ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

সমস্যার সমাধান হবে কবে?
অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

উপাচার্য এবং শিক্ষক সমিতির দ্বন্দ্বে ৩০ এপ্রিল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধে রয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে তৈরি হয়েছে অচলাবস্থা। রয়েছে সেশনজটের আশঙ্কা। কিন্তু শিগগিরই ক্যাম্পাস খোলার বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না কোনো পক্ষকেই। এর ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে এক ধরনের অনিশ্চয়তা। দিন দিন বাড়ছে হতাশা ও মানসিক চাপ।

সর্বশেষ গত রোববার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষক সমিতিকে আলোচনায় বসার জন্য চিঠি দেয়া হয়। তবে যেহেতু এই উপাচার্যকে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে আগেই অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে, তাই তার সাথে কোনো আলোচনায় বসবে না বলে জানায় তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত মার্চ মাসে ৭ দফা দাবিতে পরপর ৩ বার ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেয় কুবি শিক্ষক সমিতি। পরে গত ২৮ এপ্রিল উপাচার্যের নেতৃত্বে শিক্ষকদের মারধরের ঘটনায় উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে শিক্ষক সমিতি। পরবর্তীতে শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে জরুরি সিন্ডিকেট সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা দেয় কুবি প্রশাসন। তবে ক্যাম্পাস খুলে দেওয়া ও শিক্ষকদের মারধরের ঘটনার বিচার দাবিতে দফায় দফায় মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। প্রশাসন থেকে দুইটি ভিন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও তদন্ত কমিটি নিয়ে আপত্তি তুলেছেন শিক্ষক সমিতি। ফলে খুব সহসাই ক্যাম্পাস খোলার সম্ভাবনা কম বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে বিভিন্ন বিভাগের অন্তত আটটি চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে বলে জানিয়েছে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর। এছাড়া অন্তত সাতটি বিভাগের চূড়ান্ত পরীক্ষার প্রস্তাবিত রুটিন প্রকাশ স্থগিত রয়েছে বলে জানা গেছে।

আইসিটি বিভাগের শিক্ষার্থী শাহিন মিয়া বলেন, অনির্দিষ্টকালের বন্ধ মোটেই কাম্য নয়। প্রশাসন বা শিক্ষকদের কারো কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। সবচেয়ে বড় ক্ষতি হচ্ছে শিক্ষার্থীদের সেশনজট, মানসিক চাপ। ফাইনাল ইয়ারে পরিবারের সবাই তাকিয়ে থাকে কবে শেষ করে চাকরি পাবে। এভাবে চলতে থাকলে হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে অনেক শিক্ষার্থী ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আমরা আশাকরি শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে প্রশাসন অতি দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ব্যবস্থা করবে।

রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী মোরছালিন হোসাইন বলেন, আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা শুধু শুধু এমন ন্যক্কারজনক কর্মকাণ্ডের বলি হচ্ছি। এমনিতেই সেশনজটের কারণে আমাদের বিভাগ অন্যান্য বিভাগ থেকে ১ সেমিস্টার পিছিয়ে আছে। ১১তম ব্যাচের মাস্টার্স ও ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা অনার্সের রেজাল্ট এখনও পায়নি। তাই প্রশাসন এবং শিক্ষকদের নিকট আমাদের দাবি থাকবে, অতি দ্রুত ক্যাম্পাস খুলে দেয়া হোক।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কুবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, শিক্ষকরা আজ অস্তিত্ব সংকটে দাঁড়িয়ে আছে। শিক্ষার্থীরাও অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। আমাদের পক্ষ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া পূর্বক ক্যাম্পাস খুলে দেয়ার জন্য একাধিকবার দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন আমাদের কথা শুনছেন না। তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শিক্ষার্থীদের সেশনজট নিরসনে আমরা অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে হলেও পুষিয়ে দেব।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান সমস্যা নিরসনে দুটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে। আশা করি শিগগিরই ক্যাম্পাস খুলে যাবে। আর খোলার পর কতদিন ক্যাম্পাস বন্ধ ছিল, তার ওপর ভিত্তি করে আমরা রিকোভারি প্ল্যান করব।

এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজম্যান্ট বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ জামিনুর রহমান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এছাড়া কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম. আবদুল মঈনকে একাধিকবার কল করেও তার থেকে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত