ঢাকা ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

তৃতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচন কাল

ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে পেছানো হতে পারে ভোট

ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে পেছানো হতে পারে ভোট

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের তৃতীয় ধাপের ১০৯টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ আগামীকাল। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ করার কথা রয়েছে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে ভোটগ্রহণের জন্য সব প্রস্ততি শেষ করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেক্ষেত্রে পরিসিস্থতি উন্নতি না হলে ভোটের তারিখ পেছানো হতে পারে বলে ইসি সূত্র জানিয়েছে।

গতকাল নির্বাচন ভবনে সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেছেন, বৃষ্টির পানি যদি একদিনের মধ্যে না কমে যায়, তাহলে উপজেলাগুলোতে ভোটার উপস্থিতি ও ভোটের মালামাল পৌঁছানো কষ্টকর হয়ে যাবে। মাঠ প্রশাসন থেকেও এমন তথ্য পেয়েছেন তারা।

সচিব বলেন, এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, যেসব নির্বাচনি এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের পানি প্রবেশ করেছে, কোথাও কোথাও বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করেছে, কোথাও কোথাও গাছ উপড়ে পড়েছে, কোথাও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে, এসব বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন কমিশন মোট ১৯টি উপজেলার ভোটগ্রহণ আপাতত স্থগিত করেছে।

ইসি সচিব আরো বলেন, বাগেরহাটের শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ, মোংলা, খুলনা জেলার কয়রা, ডুমুরিয়া, পাইকগাছা, বরিশালের গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, পটুয়াখালী সদর, দুমকী, মির্জাগঞ্জ, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া, ভোলার তজুমদ্দিন, লালমোহন, ঝালকাঠির রাজাপুর, কাঁঠালিয়া, বরগুনার বামনা ও পাথরঘাটা এবং রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার ভোট স্থগিত করা হয়েছে।

তৃতীয় ধাপের ১০৯টি উপজেলার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে ১৯টির ভোট স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। এসব উপজেলায় ভোটগ্রহণ কি একেবারে অনুপযোগী, এমন প্রশ্নে মো. জাহাংগীর আলম বলেন, অনুপযোগী না। প্রথমত, সেখানে এখনও বৃষ্টি হচ্ছে আর পানি জমে আছে। তারাই সুপারিশ করেছেন, এসব ভোট পিছিয়ে দেওয়ার জন্য। আপাতত ভোট স্থগিত করা হয়েছে, পরে পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

আগামীকাল ২৯ মে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের তৃতীয় ধাপের ১০৯ উপজেলায় ভোটগ্রহণের কথা ছিল। এ উপলেক্ষে নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্টরা নির্বাচনের প্রস্ততি গ্রহণ করেছে। কিন্তু গত রোববার সন্ধ্যা থেকে ঘূর্ণিঝড় রিমাল উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে আঘাত হানে।

জানা যায়, উপজেলা নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে চট্টগ্রাম জেলার চন্দানাইশ উপজেলার চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আবু আহম্মেদ চৌধুরী এবং পাবনা জেলার ইশ্বরদী উপজেলার চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ইমদাদুল হকের প্রার্থিতা বাতিল করে ইসি। এ ধাপে আগেই একজন চেয়ার?ম্যানসহ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ছয়জন প্রার্থী।

এর আগে প্রথম ধাপের মতো দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনেও একচেটিয়া জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। ১৫৬ উপজেলার ১৩৬টিতে জিতেছেন দলটির নেতারা। এ ছাড়া বিএনপির বহিষ্কৃত ৬ নেতা, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের এক, জাতীয় পার্টির (জেপি) এক (পদত্যাগী), আঞ্চলিক দল থেকে দুই ও বাকিগুলোতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

দ্বিতীয় ধাপে ৭ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া দুটি উপজেলায় চেয়ারম্যান, সাধারণ ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীরা সবাই বিনা ভোটে জয়ী হয়েছেন।

এদিকে গত সোমবার সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রায় ৬৭ শতাংশই ব্যবসায়ী। কোটিপতি প্রার্থী রয়েছেন ১০৬ জন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে ৯০ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১১ ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ জন কোটিপতি। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপের প্রার্থীদের আয় ও সম্পদের তথ্য (হলফনামার ভিত্তিতে) বিশ্লেষণ করেছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। বিশ্লেষণে উঠে আসা তথ্য ও পর্যবেক্ষণ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানিয়েছে তারা।

ঘলফনামার হিসাব নিয়ে টিআইবি জানিয়েছে, প্রার্থীদের হলফনামায় অস্থাবর সম্পদের যে হিসাব দেওয়া হয়েছে, তার ভিত্তিতে কোটিপতির হিসাব করা হয়েছে। ভূমির মতো স্থাবর সম্পদের মূল্য নির্ধারণ কঠিন হওয়ায় তা কোটিপতির হিসাবে আনা হয়নি।

টিআইবির বিশ্লেষণে আরো দেখা যায়, তৃতীয় ধাপে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ৬৬ দশমিক ৫৩ শতাংশই নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১২ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ পেশা হিসেবে দেখিয়েছেন কৃষিকাজ। পেশার ক্ষেত্রে তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থানে রয়েছেন আইন পেশা (৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ) ও শিক্ষকতা (৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ)।

একইভাবে ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদেরও ৬৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ নিজেদের ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ৪৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ গৃহিণী। গৃহস্থলির কাজকে তারা পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাদের প্রায় ৩২ শতাংশ পেশায় ব্যবসায়ী।

২১ মে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের প্রায় ৭১ শতাংশ ছিলেন ব্যবসায়ী। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে কোটিপতি ছিলেন ১০৫ জন। এর আগে প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও চেয়ারম্যান প্রার্থীদের প্রায় ৭০ শতাংশ ছিলেন ব্যবসায়ী।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ব্যবসায়ীরা রাজনীতিতে সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় আসছেন কি না এবং মুনাফা করার উদ্দেশ্যে আসছেন কি না, সেটাই বড় প্রশ্ন। তথ্য বলছে, জনপ্রতিনিধি হিসেবে ক্ষমতায় থাকলে অনেকের আয় ও সম্পদ অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। ফলে জনস্বার্থের বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে না।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির পর্যবেক্ষণে বলা হয়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও ব্যবসায়ী প্রার্থীদের দাপট বাড়ছে। অন্যদিকে কৃষিজীবী ও শিক্ষকতায় যুক্ত প্রার্থীদের সংখ্যা কমছে।

টিআইবি বলছে, এবারের নির্বাচনে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েও মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের স্বজনদের অংশগ্রহণ থামাতে পারেনি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপেও মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের ১৮ স্বজন অংশ নিচ্ছেন। এর মধ্যে কুমিল্লার মুরাদনগরের সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর আলম সরকারের ছেলে আহসানুল আলম, নওগাঁর রানীনগরের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেনের ছেলে রাহিদ সরদার ও নরসিংদীর শিবপুরের সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লার স্ত্রী ফেরদৌসী ইসলাম চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন। এর আগে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপেও মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের ১৭ স্বজন অংশ নেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত