ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

যেসব কারণে বাড়ল ওয়াসার পানির দাম

যেসব কারণে বাড়ল ওয়াসার পানির দাম

রাজধানীতে বছরজুড়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে পানি সরবরাহ করে আসছে ঢাকা ওয়াসা। চব্বিশ ঘণ্টা পাইপলাইনে পানি সরবরাহের পাশাপাশি গরমে জনবহুল পয়েন্টে পয়েন্টে গাড়িতে করে খাবার পানি সরবরাহ করছে। তবে চলমান দাবদাহে পানির চাহিদা বেড়েছে। সেই বাড়তি চাহিদা পূরণে পানির উৎপাদনও বাড়ায় সংস্থাটি। তবে বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে পানির উৎপাদন ও মেইনটেন্যান্স খরচ আগের তুলনায় বেশি হয়েছে। চলমান মুদ্রাস্ফীতি সমন্বয়ে আগামী ১ জুলাই থেকে আবাসিক ও বাণিজ্যিক সংযোগের প্রতি ১ হাজার লিটার পানির মূল্য ১০ শতাংশ হারে সমন্বয় করে ১৫ দশমিক ১৮ টাকার স্থলে ১৬ দশমিক ৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাণিজ্যিকে ৪২ টাকার স্থলে ৪৬ দশমিক ২০ টাকায় নির্ধারণ করা হয়।

ওয়াসার সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা গেছে, ঢাকা মহানগরীতে প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ মানুষের পানির চাহিদা পূরণে প্রতিদিন ২২০-২৩০ কোটি লিটার পানি লাগে। তবে গরমের মৌসুমে পানির চাহিদা ২৮০-২৮৫ কোটি লিটারে পৌঁছায়। যেখানে ঢাকা ওয়াসার প্রতিদিন প্রায় ২৯০ কোটি লিটার পর্যন্ত পানি সরবরাহের সক্ষমতা রয়েছে। বর্তমানে পানির চাহিদা বেড়েছে, আর পানি উত্তোলন বিদ্যুৎ ও জনশক্তির প্রয়োজন আছে। এখন বিদ্যুতের দাম বাড়ছে, মেইনটেন্যান্স খরচ বেড়েছে। আবার পানির পাম্পের যন্ত্রাংশ বিদেশ থেকে আমদানির খরচ বেড়েছে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে পানির দাম সমন্বয় করা হয়েছে।

জানা গেছে, মহানগরীর পানির চাহিদা পূরণে ৯৬০টি গভীর নলকূপ রয়েছে ওয়াসার। তীব্র গরমে পানির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এখন প্রতিদিন ৯৯০টি পাম্প দিয়ে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে সরবরাহ করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ও অ্যান্ড এম) প্রকৌশলী একেএম সহিদ উদ্দিন আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, ঢাকা ওয়াসার এক লিটার পানির দাম বেড়েছে .০১৫২ টাকা, এতে বর্তমানে এক লিটার পানির দাম হয়েছে .০১৬৭ টাকা। যেখানে বাজারে এক লিটার পানি কিনতে গেলে ১৫ টাকা লাগে। বিদ্যুতের দাম বেড়েছে, ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বেড়েছে। সেখানে পানির দামের সঙ্গে সমন্বয় করতেই হবে। নইলে সংস্থাটি চালানো কষ্টকর হয়ে পড়বে।

ঢাকা ওয়াসার তথ্য বলছে, ঢাকা মহানগরীতে ১০টি জোনে ভাগ করে পানি সরবরাহ করা হয়। সেখানে ৯৬০টি পাম্প রয়েছে। বেসরকারি পর্যায়ে ২ হাজারের অধিক গভীর নলকূপের অনুমোদন রয়েছে।

গতকাল ঢাকা ওয়াসা গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। বিজ্ঞাপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা ওয়াসা আইন ১৯৯৬-এর ২২ ধারা অনুযায়ী মুদ্রাস্ফীতি সমন্বয় করার লক্ষ্যে আগামী ১ জুলাই থেকে আবাসিক ও বাণিজ্যিক সংযোগের প্রতি ১ হাজার লিটার পানির মূল্য ১০ শতাংশ হারে সমন্বয় করে ১৫.১৮ টাকার স্থলে ১৬.৭০ টাকা নির্ধারণ করা হচ্ছে। অন্যদিকে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ৪২ টাকার স্থলে ৪৬.২০ টাকায় নির্ধারণ করা হলো। এ সিদ্ধান্ত মিটারবিহীন হোল্ডিং, গভীর নলকূপ, নির্মাণাধীন ভবন ও ন্যূনতম বিলসহ সকল প্রকার (পানি ও পয়ঃ) অভিকরের ক্ষেত্রেও কার্যকর হবে। ওয়াসা আইন ১৯৯৬-এর ২৩ ধারা অনুযায়ী এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।

সর্বশেষ ২০২১ সালের জুলাইয়ে ঢাকা ওয়াসা পানির দাম বাড়িয়েছিল। ২০২২ সালেও পানির দাম বাড়াতে চেয়েছিল ঢাকা ওয়াসা। কিন্তু তখন ওয়াসা কর্তৃক পানির দাম বাড়ানোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট হয়। বিধি প্রণয়ন না করে ওয়াসার পানির মূল্যবৃদ্ধি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দেন হাইকোর্ট। এরপর এত দিন পানির দাম বাড়ানোর বিষয়টি স্থগিত ছিল।

ঢাকা ওয়াসার কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, ২০০৯ সালের আগ মুহূর্তে ঢাকা শহরে ৬০ থেকে ৭০ ভাগ মানুষ পানি পেত। বাকি মানুষ পানির জন্য হাহাকার করতেন। কারণ ওয়াসার পর্যাপ্ত পানি সরবরাহের ব্যবস্থা ছিল না। বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার পানি উৎপাদন ঢাকা শহরের মানুষের চাহিদার চেয়ে বেশি। ২০০৮ সালে পানি সংকটে ঢাকাবাসী অর্ধেক বেলা পানি পেতেন আর অর্ধেক বেলা পানি পেতেন না। সেই ভোগান্তি থেকে মানুষ রেহাই পেয়েছেন। এখন ওয়াসার পাইপলাইনে ২৪ ঘণ্টাই পানি থাকে। রাজধানীতে পানি নিয়ে কোনো রাজনৈতিক মহল আন্দোলন কিংবা সমালোচনা করতে পারেন না। পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করতে পারা, এটি ওয়াসার বিরাট অর্জন। ওয়াসার এমন সফলতার পেছনে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহযোগিতা আছে।

বর্তমানে ই-সেবায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে ই-বিলিং, ই-জিপি, ই-পানি ও পয়োঃসংযোগ, ই-নথি, ই-রিক্রুটমেন্টসহ প্রায় সবক্ষেত্রেই ডিজিটাল সিস্টেম তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে ঢাকা ওয়াসা। এ ছাড়া পানির পাম্পে এসসিএডিএ স্থাপন করে ওয়েব ও মোবাইল অ্যাপ দ্বারা গভীর নলকূপের অপারেশন, কন্ট্রোল ও মনিটরিংয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করে ঢাকা ওয়াসা পরিচালন ব্যয় কমিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। অন্যদিকে এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং বাস্তবায়নের পদেক্ষপ গ্রহণ করা হয়েছে। আইওটি ও জিআইএস ব্যবহার করে স্মার্ট ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম প্রক্রিয়া চলমান। এর মাধ্যমে সব মিটার, বাল্বসহ অন্যান্য সবকিছু স্মার্ট ব্যবস্থাপনার দিকে যাচ্ছে ঢাকা ওয়াসা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত