ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সুন্দরবনে আগুনের ঘটনায় ‘কঠোর মনিটরিংয়ের অভাব’ দেখছে বাপা

সুন্দরবনে আগুনের ঘটনায় ‘কঠোর মনিটরিংয়ের অভাব’ দেখছে বাপা

নিজ হাতেই বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ঐতিহ্য ধ্বংস করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। সংগঠনটি বলছে, গত ২২ বছরে সুন্দরবনে ৩২ বার আগুন লেগে পুড়ে ছাই হয়েছে শতাধিক একর বনভূমি। কঠোর মনিটরিংয়ের অভাবে সুন্দরবনে একের পর এক আগুনে বন পুড়ে ছাই হচ্ছে। গতকাল বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতারা এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিন বিভাগের অধ্যাপক ও বাপার জাতীয় কমিটির সদস্য ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সুন্দরবনের ঐতিহ্য ধরে রাখতে গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ যেমন- শন, নলখাগড়া এবং গোলপাতার অবদান অন্যতম। কিন্তু আমরা সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে পারছি না। আমরা নিজ হাতেই বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ঐতিহ্য ধ্বংস করছি। যেমন- নির্বিচারে বৃক্ষনিধন থেকে শুরু করে বাঘ নিধন এবং হরিণ শিকার করে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করছি আইন অমান্য করে। বক্তারা বলেন, বার বার সুন্দরবনে আগুন লাগলেও নেভাতে সক্ষম হচ্ছি না। গত ২২ বছরে সংরক্ষিত এই ম্যানগ্রোভ বনে ৩২ বার আগুন লেগে শতাধিক একর বনভূমি পুড়ে ছাই হয়েছে। কঠোর মনিটরিংয়ের অভাবে সুন্দরবনে একের পর এক আগুনে বন পুড়ে ছাই হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বৃহত্তর সুন্দরবনের বাংলাদেশ ও ভারতীয় অংশ একই নিরবছিন্ন ভূমিরূপের অংশ হলেও ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের সূচিতে ভিন্ন ভিন্ন নামে তালিকাভুক্ত হয়েছে যথাক্রমে সুন্দরবন ও সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান। প্রায় ১০ হাজার বর্গকিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত সুন্দরবনের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা বাংলাদেশে অবস্থিত এবং এক-তৃতীয়াংশ এলাকা ভারতে অবস্থিত।

বন অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন প্রায় ৬০১৭ বর্গকিলোমিটার, যা দেশের আয়তনের ৪.১৩ শতাংশ এবং ৩৮.১২ শতাংশ বনভূমি বন অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জাতীয় জ্ঞানকোষ বাংলাপিডিয়ার সর্বশেষ ২০১৫ সালের তথ্যমতে ২০০ বছর আগে অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুতে সুন্দরবনের আয়তন ছিল প্রায় ১৬ হাজার ৭০০ বর্গকিলোমিটার। সে সময় এ বনের নিয়ন্ত্রণ ছিল জমিদারদের হাতে। ১৮২৮ সালে ব্রিটিশ সরকার সর্বপ্রথম সুন্দরবনের স্বত্বাধিকার অর্জন করে। ১৮৩০ সাল থেকে সুন্দরবনের বিভিন্ন অংশ লিজ দেওয়ার প্রচলন শুরু হয় এবং সর্বপ্রথম ১৮৩১ সালে সুন্দরবনের মানচিত্র প্রকাশিত হয়। ইউরোপিয়ানরা এই লিজ গ্রহণ করে অমূল্য এ বনাঞ্চলকে আবাদি জমিতে রূপান্তর করতে থাকে। রূপান্তরের সময় তারা বৃক্ষ ও ছোট ছোট গুল্ম কেটে ফেলতে শুরু করে। ফলে সুন্দরবনের আয়তন ব্যাপকহারে কমতে থাকে। পরবর্তীতে ১৮৭৮ সালে সুন্দরবনকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয় এবং ১৮৭৯ সালে সুন্দরবনের দায়-দায়িত্ব বন বিভাগের ওপর ন্যস্ত করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, সর্বশেষ গত শনিবার (৪ মে) সকাল ১১টায় পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়ির লতিফের ছিলা এলাকায় আগুন লেগে বন বিভাগের হিসেবেই পুড়ে যায় ৭ দশমিক ৯ একর বনভূমি। ৪৭ ঘণ্টা পর আগুন শতভাগ নিয়ন্ত্রণে আসে। প্রাণীকূলের আবাস ও প্রজননস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বন্যপ্রাণীরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। বনের প্রাণ-প্রকৃতির শৃঙ্খলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রভাব পড়ে বনের প্রাণীকূলের খাদ্যচক্রে। চরম আঘাত আসে সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্রের উপরেও।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত