ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বৈঠক আজ

নির্ধারণ হবে ১৪ দলীয় জোটের ভবিষ্যৎ

শেখ হাসিনায় আস্থা শরিকদের
নির্ধারণ হবে ১৪ দলীয় জোটের ভবিষ্যৎ

এজেন্ডা ঠিক না করেই মিটিংয়ে বসতে যাচ্ছে ১৪ দলীয় জোটের নেতারা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এটিই তাদের প্রথম বৈঠক। আজ সন্ধ্যা ৭টায় জোটপ্রধান আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ১৪ দলীয় জোটে টানাপড়েন চলছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আসন বণ্টনের পর থেকেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে শরিকদের। উন্মুক্ত নির্বাচনে শরিকদের জন্য মাত্র ছয়টি আসন ছাড়ে আওয়ামী লীগ। প্রতিটি আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অংশ নেয়। এতে ভোটে দুটি আসন বাদে বাকি আসনগুলোতে হেরে যায় জোটের নেতারা। এ নিয়ে জোটের মধ্যে এক ধরনের তিক্ততা তৈরি হয়। মন্ত্রী পরিষদেও এবার শরিকদের জায়গা দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে জোট নেতাদের মধ্যে অভিমান, ক্ষোভ এবং হতাশা বাড়তে থাকে। দ্বাদশের ভোটের পর নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে ১৪ দলীয় জোট। নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জোটের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন। শরিকরাও জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। এ প্রসঙ্গে বিভিন্ন সময় তারা গণমাধ্যমে নানা ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস পরে আজ জোটসঙ্গীদের নিয়ে বসতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বৈঠকে জোটের ভবিষৎ কী হবে, তা জোট প্রধানের কাছে জানতে চাইবেন শরিকরা। জোট থাকলে সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে তোলারও প্রস্তাব দেবেন তারা। আজকের বৈঠকের পর ১৪ দলীয় জোটের রাজনীতি চাঙা হবে বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, এ বৈঠক থেকে জোটের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা স্পষ্ট হয়ে যাবে। জোটপ্রধান শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রাখবেন শরিক নেতারা। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত দেবেন, তা মেনে নেবেন জোট নেতারা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, একসাথে থাকতে হলে পারস্পরিক সম্মানটুকু থাকতে হবে। বেশি কিছু চাওয়া-পাওয়ার নেই, এখানে মানসম্মানের ব্যাপার। বলা হয়, শরিকদের ভোট নেই। ভোট কী আছে, সেগুলো জেনেশুনেই তো জোট করা হয়েছে। নতুন করে এসব বলার তো কোনো কারণ নেই।

জোটের বিকল্প কোনো পথ নেই- জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলবেন আমরা শুনবো। এরপর আমাদের কথা আমরা বলব। সমসাময়িক বিষয় ও রাজনৈতিক বিষয় আলোচনায় থাকবে বলেও জানান জোটের এই নেতা।

জোটের অন্যতম নেতা বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ খান মনে করেন, যে লক্ষ্য নিয়ে জোট গঠন করা হয়েছিল, সেখান থেকে সরে যাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘১৪ দলীয় জোট যে প্রত্যাশায় আমরা গঠন করেছিলাম এবং যে লক্ষ্য ছিল, সে অনুযায়ী আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আন্দোলন করেছি, সংগ্রাম করেছি। জোটের শরিকদেরও সরকারের অংশ হওয়া উচিত। এটা আমরা সবাই মনে করি। প্রধানমন্ত্রী আমাদের ডেকেছেন, উনার কথা শুনব আগে। তারপর আমরা বলব। এখনো এজেন্ডা ঠিক হয়নি। ১৪ দলীয় জোটের সরকার বলা হয়, কিন্তু সরকার এখন আওয়ামী লীগের। সরকারের মধ্যে ১৪ দলের কেউই নেই। জোট গঠনের সময় যে কথা বলা হয়েছিল- আন্দোলন, নির্বাচন, সরকার গঠন আমরা মিলেমিশে করব। সেই বিষয়টিই আমরা এখনো আশা করি।

জানতে চাইলে সামবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, জোট নেত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা কীভাবে ১৪ দলকে পরিচালনা করবেন, এটাই আমরা শুনব। আমাদের এটাই প্রত্যাশা। তবে আকাশের চাঁদ চাইলে তো হবে না। উনি ১৪ দলকে কতটুকু সক্রিয় করবেন, কী করবেন, তা বলবেন। জোটনেত্রী হিসেবে আমরা আশা করি যে, উনি সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য একটি ফর্মুলা দেবেন, যাতে রাজনৈতিকভাবে আমরা অপশক্তিকে মোকাবিলা করতে পারি।

জানতে চাইলে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘জোট কীভাবে থাকবে- এই বিষয়টি উনি কীভাবে দেখতে চান, তার বক্তব্য শুনে আমরা আমাদের বক্তব্য দেব।’

২০০৫ সালে ১৪ দলের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর আগে দলগুলোর মধ্যে কিছু বিষয়ে সমঝোতা হয়েছিল। এগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল একসঙ্গে আন্দোলন, একসঙ্গে নির্বাচন, একসঙ্গে সরকার গঠন। সে অনুযায়ী ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচন এবং সরকার গঠন হলেও ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর তার ব্যত্যয় ঘটে। ওই নির্বাচনের পর শরিকদের সবাইকে বাদ রেখে একাই সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। তখন থেকেই মূলত জোটে টানাপড়েন শুরু হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত