জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে গান-কবিতা, পবিত্র কোরআনের সূরা ফাতিহা পাঠ ও আলোচনার সভার মাধ্যমে কবিকে স্মরণ করেছে দেশের বিভিন্ন স্তরের মানুষ।
গতকাল সকাল সোয়া ৬টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন জাতীয় কবির কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন শুরু হয়। শুরুতেই সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, বাংলা একাডেমি ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
এরপর সকাল সাড়ে ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামালের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে একটি শোভাযাত্রা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীরা কবির মাজারে যায় এবং শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে।
এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেদ্রীয় মসজিদের খতিব ড. এমাদউদ্দিন সূরা ফাতিহা পাঠ করেন এবং কবির আত্মার মাগফেরাতের জন্যে মোনাজাত পরিচালনা করেন। এরপর একে একে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল, ইনস্টিটিউট ও বিভাগ শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে।
সকাল পৌনে ৭টায় কবির মাজারের পাশে নজরুলের বিখ্যাত ‘আমরা একি বৃত্তে দুটি ফুল’ গানের মাধ্যমে শুরু হয় আলোচনা সভা পর্ব। আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন কবির পরিবারের সদস্যবৃন্দ, উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভুঁইয়া প্রমুখ।
আলোচনা সভায় উপাচার্য অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কোনো নির্দিষ্ট সময়ের কবি নন, তিনি তার কবিতা, গান ও সাহিত্যে অনাগত সময়কে ধারণ করেছেন। তিনি যুগোত্তীর্ণ ও কালোত্তীর্ণ একজন মানবতাবাদী ও সাম্যের কবি। এজন্য নজরুল চর্চার মাধ্যমে সমাজের বৈষম্য, রাষ্ট্রের বিভেদ, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের গণহত্যা, বর্বরতা, হত্যাযজ্ঞ ও অমানবিক অত্যাচার এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
উপাচার্য বলেন, আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন সাম্যের কবি, অসাম্প্রদায়িক ও মানবতার কবি। তিনি মানুষের জন্য কবিতা ও গান লিখেছেন, মানুষের মুক্তির কথা বলেছেন এবং ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষকে উজ্জীবিত করেছেন অসাম্প্রদায়িক চেতনায়। নজরুলের কবিতা, গান ও সাহিত্যকর্ম উপলব্ধি করে অসহায়, দরিদ্র, নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষের মুক্তির কথা সকলকে ভাবতে হবে। তার মানবিক, অসাম্প্রদায়িক ও সাম্যবাদী চেতনা-ধারণ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে যুদ্ধবিগ্রহ চলছে, তা বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
এ সময় দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দীন নাছিমসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এরপর ক্রমান্বয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, সাদ্দাম হোসেন ও শেখ ওয়ালি আসিফ ইনানের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা জানানো শেষে ওবায়দুল কাদের বলেন, অসাম্প্রদায়িক চেতনার কবি, বিদ্রোহী কবি, যৌবনের কবি কাজী নজরুল ইসলাম। কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের সংকটে, সংগ্রামে, মুক্তিযুদ্ধে তিনি অফুরান এক প্রেরণার উৎস। এরআগে সকাল ৭টার দিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) পক্ষ থেকে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে দলের নেতাকর্মীরা শ্রদ্ধা জানান। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস ও নাহিদুজ্জামান শিপনের নেতৃত্বে ঢাবি ছাত্রদল শ্রদ্ধা জানায়। এ সময় রুহুল কবির রিজভী বলেন, প্রতিবাদের ভাষায় নজরুল আমাদের যে শৈল্পিক নৈপুণ্য দেখিয়েছেন, সেই প্রতিবাদের ভাষা রপ্ত করেই আমরা আজও গণতন্ত্র ফেরানো, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার লড়াই অব্যহত রেখেছি। আমরা যখন কারাগারে যাই তখন নজরুলকে আমরা স্মরণ করি। আমাদের যখন বিচার হয়, তখন আমরা নজরুলকে স্মরণ করি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়ে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ বিদ্রোহী কবির আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।