ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আনার হত্যা

এখনো খোঁজ মেলেনি মরদেহের

অভিযুক্তদের নিয়ে কলকাতায় ঘুরেছে পুলিশ
এখনো খোঁজ মেলেনি মরদেহের

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম হত্যার কয়েক দিন পর হয়ে গেলেও এখনো মেলেনি তার মরদেহের সন্ধান। বিষয়টি নিয়ে যেমন আনারের পরিবার হাতাশায় রয়েছেন, ঠিক একইভাবে বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে আলোচনা। এদিকে অভিযুক্ত দুজনকে নিয়ে কলকাতা ও উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা পরিদর্শন করেছেন পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কর্মকর্তারা। কিš‘ এখনো আনারের মরদেহের কোনো হদিস মেলেনি।

সূত্র জানায়, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জিহাদ হাওলাদার নামের এক কসাইকে গ্রেপ্তার করেছে পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি। বনগাঁ থেকে গ্রেপ্তারের পর জিহাদ জেরার মুখে এমপি আনার হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন।

সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদে জিহাদ বলেছেন- প্রথমে আনারকে শ্বাসরোধে খুন করা হয়। তারপর দেহ কাটা হয় টুকরো টুকরো করে। হাড় এবং মাংস আলাদা করা হয়। চামড়া ছাড়িয়ে তাতে হলুদ মাখান অভিযুক্তরা, যাতে বাইরে কেউ জিজ্ঞেস করলে বলা যায়, রান্না করার জন্য মাংস নিয়ে যাওয়া হ”েছ। সেই দেহাংশ বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে এখনও পর্যন্ত জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা।

পশ্চিমবঙ্গের সিআইডির সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তারের পর জিহাদকে ভাঙড়ের একটি জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আনারকে খুনের পর সেখানেই দেহাংশ ফেলা হয়েছে বলে জেরায় উঠে এসেছে। কিš‘ রাতের অন্ধকারে সেখান থেকে কোনো দেহাংশ মেলেনি। জানা যায়, ২৪ বছর বয়সি জিহাদ হাওলাদার বাংলাদেশের খুলনার বাসিন্দা। অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছিলেন তিনি। আনারকে ‘খুনে’র প্রায় দুই মাস আগে অভিযুক্তরা জিহাদকে মুম্বাই থেকে কলকাতায় নিয়ে আসেন।

জিহাদ জানিয়েছেন, অভিযুক্ত আখতারুজ্জামানের নির্দেশেই জিহাদ সব কাজ করেছিলেন। জিহাদ ছাড়াও আরো চারজন বাংলাদেশি নাগরিক এই কাজে তাকে সাহায্য করেছিলেন। এদিকে আনোয়ারুল নিখোঁজের খবর যিনি প্রথম পুলিশকে জানিয়েছিলেন, সেই স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসকে কেন এখনো হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হ”েছ না- এমন প্রশ্নের জবাবে এক সিআইডি কর্মকর্তা বলেন, তিনি তদন্তে সহযোগিতা করেছেন। তিনি যা বলেছেন, তা পরে আমরা মিলিয়ে দেখেছি। তার কথার মধ্যে কোনো বৈপরীত্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই সিআইডি কর্মকর্তা আরো বলেন, সবচেয়ে বড় কথা, তিনি এমপি আনোয়ারুল আজীমের পরিবারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তি বলে আমাদের জানানো হয়েছে। এমপি আজীমের পরিবার এখন পর্যন্ত গোপাল বিশ্বাস সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক মন্তব্য করেনি এবং বলেছেন যে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে পরিবারের ঘনিষ্ঠ। এই কারণেই আপাতত আমরা তাকে সন্দেহের ঊর্ধ্বে রাখছি। ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য আনার কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।

গত ১১ মে তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। প্রথমে কলকাতার বরাহনগরে তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। কিš‘ সেখান থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন। এরপর ¯’ানীয় থানায় জিডি করেন গোপাল বিশ্বাস। তদন্ত শুরু হয় দুই দেশে। গত বুধবার সকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর আসে, নিউ টাউনের এক বাড়িতে খুন হয়েছেন এমপি আনার। এর পরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ভারতের পুলিশের বরাত দিয়ে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এ ঘটনায় বাংলাদেশে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। তারা হলেন- আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, শিলাস্তি রহমান ও ফয়সাল আলী ওরফে সাজি। ভারতীয় গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল বাংলাদেশে এসে গত বৃহস্পতিবার এই আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।

এদিকে সংসদ সদস্য আনারকে খুনের উদ্দেশে অপহরণের মামলায় গ্রেপ্তার তিন আসামির আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল শুক্রবার বিকালে শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দিলরুবা আফরোজ তিথির আদালত এই রিমান্ডের আদেশ দেন।

রিমান্ডে নেওয়া আসামিরা হলেন শিমুল ভুঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্যাহ সাঈদ (৫৬), তানভীর ভূঁইয়া (৩০) ও সিলিস্তা রহমান (২২)।

এদিন আসামিদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন ডিবি পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহফুজুর রহমান। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের আবেদন করা হয়। তবে আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।

শুনানির শুরুতে সিলিস্তা রহমানের কাছে এক আইনজীবী ওকালতনামায় স্বাক্ষর নিতে যান। তখন সিলিস্তা আদালতে কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, আমি ওকালতনামায় স্বাক্ষর দেব কেন? আমি কীভাবে আসামি হলাম। আমি শুধু ওই বাসায় ছিলাম। এছাড়া কিছুই জানি না। অভিযুক্ত সিলিস্তা ওকালতনামায় স্বাক্ষর না করায় তার রিমান্ড বাতিলের বিষয়ে শুনানি হয়নি। পরে আদালত তাদের আট দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। গত ১২ মে সন্ধ্যায় আনোয়ারুল আজীমের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস শেরেবাংলা নগর থানায় মামলাটি করেন।

মামলায় এজাহারে বলা হয়, মানিক মিয়া এভিনিউয়ের বাসায় আমরা সপরিবারে বসবাস করি। ৯ মে রাত ৮টার দিকে আমার বাবা আনোয়ারুল আজীম আনার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ যাওয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেন। ১১ মে বিকাল পৌনে ৫টার দিকে বাবার সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বললে বাবার কথাবার্তা কিছুটা অসংলগ্ন মনে হয়। এরপর বাবার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও বন্ধ পাই। গত ১৩ মে বাবার ভারতীয় নম্বর থেকে উজির মামার হোয়াটসঅ্যাপে একটি ক্ষুদে বার্তা আসে। এতে লিখা ছিল- ‘আমি হঠাৎ করে দিল্লি যা”িছ, আমার সঙ্গে ভিআইপি রয়েছে। আমি অমিত সাহার কাজে নিউটাউন যা”িছ। আমাকে ফোন দেওয়ার দরকার নাই। আমি পরে ফোন দেব।’

এছাড়া আরো কয়েকটি বার্তা আসে। ক্ষুদে বার্তাগুলো আমার বাবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অপহরণকারীরা এটি করে থাকতে পারে।

আরো উল্লেখ করা হয়, ‘আমরা বিভিন্ন জায়গায় বাবার খোঁজ করতে থাকি। কোনো সন্ধান না পেয়ে তার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস বাদী হয়ে ভারতীয় বারানগর পুলিশ স্টেশনে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপরও আমরা খোঁজাখুঁজি অব্যাহত রাখি। পরবর্তীতে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজশে বাবাকে অপহরণ করেছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত