করা হোক এবং যারা দলে নিষ্ক্রিয় তাদের বাদ দিয়ে সক্রিয় নেতাদের সম্পৃক্ত করা হোক।

এদিকে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, কাউন্সিলের আগে বিএনপিতে নেতৃত্বের পরিবর্তন নয়। তবে বিএনপির কাউন্সিল কবে, কীভাবে হবে, এ সম্পর্কে কোনো বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি।

বিএনপির একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেছেন, দল এখন আন্দোলনে ব্যস্ত, তবে আন্দোলনের সঙ্গে সঙ্গে সাংগঠনিক বিষয়টিও সম্পৃক্ত। আন্দোলন এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম একসাথেই চলবে। এরই অংশ হিসেবে আমরা দলের নেতৃত্বের পুনর্গঠনের বিষয়টি বিবেচনা করছি। বিএনপির এই নেতা বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যখন বলবেন তখনই কাউন্সিল করার জন্য প্রস্তুতি আছে। তবে বিএনপির একাধিক নেতা আভাস দিয়েছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বর নাগাদ তারা একটি সংক্ষিপ্ত কাউন্সিল করতে পারেন এবং সংক্ষিপ্ত কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতৃত্ব পুনর্গঠন করা হতে পারে।

সূত্রমতে, বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে গুছিয়ে নিতে এবং নতুনভাবে বিন্যস্ত করতে এবার জাতীয় কাউন্সিল করার চিন্তা করছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে জাতীয় কাউন্সিল নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। বৈঠকে অনেকেই কাউন্সিল করার পক্ষে অভিমত দিয়েছেন। খুব শিগগিরই কাউন্সিলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হতে পারে।

সূত্র জানা যায়, বিএনপিতে এখন নীতি-নির্ধারণী সংস্থা স্থায়ী কমিটিতে পাঁচ সদস্য পদ শূন্য রয়েছে। আবার অনেকে বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলামের মতো নেতারা এখন এতই অসুস্থ যে, তারা কোনো রাজনৈতিক দায়িত্ব পালনের মতো অবস্থায় নেই।

জানা গেছে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বয়কট করা রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি এবার দল পুনর্গঠন করে রাজপথে সক্রিয় হতে চায়। এ কারণে বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কমিটি দেওয়া হচ্ছে। জেলা-উপজেলায় মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোও হালনাগাদ করা হবে। এসব কর্মযজ্ঞের লক্ষ্য কেন্দ্রীয় কাউন্সিল, যা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই সম্পন্ন করতে চায় বিএনপি। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, আগামী মাসে ইদুল আজহার পরপরই বিএনপির পক্ষ থেকে কাউন্সিল অধিবেশনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করা হতে পারে।

দ্বাদশ নির্বাচনের মাস ছয়েক আগ থেকে নেতাকর্মীরা মাঠে ছিল। কিন্তু নির্বাচনের মাস খানেক আগ থেকে নেতাদের মাঠে পাওয়া যায়নি। এ সময় দেশব্যাপী ব্যাপক ধরপাকড় হয়েছে। বহু নেতাকর্মী এখনও কারাগারে। এমতাবস্থায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের মনোবল অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। তৃণমূল নেতারা জানান, বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে এবারে সরকারবিরোধী আন্দোলনে সফলতা আসেনি। উল্টো নেতাকর্মীদের উপর সরকারের দমনপীড়ন বেড়েছে।

অন্যদিকে অধিকাংশ পদধারী নেতা নিজেদের সুরিক্ষত রাখতে আন্দোলন ও দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন। এমন অবস্থায় আবারও সরকারবিরোধী আন্দোলনে যাওয়ার আগে দল পুনর্গঠন জরুরি হয়ে পড়েছে।

বিএনপির কাউন্সিল বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, এ বিষয়ে আমি কোনো কথা বলব না। দল যখন সিদ্ধান্ত নেবে, তখন আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেব। অভিযোগ আছে- বিএনপি জোড়াতালি দিয়ে চলছে, এ বিষয়ে গয়েশ্বর বলেন, কে কী বলল, সেটা দেখার বিষয় না। আমি এ বিষয়ে কোনো কথা বলব না।

দলটির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘কাউন্সিল করার চেষ্টা আছে। তবে চূড়ান্ত করে বলা যাচ্ছে না কবে হবে।’

কেউ কেউ বলে বিএনপি জোড়াতালি দিয়ে চালাচ্ছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির এই নেতা বলেন, যারা বলে তাদের জিজ্ঞেস করেন- কেউ মারা গেলে বা দলে না থাকলে দল কীভাবে চালায়? এটাকে কী জোড়াতালি বলে?

