ঘূর্ণিঝড় রিমাল

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের বিরাট ক্ষতি

প্রকাশ : ২৯ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রাহাত হুসাইন

ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে তলিয়ে গেছে মৎস্য চাষিদের স্বপ্ন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন গবাদি পশুর খামারিরা। ভারি বৃষ্টিপাত আর জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেছে মাছ, পোনা আর চাষকৃত কাঁকড়া। মরেছে গরু-ছাগল, ভেড়া আর হাস-মুরগি। বিনষ্ট হয়েছে পশুখাদ্যও। যার প্রভাব পড়তে পারে আসন্ন ঈদুল আজহার কোরবানির বাজারে। ঘূর্ণিঝড় রিমাল তছনছ করে দিয়ে গেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের নতুন উদ্যোক্তাদের জীবন। তাদের অনেকেরই এখন পথে বসার উপক্রম। মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, রিমালের প্রভাবে মৎস্যসম্পদ খাতে প্রায় ৮৫৮ কোটি ৬৭ লাখ ২৮ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ১৮টি জেলার প্রায় ৪৯ হাজার ২৩৬টি মাছের ঘের, ৩৪ হাজার ৭৭টি পুকুর এবং ৪ হাজার ৭১৯টি কাঁকড়ার ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর প্রাণিসম্পদ অধিদফতর হিসেবে মোতাবেক, রিমালের প্রভাবে ১২টি জেলার প্রাণিসম্পদ খাতে প্রায় ৪৭ কোটি ৯৫ লাখ ১৭ হাজার ৮১৬ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এতে মারা গেছে বেশকিছু ছাগল, ভেড়া ও হাঁস-মুরগিও।

খুলনার কয়রা উপজেলার দশহালিয়ায় ৭ বিঘা জমিতে চিংড়ি চাষ করেছিলেন সত্তার সানা। ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে তার ঘের তলিয়ে যায়। তিনি গত ৫ মাসে প্রায় ২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন এই ঘেরে। একইসঙ্গে ৭ বিঘা জমি তার লিজ নিতে খরচ হয়েছিল এক লাখ ২০ হাজার টাকা। ঘের দিয়ে জীবন বদলানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় রিমাল তার সেই স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে। তিনি বলেন, বছরে মাছ ধরার সিজন কেবল শুরু হয়েছিল। গত ৪ মাস ধরে কেবল বাগদা রেণু ছেড়েছি। এই পূর্ণিমাতে মাছ ধরা শুরু করেছি। ঠিক সেই সময়ে সর্বনাশ হয়ে গেল। একই গ্রামে তার মতো কমপক্ষে শতাধিক ঘেরের মালিক একইরকম পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পাদ খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পাদ খাত গভীর সংকটে পড়ছে। প্রান্তিক পর্যায়ের মাছ চাষি ও খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

যার প্রভাব আসন্ন ঈদে কোরবানির পশু বেচা-কেনার বাজারেও পড়বে। তবে দেশে মাংস ও দুধ উৎপাদন সচল রাখতে সরকারের সহায়তা বাড়াতে হবে। পশু খাদ্যের দাম বাড়ায় এরইমধ্যে বহু খামার বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারের বড় রকম সহায়তা ছাড়া প্রান্তিক খামারিরা টিকতে পারবেন না। প্রতিবছরই দেশে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো দুর্যোগ আঘাত হানে। তবে সরকারের সহায়তা পেলে খামারি ও মৎস্য চাষিরা দ্রুতই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে সুন্দরবনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে বনের হরিণ, বানর, বাঘসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণির ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বনের শুধুমাত্র কটকা এলাকা থেকে ৩৯টি মৃত হরিণ উদ্ধার করা হয়েছে। বনজুড়ে তল্লাশি চলছে, তাতে মৃত হরিণের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ। এছাড়া ঝড়ে বনের অভ্যন্তরে ২৫টি টহল ফাঁড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বনের ভেতরে লবণ পানি ঢুকে নষ্ট হয়েছে অন্তত ৮০টি মিষ্টি পানির পুকুরও। সুন্দরবন একাডেমির বন গবেষক ও পরিচালক ফারুক আহমেদ বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ে বন্য প্রাণীর এত বিশাল ক্ষতি হয়েছে, যা পূরণ করা কখনোই সম্ভব হবে না।

বন্য প্রাণীর সুরক্ষায় বনের মধ্যে উঁচু পানির ঢিবি তৈরি, সুপেয় পানির পুকুরগুলোর পাড় উঁচু করাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।’