এক সপ্তাহেও মেলেনি এমপি আনারের লাশ

প্রকাশ : ২৯ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশের ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার কলকাতায় খুন হয়েছেন। তার মৃত্যুর খবর প্রকাশের প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেলেও এখনো পাওয়া যায়নি মরদেহ। বলা হচ্ছে, হত্যার পর টুকরো টুকরো করা হয় এমপি আনারের নিথর দেহ। তার মরদেহের সন্ধানে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছেন তদন্তকারীরা।

প্রথমে শোনা গিয়েছিল, ভাঙরের কৃষ্ণমাটি এলাকার বাগজোলা খালে ফেলা হয়েছিল এমপি আনারের দেহাংশ। কিন্তু কয়েকদিন ধরে সেখানে তল্লাশি চালিয়েও তার কোনো খোঁজ মেলেনি। এখন কলকাতার গোয়েন্দা সূত্র বলছে, সঞ্জীবা গার্ডেনসের যে ফ্ল্যাটে এমপি আনারকে হত্যা করা হয়, তার কমোড দিয়ে মরদেহের টুকরো ফ্ল্যাশ করে দেওয়া হতে পারে।

আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে বর্তমানে কলকাতায় অবস্থান করছে ডিবিপ্রধানের নেতৃত্বে চার সদস্যের গোয়েন্দা প্রতিনিধি দল। গতকাল দিনের শুরুতে নিউটাউনের ওয়েস্টিন হোটেল থেকে বেরোনোর সময় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এই মামলার গতিপ্রকৃতি নিয়ে কথা বলেন হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি এবং তদন্তকারী কর্মকর্তারা খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন। প্রথমে তারা যে খালটির কথা বলেছিলেন, সেখানে বেশ কিছুদিন ধরে সার্চ করেছেন। পাশাপাশি, আমরাও তাদের সঙ্গে আসছি। আমরা কিছু অনুরোধ করেছি। সঞ্জীবা গার্ডেনসের পাশে একটি হাতিশালা খাল রয়েছে। আমরা অনুরোধ করেছি, এটা যেন সার্চ করা হয়।

ডিবিপ্রধান আরো বলেন, আমরা আরেকটি অনুরোধ করেছি। যে বাসায় আমাদের সংসদ সদস্য ঢুকেছিলেন। সেটি যেন সার্চ করা হয়। সেখানে যে তিনটি কমোড রয়েছে, সেগুলো ফ্ল্যাশ করলে ময়লা যেখানে জমা হয় এবং যে স্যুয়ারেজ লাইন, সেটি ভাঙতে বলেছি। আশা করি, ওনারা এই কাজগুলো আজই করবেন।

এদিকে ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার নিখোঁজ, না খুন হয়েছেন? এ ধরনের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও স্বজনদের মধ্যে। তারা এমপি আনার খুন হলে তার মরদেহ অথবা নিখোঁজ হলে তার সন্ধান চান।

এ দাবিতে ঘোষণা করা হয়েছে মানববন্ধন কর্মসূচির। আজ বুধবার কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজারে ৩ ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে এই মানববন্ধনের ডাক দেয়া হয়েছে। এছাড়া আগামীকাল স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতিও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে বলে জানা গেছে।

গতকাল এমপি আনারের বাসার সামনে দলীয় নেতাকর্মী এবং স্বজনদের তেমন একটা দেখা যায়নি। আনারকন্যা ডরিনও সাংবাদিকদের সামনে আসেননি। বারোবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমরা বারোবাজার ইউনিয়ন পরিষদ, রাখালগাছি ইউনিয়ন পরিষদ ও কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করেছি। আমাদের দাবি এমপি আনার খুন হলে তার মরদেহ চাই। যদি এমপি নিখোঁজ থাকেন তাহলে তার সন্ধান চাই।

তিনি বলেন, একজন তিন বারের এমপি এভাবে গায়েব হয়ে যেতে পারেন না। আমাদের তার কোনো একটা আলামত দিতে হবে। অন্যদিকে একই দাবিতে আগামীকাল কালীগঞ্জ উপজেলা ব্যবসায়ী সমিতির উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচির ডাক দেয়া হয়েছে।

ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল ইসলাম ইনতা বলেন, এমপি আনার আমাদের ব্যবসায়ী সমিতির প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন। আমরা তার নিহতের প্রতিবাদ, হত্যাকারীদের গ্রেফতারসহ মাস্টারমাইন্ডকে গ্রেফতারের দাবি এবং এমপি হত্যা নিয়ে যে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে তা পরিষ্কার করার দাবিতে বৃহস্পতিবার কর্মসূচি দিয়েছি।

জানা যায়, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছিলেন ঝিনাইদহ ৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। এরপর খবর আসে, ১৩ মে তাকে কৌশলে ডেকে নিয়ে কলকাতার নিউটাউন এলাকার একটি আবাসিক ভবনে হত্যা করে লাশ টুকরো টুকরো করে ট্রলি ব্যাগে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে ফেলে দিয়েছে হত্যাকারীরা। এ ঘটনায় ভারত ও বাংলাদেশে ৬ জন গ্রেফতার হলেও মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীন যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক রয়েছে। আর হত্যা ঘোষিত হওয়ার কয়েকদিন পেরিয়ে গেলেও তার লাশের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

সূত্র জানায়, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকান্ডের মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীন ও তার সহযোগী সিয়ামকে ফেরাতে ইন্টারপোলে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্টার ব্যুরো (এনসিবি)।

হত্যাকাণ্ডের পর যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে গেছেন মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীন। আর তার সহযোগী সিয়াম পালিয়ে গেছেন নেপালে। এনসিবি জানিয়েছে, তদন্তের স্বার্থে ডিবির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সহায়তায় সংশ্লিষ্ট দেশ দুটির এনসিবির কাছে সহায়তা চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

গতকাল পুলিশ সদরদপ্তরের ইন্টারপোলের শাখা কার্যালয় ন্যাশনাল সেন্টার ব্যুরোর (এনসিবি) এআইজি আলী হায়দার চৌধুরী এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ডিএমপির পক্ষ থেকে সংসদ সদস্য আনার হত্যাকাণ্ডে জড়িত দুজনকে ফিরিয়ে আনতে আবেদন করা হয়েছে। সে পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ইন্টারপোলের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দুটি দেশকে চিঠি পাঠিয়েছি। দুজনকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সার্বিক সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।

পুলিশ সদরদপ্তরের ন্যাশনাল সেন্টার ব্যুরো (এনসিবি) সূত্রে জানা গেছে, সংসদ সদস্য আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে দুই দেশের পুলিশ যাকে শনাক্ত করেছে, সেই আক্তারুজ্জামান শাহীন নেপাল ও দুবাই হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। তাকে ফেরত পাঠানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এনসিবিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ইন্টারপোলের সহায়তায় সংশ্লিষ্ট দেশটির পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে। একই প্রক্রিয়ায় নেপালে পলাতক আনার হত্যাতাণ্ডে অন্যতম সহযোগী সিয়ামকে ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট দেশকে আগে ইন্টারপোলের সহায়তায় চিঠি পাঠানো হয়েছে। ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীনকে এরই মধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে। তার নির্দেশে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন বেশ কয়েকজন। তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত চারজন গ্রেফতার হলেও এখনো পলাতক চারজন।