ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আজ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে রেমাল

আজ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে রেমাল

বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি এরমধ্যেই নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সেটির অভিমুখ এখন বাংলাদেশের দিকে। আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, আরো শক্তি অর্জন করে আজ এটি গভীর নিম্নচাপে রূপ নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং এর কাছাকাছি পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগরের অংশজুড়ে অবস্থান নিম্নচাপটির। এটি আরো উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে। লঘুচাপটি যদি সত্যিই ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়, তবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলা ঘিরে তাণ্ডব চালানোর সম্ভাবনা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিমের প্রধান আবহাওয়া গবেষক খালিদ হোসেন বলেন, লঘুচাপটি আরও ঘনীভূত হলে এর শক্তিমত্তা ও ল্যান্ডফল সম্পর্কে আরো বিস্তারিত বলতে পারব। তবে এরইমধ্যে এর গতিবিধি পর্যালোচনা করে, যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তা হলো, এটি বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রমের আশঙ্কা তৈরি করেছে। ভারতের ওড়িষ্যা রাজ্য থেকে শুরু করে মিয়ানমারের সিত্তিই, এই রেঞ্জের যেকোনো স্থান থেকে এটি উপকূল অতিক্রম করতে পারে। তবে সর্বোচ্চ ঝুঁকি থাকতে পারে সাতক্ষীরা থেকে চট্টগ্রামের উপকূলভাগ। তবে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এটি অনেক বেশি তীব্রতাসম্পন্ন বা সুপার সাইক্লোনে রূপ নিতে পারবে না। এর পরিবর্তে এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ৮৫ থেকে ১৩৫ কিমি. প্রতি ঘণ্টায় থাকতে পারে। এর সর্বোচ্চ শক্তি উপকূলভাগ অতিক্রম করার সময় পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

কোথায় আঘাত হানার সম্ভাবনা বেশি : ১. সাতক্ষীরা থেকে কক্সবাজার এ সম্ভাবনা থাকবে শতকরা ৬৫ ভাগ। ২. ওড়িষ্যার উত্তর থেকে পশ্চিম বঙ্গ পর্যন্ত সম্ভাবনা ২৫ ভাগ। ৩. মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে শতকরা ১০ ভাগ।

বাংলাদেশে এর প্রভাব : সম্ভাবনা ১ : যদি এটি বাংলাদেশের পশ্চিমে সুন্দরবন উপকূলে আঘাত করে তবে খুলনা ও বরিশালের উপকূলবর্তী নিচু এলাকা কয়েকফুট জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে এবং প্রায় সারাদেশেই বেশ ভালো বৃষ্টিপাত সংগঠিত হতে পারে। সম্ভাবনা ২ : আবার যদি এটি ওড়িষ্যা থেকে কলকাতার আশপাশে ল্যান্ডফল করে, তবে এর একটা আউটার কনভারজেন্স জোন হিসেবে চট্টগ্রাম ও বরিশালে ভালো বৃষ্টিপাত ঘটাতে পারে। অপরদিকে খুলনা অঞ্চলে সাইক্লোনের প্রভাব সরাসরি পড়তে পারে। আর দূরবর্তী প্রভাবের কারণে একটা দুর্বল প্রভাব সারা দেশেই বিদ্যমান থাকতে পারে। যার ফলে বর্ষাকালের মতো টিপ টিপ বৃষ্টি হতে পারে। সম্ভাবনা ৩ : যদি এটি বরিশাল-চট্টগ্রাম-এর মাঝামাঝি অঞ্চল দিয়ে ল্যান্ডফল করে তবে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের পাশাপাশি সারাদেশেই ভালো বৃষ্টিপাত পেতে পারে। শুধু ব্যতিক্রম হিসেবে রংপুর বিভাগে কিছুটা কম বৃষ্টি হবে। সম্ভাবনা ৪ : যদি চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফের মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করে তবে বরিশালের দক্ষিণাঞ্চল থেকে পুরো চট্টগ্রাম বিভাগ বৃষ্টিপাতের সম্মুখীন হতে পারে। সম্ভাবনা ৫ : যদি এটি মিয়ানমারে যায় তবে একমাত্র চট্টগ্রাম বিভাগের দক্ষিণাঞ্চল ব্যতীত আর কোথাও বৃষ্টিপাত হবে না। গতকাল দুপুরে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশ করা হয়েছে। আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিকের সই করা আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পশ্চিমণ্ডমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ঘনীভূত হয়েছে। বর্তমানে এটি পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিমণ্ডমধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় (১৫.১ক্ক উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮.৫ক্ক পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি গতকাল সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৮০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৮২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৯০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। গতকাল বিকেল ৫টায় আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে দ্বিতীয় বিশেষ আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমানের সই করা ওই বার্তায় জানানো হয়েছে, লঘুচাপটি দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। যা আরও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে।

সতর্কতা সংকেত জারি : লঘুচাপকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। একইসাথে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থান করা মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। গভীর সাগরে বিচরণ না করতেও বলা হয়েছে।

উপকূলে মাইকিং : ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় বরগুনায় সচেতনতামূলক মাইকিং করেছে কোস্ট গার্ডের সদস্যরা। গতকাল বিকেল ৪টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী পাথরঘাটা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এ প্রচার মাইকিং করা হয়। কোস্ট গার্ড সূত্রে জানা যায়, পাথরঘাটা কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোনের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার এম ফিরোজ্জামানের নেতৃত্বে পাথরঘাটা পৌর শহরের লঞ্চঘাট, নিলিমা পয়েন্টসহ উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন এলাকায় প্রচার মাইকিং করেন কোস্ট গার্ড সদস্যরা। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে দেশের সমুদ্রবন্দর সমূহে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখানো হয়েছে। পরবর্তীতে সংকেত বেড়ে ঘূর্ণিঝড় রেমালে রূপ নিয়ে উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এতে সংকেত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মানুষের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান নিতে সচেতনতামূলক মাইকিং শুরু করা হয়েছে। এ বিষয়ে পাথরঘাটা কোস্ট গার্ড স্টেশন কমান্ডার লে. শাকিব মেহবুব বলেন, বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপের সৃষ্টি হয়েছে। এতে সমুদ্রবন্দরে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখানো হয়েছে। সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে পাথরঘাটা উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত