সাংবাদিকদের একহাত নিলেন ওবায়দুল কাদের

প্রকাশ : ২৪ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

ভারতে খুন হওয়া সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের চোরাচালানসহ বিভিন্ন অপকর্ম নিয়ে সাংবাদিকদের একহাত নিলেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘আপনারা (সাংবাদিকরা) এখন বলছেন, কলকাতায় তাকে (আনোয়ারুল আজীম আনার) চোরাকারবারি বলছে। আমি সাংবাদিকদের বলব, আপনারা কি তিন-তিনবার জাতীয় সংসদের এমপি নির্বাচিত হয়েছেন, তখন কি আপনারা এটা পেয়েছেন। এখন ভারতীয় সাংবাদিকরা কোন তথ্য আনল, সেটার উদ্ধৃতি দিচ্ছেন। আপনারা তো এই দেশের নাগরিক, সে যদি অপরাধী হয়, সেই অপরাধটা আপনাদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে কেন এলো না?’

গতকাল দুপুরে তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দলের নবগঠিত যুব ও ক্রীড়া উপকমিটির সদস্যদের পরিচিতি সভা ও ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য আনার কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। গত ১১ মে তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। প্রথমে কলকাতার বরাহনগরে তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন। এরপর স্থানীয় থানায় জিডি করেন গোপাল বিশ্বাস। তদন্ত শুরু হয় দুই দেশে। গত বুধবার সকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর আসে, নিউ টাউনের এক বাড়িতে খুন হয়েছেন এমপি আনার। তারপরই আনার সোনা চোরাচালানসহ নানা অপকর্মে যুক্ত ছিলেন বলে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হতে থাকে। বলা হচ্ছে, ওই সব কারবারের দ্বন্দ্বে খুন হয়েছেন এই সংসদ সদস্য।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সংসদ সদস্য কলকাতায় মারা গেছে, তাকে হত্যা করা হয়েছে। ইনভেস্টিগেশন সম্পন্ন হওয়ার আগে আমরা তো বলতে পারছি না। তবে আওয়ামী লীগের সে কী ছিল, সেটা বড় কথা নয়। কিন্তু সে যে এলাকার জনপ্রতিনিধি ছিল, সে এলাকায় গিয়ে দেখবেন। তার জন্য শোকার্ত মানুষ। প্রতিনিয়ত সারা এলাকায় ঘুরে বেড়াত মোটরসাইকেলে করে। তাকে আমরা নমিনেশন দিয়েছি তার জনপ্রিয়তার জন্য। এখন সে ভেতরে কোনো অপরাধ করে কি না?...প্রধানমন্ত্রী কিন্তু জিরো টলারেন্স। কোনো অন্যায়কারী, অপরাধী দলের লোক হলে তিনি কিন্তু ছাড় পাবেন না। কিন্তু এটা তো প্রমাণিত হতে হবে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি বলছে আজকে ছাত্রলীগ যুবলীগ নাকি অর্থপাচার করছে। অর্থ পাচারে বিএনপি সুপরিচিত। সিঙ্গাপুর আমেরিকায় কে অর্থপাচার করেছে? তারেক রহমান ও কোকো। সিঙ্গাপুরে পাচার হওয়া অর্থের একটা অংশ উদ্ধার করা হয়েছে। এফবিআই ঢাকায় এসে সাক্ষ্য দিয়ে গেছে। নিজেরা যে অপরাধে অপরাধী তার দায় তারা ছাত্রলীগ যুবলীগের ওপর চাপাতে চায়। এরা কত মিথ্যাচার অপপ্রচার করতে পারে!

বিএনপির আরেক নেতা অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, মেজর হাফিজ বড় বড় কথা বলেন, হাফিজ সাহেবকে বলি, আপনি যে বইটি স্বাধীনতার পরে লিখেছিলেন, প্রথম সংস্করণে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে তথ্য আপনি দিয়েছিলেন, বিএনপিতে যোগ দেয়ার পর সে তথ্যটি কেন পাল্টে দিলেন? এর জবাব কী?

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সঙ্গে জিয়াউর রহমান জড়িত না থাকলে খুনিদের কেন নিরাপদে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিলেন? বিভিন্ন দূতাবাসে খুনিদের চাকরি দিয়েছেন। সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী এনে খুনিদের দায়মুক্তি দিতে বিচারের পথ রুদ্ধ করেছেন। সাংবিধানিকভাবে খুনিদের বিচারের পথ কেন রুদ্ধ করলেন- মির্জা ফখরুলের কাছে জানতে চাই।

জিয়াউর রহমানের বাকশালের সদস্য পদ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, সেনাবাহিনী প্রধানের বাকশালের সদস্য পদ হওয়ার নিয়ম ছিল। কিন্তু উপ-সেনাপ্রধানের সে সুযোগ ছিল না। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর কাছে দরখাস্ত করে কাকুতি মিনতি করে বাকশালের সদস্য হয়েছিলেন। এর প্রমাণ আছে। বাকশালের ৭১ নম্বর সদস্য। ইতিহাস নিয়ে বিএনপি বারবার মিথ্যাচার করছে। সেতুমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক নানাবিধ কারণে ডলার সংকট দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি। সরকার বসে নেই। কাজ করে যাচ্ছে।

বক্তব্যে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন নিয়ে হতাশার কোনো কারণ নেই যা নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ক্রিকেট অনেক এগিয়ে গেছে। ফুটবলটা আরো এগোতে পারত। বিশ্বকাপ ফুটবলে যখন দেখি আইসল্যান্ডের মতো দেশ খেলছে। তখন ভাবি, আমরা কেন পারি না। আমি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকার সময় বাংলাদেশ সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ খেলার সুযোগ পেয়েছে। সেতুমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ যখন মালদ্বীপের সঙ্গে হারে তখন খারাপ লাগে। বাংলাদেশের মেয়েরা ভালো করছে। ক্রীড়াবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খেলোয়াড়দের পুরস্কৃত করেন, সহযোগিতা করেন, বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করার চেষ্টা করেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আমাদের সবার চেয়ে ডায়নামিক। সে কারণে বাংলাদেশ আজকে বিশ্বের বিস্ময়।

যুব ও ক্রীড়া উপকমিটির চেয়ারম্যান মোজাফফর হোসেন পল্টুর সভাপতিত্বে পরিচিত সভায় উপস্থিত ছিলেন উপকমিটির কো চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ, যুব ও ক্রীড়া উপকমিটির সদস্য সচিব ও হুইপ মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা, সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খানসহ উপকমিটির সদস্যরা।