ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

২৪তম রিনিউয়্যাবল এনার্জি কনফারেন্সে পররাষ্ট্রমন্ত্রী

সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের নীতিমালায় অবশ্যই পরিবর্তন দরকার

সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের নীতিমালায় অবশ্যই পরিবর্তন দরকার

বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুতের গুরুত্ব তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আমাদের পলিসি পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে। নীতিমালায় বলা হচ্ছে, সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প করতে হলে প্রতি মেগাওয়াটের জন্য ৩ একর জমি দেখাতে হবে। কিন্তু ১ দশমিক ৬ একরে ১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। অবশ্যই এ নীতিমালা পরিবর্তন করা দরকার। বাংলাদেশ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, তাই এমন অসামঞ্জস্য নীতি থাকতে পারে না। আমি শক্তভাবে এ নীতিমালার পরিবর্তন চাই। আবার লিড পার্টনার নিয়েও অসঙ্গতি রয়েছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে উন্নয়ন সহযোগীদের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ২৪তম ন্যাশনাল রিনিউয়্যাবল এনার্জি কনফারেন্স অ্যান্ড গ্রিন এক্সপো-২০২৪ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন মন্ত্রী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব এনার্জি এবং গ্রিনটেক ফাউন্ডেশনের দুই দিনব্যাপী এ যৌথ আয়োজনে প্রদর্শনীর পাশাপাশি থাকছে ৪টি টেকনিক্যাল সেমিনার।

হাছান মাহমুদ বলেন, কার্বন নিঃসরণ কমানো আমাদের দায় নয়, তবুও উদ্যোগ নিয়েছি। উন্নয়ন সহযোগীদের বলব, বাংলাদেশ চেষ্টা করছে, হাত বাড়ালে আরো উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা নিতে পারব। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবী প্রতিকূলতার মুখোমুখি। প্রতি বছর সমুদ্রের উচ্চতা দশমিক ৭৩ ইঞ্চি বাড়ছে। বাংলাদেশ অংশে আরো বেশি। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি তো আমার চোখে দেখা। জোয়ারের পানি এখন চট্টগ্রাম শহরের অভিজাত এলাকায় ঢুকছে। পাকিস্তানে বন্যা দেখছি, আগে সেখানে বন্যা হতো না। আমাদের দেশের সাইক্লোন ও ঘূর্ণিঝড় আরও বেড়েছে, হচ্ছে অতিমাত্রায়। এর জন্য ৮০ শতাংশ দায়ী জলবায়ু পরিবর্তন। বহু বছর ধরে আলোচনা করে ২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তি করা হয়। সব প্রতিশ্রুতি যদি বাস্তবায়ন হয়, কার্বন নিঃসরণ যদি কমানো যায়, তা হলেও ৩ শতাংশ বাড়বে। এখনই ত্রাহি অবস্থা, ৩ শতাংশ বাড়লে কী দাঁড়াবে। পরিবেশবিজ্ঞান ও সমুদ্রবিজ্ঞান বিষয়ের অধ্যাপক হাছান মাহমুদ বলেন, পৃথিবীর গড় কার্বন নিঃসরণ ৬ দশমিক ৭৯ টন। আর যুক্তরাষ্ট্রে ১৭ দশমিক ৯ টন, চীনে ১০ দশমিক ৯৫ টন। আর আমাদের মাত্র ১ দশমিক ২৯ টন। কয়েকটি দেশ জিরো নিঃসরণে গেছে। তিনি বলেন, একসময় ট্রানজিট শব্দটি গালি ছিল, এখন সেটিতে পরিবর্তন এসেছে। আমরা নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনব ভারতের ওপর দিয়ে, হাইড্রোজেনচালিত বাস আনার কথা ভাবছে বিআরটিসি। আমরা প্রথম শিল্প বিপ্লবে ১০০ বছর, দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লবে ৮০ বছর, তৃতীয় শিল্প বিপ্লবে ৩০ বছর পেছনে ছিলাম। তবে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে একসঙ্গে পা রেখেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, বাংলাদেশসহ ৫২টি দেশ কার্বন নিঃসরণের জন্য ভিকটিম, কিন্তু এ দেশগুলো এর জন্য দায়ী নয়। যেসব দেশ দায়ী তারা একটি প্রতিশ্রুতিও পূরণ করেনি। উষ্ণতা কমাতে হলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের পরনির্ভরশীলতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কীভাবে পরিবর্তন দরকার, আমরা করতে চাই। আমাদের তরুণদের প্রস্তুত করতে হবে বিশ্ববাজারের উপযোগী করে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আখতার হোসেন বলেন, এসডিজিতে বাংলাদেশ অনেক ভালো করেছে। র‌্যাঙ্কিংয়ে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশ ১০১তম আর ভারতের র‌্যাঙ্কিং ১১২তম। স্রেডার চেয়ারম্যান মুনিরা সুলতানা বলেন, সৌরবিদ্যুতে জমির ঘাটতি রয়েছে। বায়ুবিদ্যুতে এখন অনশোরে কাজ করছি। অফশোর নিয়ে সমীক্ষা চলছে, রিপোর্ট পেলে অফশোরের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, সৌরবিদ্যুৎ শতভাগ নিরবচ্ছিন্ন-এ কথা বলা যাচ্ছে না। এ জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির পাশাপাশি কনভেনশনাল বিদ্যুতের সমন্বয় থাকতে হবে। আমাদের চাহিদা এবং সরবরাহের মধ্যে ঘাটতি রয়েছে। জেনারেশন ক্যাপাসিটি থাকার পরও কাঁচামালের অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছি না। ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে মাত্র দুটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। অর্থের অভাবে চাহিদামতো এলএনজি আমদানি করতে পারছি না। এজন্য আমাদের যা আছে, তার সর্বোচ্চ সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

ইডকলের সিইও আলমগীর মোর্শেদ বলেন, এসডিজিতে ঘোষণা করেছি, নিজেদের অর্থায়ন দিয়ে ৫-৬ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ কমাতে চাই। নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে ২০৪১ সালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে গেলে ২৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন বিনিয়োগ প্রয়োজন পড়বে। প্রযুক্তি রয়েছে, এখন প্রয়োজন অর্থায়ন, বারবার প্রশ্ন আসছে কীভাবে। বীমা কোম্পানি, শেয়ারবাজারকে কীভাবে যুক্ত করা যায় সেভাবে মডেল তৈরি করা জরুরি।

বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউয়্যাবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশন (বিএসআরইএ) সভাপতি নুরুল আক্তার বলেন, দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারলে লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। এখানে সচেতনতার অভাব রয়েছে, সৌরবিদ্যুতে বিনিয়োগ না হলেও চলে, আবার রক্ষণাবেক্ষণ নেই বললেই চলে-এসব বিষয়ে জনগণকে সেভাবে সচেতন করা যায়নি। বাণিজ্যিক ব্যাংককে লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত। ১৫ লাখ সেচ পাম্প রিপ্লেস করা গেলে ৩০ শতাংশ লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গ্রিনটেক ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা খন্দকার মোর্শেদ মিল্লাত। তিনি বলেন, ২০২১ সাল বাদ দিলে গত ৫ বছরে গ্রিন অর্থায়নের হার বেড়েছে। তবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি নির্দিষ্ট করে দেওয়া উচিত। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলে একটি সেমিস্টার থাকা উচিত। যাতে যারা চাকরিজীবী রয়েছে তারা এখানে এসে জ্ঞান আহরণ করতে পারেন। তিনি বলেন, সৌরবিদ্যুতের সোলার প্যানেল, ইনভার্টার আমদানি করি, এখানে ট্যাক্সেশনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব এনার্জির ডিরেক্টর ড. এসএম নাফিজ সামস, গ্রিনটেক ফাউন্ডেশনের সিইও অ্যান্ড এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর লুৎফর রহমান।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত