ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বিচ্ছিন্ন ঘটনায় তৃতীয় ধাপে উপজেলা নির্বাচন

ধানকাটা না থাকলেও ভোটার উপস্থিতি কম

ভোট পড়েছে প্রায় ৩৫ শতাংশ : সিইসি
ধানকাটা না থাকলেও ভোটার উপস্থিতি কম

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে ৮৭ উপজেলায় ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল ৮টায় শুরু হয়ে বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। এবারের নির্বাচনেও অধিকাংশ উপজেলার ভোটকেন্দ্রে ছিল ভোটার খরা। কিছু জায়গায় সংঘর্ষ, প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আটক, আচরণবিধি লঙ্ঘন-অনিয়ম ও ইভিএম মেশিন বিকলসহ বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটেছে। অনিয়মের অভিযোগে কয়েকটি কেন্দ্রের এজেন্টদের কারাদণ্ড হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, বর্তমানে দেশে ধানকাটা নেই, সে কারণে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার বড় কোনো কারণ নেই। তারপরও ইসি ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে উৎসাহিত করতে পারেনি। আগামী ধাপে ইসি উদ্যোগ না নিলে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো সম্ভব হবে না।

সূত্র জানায়, তৃতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সারা দেশে ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল অনেক কম। এ নির্বাচনে শতাংশের ৩৫ ভোট পড়েছে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, উপজেলা নির্বাচনের তৃতীয় ধাপের ৮৭ উপজেলায় প্রায় ৩৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, এক হাজার ১৫২ জন প্রার্থী ছিলেন। ইভিএমে ১৬ উপজেলায় বাকিগুলো ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। অবাধ নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এই লক্ষ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনেক তৎপর ছিল।

তিনি বলেন, খুবই সীমিত পরিসরে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। ভোট কারচুপির চেষ্টায় ৩০ জনকে আটক করা হয়েছে। দুইজনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সংঘর্ষ ঘটনায় ৬ জন আহত হয়েছে। একজন প্রিজাইডিং অফিসার অসুস্থ হয়ে মারা গেছে। এর আগে দুপুর ১২টার দিকে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব বলেন, মোবাইল নেটওয়ার্ক ঠিকমতো কাজ না করায় এখন পর্যন্ত ঠিক কত শতাংশ ভোট পড়েছে তার পুরো তথ্য সংগ্রহ করতে পারছি না। এজন্য ম্যানুয়ালি তথ্য সংগ্রহ করছি। যে কেন্দ্রগুলোর তথ্য পেয়েছি সেখানে ২০ শতাংশের নিচে ভোট পড়েছে বলে জানা গেছে, এটা প্রাথমিক তথ্য। দুপুর ১২টা পর্যন্ত কোথাও ১৫, কোথাও ১৬, কোথাও ২০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি।

তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে রাজশাহী, ফরিদপুর, কুমিল্লা, ফেনী, রংপুর, নীলফামারী, কুষ্টিয়া, পাবনা, নোয়াখালী, বগুড়া, সুনামগঞ্জ, জামালপুরসহ অধিকাংশ জেলার ভোটকেন্দ্রে সারা দিন ভোটার উপস্থিতি কম দেখা গেছে। বিভিন্নস্থানে বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনাও ঘটেছে।

নোয়াখালীতে সদর, বেগমগঞ্জ ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হয়েছে। এরই মাঝে কোম্পানীগঞ্জ চেয়ারম্যান প্রার্থী গোলাম শরিফ চৌধুরী পিপুলের (আনারস) একজন সমর্থককে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছেন অপর প্রার্থী মিজানুর রহমান বাদলের (দোয়াত-কলম) সমর্থকরা।

গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার চরএলাহী ইউনিয়নে চরএলাহী বাজারে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী আবদুল আজিজ চর এলাহী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাকের বড় ভাই।

এছাড়া এ উপজেলায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোটভাই শাহাদাত হোসেনসহ (টেলিফোন) দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। অপর প্রার্থী হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল (দোয়াত-কলম)। গতকাল দুপুর ১২টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ভোট ডাকাতি, কেন্দ্র দখল, জাল ভোটসহ এজেন্ট বের করে দেওয়ার অভিযোগ তুলে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন তারা। সুনামগঞ্জে ভোটকক্ষের ভেতরে দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করার অপরাধে মাসুক মিয়া নামের এক এজেন্টকে ছয় মাসের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। মাসুক মিয়া দোয়ারাবাজার উপজেলার চেয়ারম্যানপ্রার্থী আরিফুল ইসলাম জুয়েলের দোয়াত-কলম প্রতীকের এজেন্ট। সকালে দোয়ারাবাজার সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের ৭নং কক্ষ থেকে তাকে আটকের পর জেল ও জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট আব্দুল হালিম।

বগুড়ায় নমুনা প্রতীকের সঙ্গে ব্যালট পেপারের প্রতীকের মিল না থাকায় সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের (পুরুষ) ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে বগুড়ার অতিরিক্ত নির্বাচন কর্মকর্তা ও তৃতীয় ধাপের নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা সৈয়দ আবু ছাইদের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম ভোট স্থগিতের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। এর আগে নমুনা প্রতীকের সঙ্গে ব্যালট পেপারে প্রতীকের অমিল থাকার অভিযোগ তোলেন ইফতারুল ইসলাম মামুন নামের এক প্রার্থী। তিনি আইসক্রিম প্রতীকে বগুড়া সদর উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট করছেন।

তবে যশোরের বাঘারপাড়া ও অভয়নগর উপজেলায় ভোটারদের ভালো উপস্থিতি চোখে পড়ে। সকাল ৮টায় শুরু হয়ে এ ভোটগ্রহণ বিরতিহীনভাবে চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। দুটি উপজেলায় মোট ১৫১টি ভোটকেন্দ্রে ইভিএম মেশিনের মাধ্যমে এ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর আগে যশোরের পাঁচটি উপজেলা যথাক্রমে মনিরামপুর, কেশবপুর, শার্শা, ঝিকরগাছা ও চৌগাছা উপজেলা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। বিগত পাঁচটি উপজেলা থেকে বাঘারপাড়া উপজেলা নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেশি ছিল।

ফেনী সদর, দাগনভূঞা ও সোনাগাজী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জাল ভোট দিতে গিয়ে সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও পোলিং এজেন্টসহ বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র থেকে ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে তাদের আটক করা হয়। পুলিশ জানায়, সকালের দিকে জাল ভোট দেওয়ার চেষ্টা করলে সদর উপজেলার ফেনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে ৬ জন, পিটিআই কেন্দ্রে থেকে একজন পোলিং এজেন্ট ও একজন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, দাগনভূঞা উপজেলার গজারিয়া কেন্দ্রে একজন এবং সোনাগাজী উপজেলার রাজাপুর মাস্টার মুজিবুল হক একাডেমি কেন্দ্রে থেকে একজনকে আটক করা হয়। এদিকে পাবনা সদর উপজেলায় ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণভাবে চললেও ৯৫ শতাংশ ভোটকেন্দ্রের মেশিন বিকল বলে অভিযোগ করেছেন নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। ভোটকেন্দ্রে ভোটারের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। এজন্য ভোটগ্রহণ ধীরগতি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। গতকাল দুপুর দেড়টার দিকে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক আলহাজ কামিল হোসেন এমন অভিযোগ করেন। তৃতীয় ধাপে ১০৯ উপজেলায় ভোটগ্রহণের কথা থাকলেও ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে গত সোমবার ১৯টি এবং মঙ্গলবার ৩টি উপজেলার ভোট স্থগিত করে কমিশন। ফলে গতকাল ৮৭টি উপজেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের এ ধাপে ১ হাজার ১৫২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এরমধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৩৯৭ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৫৬ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৯৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত