ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

এমপি আনার হত্যা : দেশজুড়ে চাঞ্চল্য

এমপি আনার হত্যা : দেশজুড়ে চাঞ্চল্য

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। হত্যার পর খুনিরা তার দেহ থেকে হাড়-মাংস আলাদা করে ফেলে। এরপর মাংসে হলুদের গুঁড়া ও মসলা মিশিয়ে ফ্রিজে রাখা হয়। পরে দফায় দফায় ট্রলিতে অজ্ঞাত স্থানে ফেলা হয় মরদেহ। ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। হত্যার পর তার মরদেহ কীভাবে ফেলে দেওয়া হয়- গ্রেপ্তারের বরাতে সে তথ্যও জানিয়েছেন ডিবিপ্রধান। গতকাল বিকাল ৩টার দিকে ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান তিনি। ডিপিপ্রধান জানান, ভারতের কলকাতায় এক বাসায় আনোয়ারুল আজীমকে হত্যার পর শরীর খণ্ড খণ্ড করা হয়। এরপর হাড় ও মাংস আলাদা করে হলুদের গুঁড়ো মিশিয়ে সেগুলো ব্যাগে ভরে বের করা হয় ওই বাসা থেকে। তবে কোথায় মরদেহের টুকরোগুলো ফেলা হয়েছে তা এখনো স্পষ্ট নয়।

ডিবিপ্রধান বলেন, দুই থেকে তিন মাস আগেই এমপি আনারকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। তারা পরিকল্পনা করেছিলেন ঢাকায় হত্যা করবেন। তিনি জানান, মাস্টারমাইন্ড আখতারুজ্জামানের দুই বাসার মধ্যে একটি গুলশানে, অন্যটি বসুন্ধরায়। এ দুই বাসায়ই হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। আনার হত্যার নেপথ্যে রাজনীতি বা অন্য যে কারণই থাকুক না কেন, বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন; কিন্তু হত্যাকারীরা পারেননি। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা কলকাতায় গত ২৫ এপ্রিল একটি বাসাভাড়া নেন। তারা ৩০ এপ্রিল ওই বাসায় ওঠেন। যিনি হত্যার পরিকল্পনা করেছেন তিনি ও আরেকজনসহ মোট তিনজন বিমানযোগে কলকাতার ভাড়া বাসায় ওঠেন। তারা দুই মাস ধরে খেয়াল রাখছেন কখন আনারকে কলকাতায় আনা হবে। ১২ মে আনার বন্ধু গোপালের বাসায় যান। সেখানে আরো দুজনকে ভাড়া করা হয়। তারা ওই বাসায় আসা-যাওয়া করবেন। তারা হলেন জিহাদ বা জাহিদ ও সিয়াম। মাস্টারমাইন্ড গাড়ি ঠিক করেন। কাকে কত টাকা দিতে হবে, কারা কারা হত্যায় থাকবেন, কার দায়িত্ব কী হবে তা ঠিক করেন।

এমপি আনারকে হত্যার সঙ্গে কে বা কারা জড়িত তাও শনাক্ত করে ফেলেছে বাংলাদেশ-ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এদিকে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যায় জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়েছে। আমরা এখনো তদন্ত করছি। তদন্তের প্রয়োজনে ভারতের একটি টিম এখানে (বাংলাদেশে) আসবে। প্রয়োজনে আমাদের একটি টিমও সেখানে (ভারত) যাবে। প্রায় সব কিছু চিহ্নিত হয়েছে। কারা হত্যা করেছে, তাদের চিহ্নিত করে প্রায় কাছাকাছি এসে গেছি। এখন শুধু ঘোষণার বাকি। আমরা মরদেহটা এখনো উদ্ধার করতে পারিনি। আপনারা যা শুনেছেন, আমরাও সেগুলোই শুনেছি। যে পর্যন্ত মরদেহ উদ্ধার করতে না পারব, সে পর্যন্ত অফিসিয়ালি আপনাদের কিছু বলতে পারছি না। এ বিষয়ে দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে।

এদিকে এমপি আনারের মরদেহ গুমে ব্যবহৃত একটি গাড়ি জব্দ করেছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে গাড়ির চালককেও। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গেছে, গতকাল ভোররাতে সাদা রঙের মারুতি গাড়িটি জব্দ করা হয়। এমপি আনার হত্যার ঘটনায় কলকাতায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। তাদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। তার নাম সিয়াম। ১৩ মে হত্যাকাণ্ডের দিন তিনি সঞ্জীভা গার্ডেনসের ওই ফ্ল্যাটে ছিলেন বলে জানা গেছে। এছাড়া এমপির মরদেহের খণ্ডিত অংশ গুমের দায়িত্ব সিয়ামের ওপর ছিল বলেও দাবি পশ্চিমবঙ্গের পুলিশের। ওই একই ঘটনায় জুবের নামে এক ক্যাব চালককেও আটক করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। আনার হত্যাকাণ্ডের তদন্তে ভারতীয় পুলিশের দুই সদস্য গতকাল ঢাকায় পৌঁছেছেন। ভারতীয় পুলিশের এই প্রতিনিধি দল এরইমধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সঙ্গে বৈঠক সেরেছেন।

এমপি আনার হত্যার মূলহোতা তারই বাল্যবন্ধু এবং ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন। শাহীন ঝিনাইদহের বাসিন্দা ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। তার ভাই সহিদুজ্জামান ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌর মেয়র। আর হত্যায় নেতৃত্ব দেন শিমুল ভূঁইয়া। যদিও তার ছদ্মনাম আমানউল্লাহ আমান। তিনি পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কলকাতার নিউটাউনে যে ফ্ল্যাটে আনোয়ারুল আজিম খুন হন, সেটি ভাড়া নিয়েছিলেন আখতারুজ্জামান শাহীন। গত ৩০ এপ্রিল আখতারুজ্জামান শাহীন চরমপন্থি নেতা আমান ও সিলিস্তা রহমান নামে নিজের এক বান্ধবীকে নিয়ে কলকাতা যান। সেখানে আগে থেকেই ভাড়া করে রাখা নিউটাউন এলাকার সঞ্জিভা গার্ডেনের একটি ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটে ওঠেন তারা। কলকাতায় আগে থেকেই অবস্থান করছিলেন আখতারুজ্জামানের দুই সহযোগী সিয়াম ও জিহাদ। সেখানে বসে তারা এমপি আনারকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

ভারতের কলকাতায় ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা অপহরণের মামলার প্রতিবেদন আগামী ৪ জুলাইয়ের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হকের আদালত এ আদেশ দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, ১১ মে চিকিৎসার জন্য ভারতের কলকাতা গিয়ে নিখোঁজ হন সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার। তাকে খুঁজে না পেয়ে তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বিষয়টি ঢাকার ডিবি পুলিশকে জানান। পরে ঢাকা ও কলকাতার পুলিশ জানায়, ১৩ মে কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জীভা গার্ডেনসের একটি ফ্ল্যাটে হত্যার শিকার হয়েছেন আনোয়ারুল আজীম। এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে গিয়ে কলকাতার পুলিশ তথ্য পায় যে, ওই ফ্ল্যাটে সৈয়দ আমানুল্লাহ ও শিলাস্তি রহমান নামেও দুই ব্যক্তি ছিলেন। পরে দুজন ঢাকা ফিরলে এ তথ্যের সূত্র ধরে তাদের আটক করে ডিবি পুলিশ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত