সাবেক জেনারেল আজিজের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

রাজনীতিতে পাল্টাপাল্টি মেরুকরণ

প্রকাশ : ২২ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবারো আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ইসু্যু। গত সোমবার সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ-বিএনপির নেতারাও পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়েছেন।

আজিজ আহমেদ সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে ২০১৮ সালের ২৫ জুন দায়িত্ব গ্রহণ করে ২০২১ সালের ২৩ জুন পর্যন্ত সেনাপ্রধানের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। এর আগে ২০১২ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে ২০১৬ সালের ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক ছিলেন আজিজ আহমেদ। তার আগে আজিজ আহমেদ কুমিল্লার ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সাবেক এই সেনাপ্রধানকে নিয়ে এর আগেও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে নেতিবাচক খবর প্রকাশ করা হয়েছিল।

গত সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ দুর্নীতির সঙ্গে ব্যাপকভাবে জড়িত থাকার দায়ে তার বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে জেনারেল আজিজ আহমেদের পরিবারের সদস্যদেরও যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে অযোগ্য ঘোষণা করার কথা জানানো হয়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক বিবৃতিতে বলেছেন, দুর্নীতিতে উল্লেখযোগ্য সম্পৃক্ততার কারণে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর। তার কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়ার প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসকে ক্ষুণ্ণ করতে ভূমিকা রেখেছে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, আজিজ আহমেদ তার ভাইকে বাংলাদেশে অপরাধমূলক কার্যকলাপের জন্য জবাবদিহিতা এড়াতে সাহায্য করেছেন। আর এটা করতে গিয়ে তিনি সরকারি প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করে উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে জড়িত হয়েছেন। এছাড়া অন্যায়ভাবে সামরিক খাতে কন্ট্রাক্ট পাওয়া নিশ্চিত করার জন্য তিনি তার ভাইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। একই সঙ্গে নিজের ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য সরকারি নিয়োগের বিনিময়ে ঘুষ গ্রহণ করেছিলেন।

মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বিবৃতিতে বলেছেন, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং আইনের শাসনকে শক্তিশালী করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে তা আবারও নিশ্চিত করা হলো। সরকারি সেবা আরো স্বচ্ছ ও নাগরিকদের সেবা লাভের সুযোগ তৈরি করার পাশাপাশি ব্যবসা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং অর্থ পাচার ও অন্যান্য অর্থনৈতিক অপরাধের অনুসন্ধান ও বিচার নিশ্চিতে সক্ষমতা তৈরিতে সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশে দুর্নীতিবিরোধী প্রচেষ্টায় সহায়তা করে থাকে যুক্তরাষ্ট্র।

গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছিল সেটি হচ্ছে থ্রি সি ভিসা পলিসি যেটি ন্যাশনাল ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্ট অব দ্য ইউএস। সেটি ছিল ভিসানীতি যেটি ঘোষণা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র এই অ্যাক্টের আওতায়। জেনারেল আজিজের বিরুদ্ধে যে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, সেটা হচ্ছে ৭০৩১ (সি) অব দ্য অ্যানুয়াল ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট, ফরেন অপারেশনস, অ্যান্ড রিলেটেড প্রোগ্রামস এপ্রোপিপ্রিয়েশনস অ্যাক্টের অধীনে দেওয়া হয়েছে। যে ভিসানীতি ঘোষণা করা হয়েছিল, সেটির অধীনে তাকে ভিসা রেস্ট্রিকশন দেওয়া হয়নি। অন্য অ্যাক্টের অধীনে তাকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দুর্নীতি দমন, সন্ত্রাস দমন এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে মানবপাচার, সন্ত্রাস দমনে একযোগে কাজ করছি। দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রেও আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে চাই।

গতকাল রাজধানীর সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটেতে এক আলোচনা সভায় সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অনেকে খুশি হবেন যে আজিজের মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এসেছে। আমি মনে করি ওটা আরেকটা বিভ্রান্ত করা। আমরা সবসময় বিভ্রান্ত হচ্ছি। এর আগে র‌্যাবের বিরুদ্ধে সংগঠন হিসেবে হয়েছে। পুলিশের ৯ জনের বিরুদ্ধে হয়েছে। তাতে কী তাদের ভয়ংকর যাত্রা বন্ধ হয়েছে? হয়নি।

অন্যদিকে দুর্নীতির দায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর মুখ খুলেছেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ। একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেওয়া এক প্রক্রিয়ায় আজিজ আহমেদ বলেছেন, বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক এবং সেনাবাহিনীর প্রধান থাকাকালীন তার ভাইয়েরা বা নিকটাত্মীয় কেউ এসব প্রতিষ্ঠানে ঠিকাদারি করেছে, তার তথ্য প্রমাণ দিতে পারলে সব মেনে নেবেন। তিনি দাবি করেন, কোনো তথ্য-প্রমাণ ছাড়া তো অভিযোগ প্রমাণিত নয়। যুক্তরাষ্ট্র কিসের ভিত্তিতে কোন অভিযোগের ওপর ভিত্তিতে আমার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তারাই ভালো বলতে পারবেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞা বিরুদ্ধে আইনি বা অন্য কোনো প্রক্রিয়া না যাওয়ার কথা জানিয়েছেন সাবেক সেনাপ্রধান।

উল্লেখ্য, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদকে ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট, ফরেন অপারেশন অ্যান্ড রিলেটেড প্রোগ্রামস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস অ্যাক্টের ৭০৩১ (সি) ধারার আওতায় অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।