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাসসুজ্জামান দুদু আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে কাউন্সিল করা সম্ভব হচ্ছে না। ক্ষমতাসীনদের নির্যাতনে দলের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করাই কষ্টকর। এখনো অনেক নেতাকর্মী কারাগারে আছেন। প্রতিনিয়ত গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বন্দি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশের বাইরে। এরপরও সাংগঠনিক তৎপরতা চলছে। তবে নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না কাউন্সিল কবে হবে।

অনেকে অভিযোগ করে বিএনপি কাউন্সিল না করে জোড়াতালি দিয়ে দল পরিচালনা করছে- এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, দেশই তো জোড়াতালি দিয়ে চলছে। দেশে আইনের শাসন নেই। ভোটাধিকার নেই। দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতিতে দেশের মানুষ দিশাহারা। এমন পর্যায়ে একটি দল আর কী করবে। তবে, বিএনপি গঠনতন্ত্র মোতাবেক সঠিকভাবেই চালাচ্ছে।

বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। দেশের জনগণের কাছে বিএনপি জনপ্রিয় দল। সেই দলের নেতাকর্মীদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীনরা নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দি জীবনযাপন করছেন। তারেক রহমান চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেশের বাইরে আছে। এখনো অসংখ্য নেতাকর্মী কারাগারে আছেন। এমন পরিস্থিতিতে কাউন্সিল করা কষ্টকর, তারপরও কাউন্সিল করার প্রাথমিক প্রস্তুতি চলছে। নির্দিষ্ট দিনক্ষণ বলা যাচ্ছে না, তবে কাউন্সিল হবে। তিনি বলেন, সাংগঠনিক পুনর্গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে এখন দল অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী। কাজেই সামনে যা যা করা উচিত, তা সবই করা হবে।

বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে দল জোড়াতালি দিয়ে চলছে- এমন অভিযোগ রয়েছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির এই নেতা বলেন, অভিযোগটি সঠিক নয়। বিএনপি বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল। যে দল বারবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেছে। সেই দলের উপর সরকার প্রায় ১৫ বছর ধরে নিপীড়ন নির্যাতন চালাচ্ছে। এরপরও দলটি গঠনতন্ত্র মোতাবেক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ীই দলে অনেককে পদায়ন করা হচ্ছে।

জানা মতে, ২০০৬ সালের ২৮ আগস্ট রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেন। এরপর বিএনপির দুর্দিন শুরু হয় মূলত ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারি হলে। সেই বছরের ২২ জানুয়ারি বিএনপি যখন একতরফা ভোটে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন ভোটের ১১ দিন আগে ইয়াজউদ্দিন আহমেদ জরুরি অবস্থা জারি করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব তুলে দেন ফখরুদ্দিন আহমেদের হাতে। এর দুই বছর পর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরে যে নির্বাচন হয়, তাতে ভরাডুবি হয় বিএনপির। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনে নামে বিএনপি ও তার জোট। সেই আন্দোলনে ব্যর্থ হওয়ার এক বছর পর ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে ফের সরকার পতনের আন্দোলনে নামে তারা। তখন দলটি টানা তিন মাস আন্দোলন করে। যদিও আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় সেই আন্দোলন প্রত্যাহার না হলেও তা একপর্যায়ে অকার্যকর হয়ে যায়। এরপর ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি তার আগের জোটের সঙ্গে নতুন শক্তি বৃদ্ধি করে অংশ নেয়। কিন্তু ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের চেয়েও খারাপ ফলাফল করে। সেই নির্বাচনে আগের রাতে ভোট হয়েছে এমন অভিযোগ এনে বিএনপি আবার নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে ফিরে যায়। এরইমধ্যে দলীয় সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করেছে ক্ষমতাসীনরা। এবারের নির্বাচন ছিল দলটির ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ। কিন্তু ঘুরে দাঁড়ানো তো দূরের কথা, এই নির্বাচন বিএনপিকে আরও বেশি অস্তিত্বের সংকটে ফেলেছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা আশা করেছিলেন, এবার হয়তো পটপরিবর্তন হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। আবারও আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় এসেছে।