ঢাকাতে আরো মেট্রোরেল নির্মাণ হবে : প্রধানমন্ত্রী

* জলাশয় ভরাট করা যাবে না * ভারতে অস্ত্র চোরাচালান বন্ধ করেছে সরকার * পার্কগুলো যেন মাদকসেবীদের আখড়া না হয়

প্রকাশ : ২৬ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীবাসীর যাতায়াতের জন্য ঢাকায় আরও কয়েকটি মেট্রোরেল নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বঙ্গবাজারে নতুন মার্কেটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে সেখানে একটি নিমগাছের চারা রোপণ করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে এ কথা জানান তিনি।

ঢাকার যানজট নিরসনে আরো কয়েকটি মেট্রোরেলপথ তৈরির কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশ যত উন্নত হচ্ছে মানুষের কাজকর্ম তত বাড়ছে। আধুনিকতার সঙ্গে তালমিলিয়ে চলতে হয়। এরই মধ্যে রাজধানীবাসীর যাতায়াতের জন্য ঢাকাতে একটি মেট্রোরেলপথ তৈরি করা হয়েছে। আরো কয়েকটি মেট্রোরেলপথ নির্মাণ করা হবে। কিছু উপর দিয়ে যাবে, আবার কিছু পাতাল দিয়ে যাবে। সেভাবেই পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।’ আসন্ন ঈদুল আজহায় যেখানে সেখানে পশু কোরবানি না করার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যত্রতত্র পশু কোরবানি দেবেন না। নির্দিষ্টস্থানে কোরবানি দেবেন। আগামীতে পশু কোরবানির জন্য আরো আধুনিক ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়েছে সিটি করপোরেশনগুলোতে। শুধু সিটি করপোরেশন নয়, দেশব্যাপী আধুনিক ব্যবস্থা রাখতে হবে সেই নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। যেন শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে।’

জনগণের সেবা নিশ্চিত করতেই ভাগ করা হয়েছিল ঢাকা সিটি করপোরেশনকে। এখন নানামুখী উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে সেখানে-এ কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পানি ব্যবহারে যাতে অপচয় না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। জলাশয় ভরাট করা যাবে না। প্রকৌশলী-স্থপতিরা পুকুর দেখলেই কেন দালান তৈরির পরিকল্পনা করেন? জলধার সংরক্ষণ করুন।’

পরিবেশ রক্ষার গাছ লাগানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যাদের এক টুকরো জমি আছে তারা কমপক্ষে একটা ফলের গাছ লাগান, একটা ফুলের গাছ হলেও লাগান। যাদের গ্রামের বাড়ি আছে, সেখানে যেন অনাবাদি জমি না থাকে, সেই দিকে দৃষ্টি দিতে হবে।’শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঢাকায় কোনো বস্তিবাসী কোনো অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকবে না। সুন্দর পরিবেশে সবাই বসবাস করবে। সেই ব্যবস্থা করে দেব। এই পদক্ষেপও আমরা নিয়েছি। মানুষের কল্যাণে কাজ করা, এটাই আমাদের লক্ষ্য। এই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করি। আমাদের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য ফ্ল্যাট করে দিচ্ছি। বস্তিবাসীদের জন্য ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করে দিচ্ছি। যে বস্তিতে যেরকম ভাড়া সেরকম ভাড়াই দেবে। কিন্তু তারা ফ্ল্যাটে থাকবে। শুধু বড়লোকেরাই ফ্ল্যাটে থাকবে সেটা হতে পারে না, আমাদের রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে দিন মজুররাও ফ্ল্যাটে থাকবে। স্বল্প ভাড়া, কেউ যদি প্রতিদিন ভাড়া দিতে চায়, সেই ব্যবস্থা আছে। কেউ যদি সাত দিনের ভাড়া দিতে চায়, সে ব্যবস্থা আছে। কেউ মাসের ভাড়া দিতে চাইলে সে ব্যবস্থাও হবে। আমরা এরই মধ্যে ৩০০ পরিবার তুলেছি।

নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একসময় বিদ্যুৎ-পানি ঠিকমতো পেত না নগরবাসী। সরকার ঢাকার মানুষের যোগাযোগ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার দিকেও বিশেষ নজর দিয়েছে। আপনাদের মনে আছে সেই বিদ্যুৎ ও পানির দাবিতে মানুষের আন্দোলনে বিএনপি’র এক নেতা (স্থানীয় এমপি) জনগণের ধাওয়াও খেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার ঢাকাবাসীর জন্য সুপেয় পানি সরবরাহ ব্যবস্থার প্রভুত উন্নয়ন করেছে। সারাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের উন্নয়ন ঘটিয়েছে এবং মানুষের বিদ্যুতের ব্যবহারও বেড়েছে। স্বাস্থ্যকর পানি পেতে চাইলে, নিজের পানির ট্যাঙ্ক নিজেদেরই পরীক্ষা করে দেখতে হবে। মশার প্রজনন ক্ষেত্র যেন তৈরি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। আগের চেয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার বেড়েছে। অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাই সাশ্রয়ী হবেন। পানির কল ছেড়ে, শেভিং কিংবা কাপড় কাচা বা দাঁত মাজবেন না। পানি অপচয় করবেন না।’

নগরের পার্কগুলো যেন মাদকসেবীদের আখড়া না হয়। শোভাবর্ধন-পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায়ে রাখতে ভূমিকা রাখতে হব কাউন্সিলরদের এ কথা জানিয়ে তিনি বলেন, মাদক থেকে দূরে থাকবেন সবাই। তরুণ প্রজন্মকে আত্মমর্যাদা আত্মসম্মান নিয়ে চলার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অস্ত্র চোরাচালানের রুট ছিল বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সেটা বন্ধ করেছে। এই বাংলাদেশে অস্ত্র চোরাকারবারির যে রুট, সেটা আমরা বন্ধ করেছি। ভারতে উলফা থেকে শুরু করে যেখানে যেখানে যারা অস্ত্র সাপ্লাই দিত, সেগুলো আমরা বন্ধ করেছি; তাদেরও যাতে শান্তি আসে; তাদের ওই সেভেন সিস্টারে, সেই ব্যবস্থা কিন্তু আওয়ামী লীগ করেছে- এটা সব থেকে বড় কাজ। আমাদের যে ল্যান্ড বাউন্ডারি (ছিটমহল) সেটাও বিনিময় করে সারা বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। বিশাল সমুদ্রসীমা আমরা জয় করেছি। যারা আগে ক্ষমতায় ছিল তারা (বিএনপি) এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি; জানতই না! তারা আসছিল লুটপাট করতে, দুর্নীতি করতে, অস্ত্র চোরাকারবার করতে, সে কাজেই ব্যস্ত ছিল, আর মানুষ খুন করতে। ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলা থেকে শুরু করে, যত রকমের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উপর অত্যাচার, ধরে নিয়ে গিয়ে অত্যাচার, দিনের পর দিন অত্যাচারই করতে পেরেছে।’

বঙ্গবাজারে নতুন মার্কেটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ বিপণিবিতানে ক্ষতিগ্রস্তরা দোকান পাবেন। নতুন করে ব্যবসা শুরু করতে কোনো আর্থিক সহযোগিতার প্রয়োজন হলে তা আমি দেব। এই মার্কেট নতুন করে বাঁচার শক্তি দেবে ব্যবসায়ীদের।’ এ সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক নতুন ক্যাম্পাস গড়ে তোলা হবে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, ‘ঢাকার চারপাশে পাইকারি পণ্যের চারটি বড় বাজার তৈরি করা হবে। কেন না, শুধু কারওয়ান বাজার দিয়ে হবে না। ঢাকা শহরের জনসংখ্যা বেড়েছে অনেক।’

এর আগে রাজধানীর বঙ্গবাজারে পাইকারি নগর বিপণিবিতান, শেখ ফজলুল হক মণি সরণি, নজরুল সরোবর এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশুপার্ক উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।