গণতন্ত্র আছে বলেই দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ধারাবাহিকভাবে দেশে গণতন্ত্র আছে বলেই দুর্যোগ-দুর্বিপাকে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি। মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়। আওয়ামী লীগ জনগণ ও দেশের উন্নয়নে সর্বদা আন্তরিকভাবে নিবেদিত। আমরা আপনাদের পাশে আছি, ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার জন্য যা যা করা দরকার সব ধরনের সহযোগিতা আমরা করব।’ গতকাল পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনের আয়োজিত কলাপাড়ায় সরকারি মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস ডিগ্রি কলেজে ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেলিকপ্টার থেকে পটুয়াখালী জেলার মঠবাড়িয়া ও পাথরঘাটা এলাকায় ঘূর্ণিঝড় রিমেলের ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র পরিদর্শন করেন।

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি আপনারা নিজেরাই দেখতে পাচ্ছেন। রাস্তাঘাট, স্কুল, কলেজ করে দিয়ে আপনাদের যোগাযোগ ও বিদ্যুতের ব্যবস্থাসহ সব করে দিয়েছি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই এইসব উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। অনেক লোকই তো ক্ষমতায় ছিল, কিন্তু তারা এই অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য কিছুই করেনি। মানুষের মৌলিক চাহিদা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার জন্য যা যা করা দরকার, আওয়ামী লীগ সরকার তা করে যাচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিক করে দিয়েছি, সেখান থেকে বিনামূল্যে ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ আর বিনা পয়সায় বই দিচ্ছি। মায়ের নামে আমরা বৃত্তির টাকা পাঠাই। যারা একেবারে হতদরিদ্র, বিনা পয়সায় খাদ্য সাহায্য দিই। এখন দ্রব্যমূল্য বেড়েছে, যারা কিনতে পারে না, তাদের জন্য পারিবারিক কার্ড করে দিয়েছি। অল্প টাকায় চাল, ডাল, তেল কিনে নিতে পারবে, সেই ব্যবস্থাটাও আমরা করে দিয়েছি। দেশের মানুষ যেন না খেয়ে কষ্ট না পায়, সেটিই আমাদের লক্ষ্য। পাশাপাশি মানুষের সার্বিক উন্নতির জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’

রাস্তাঘাটের উন্নয়নের জন্য এখন সব জায়গায় খুব সহজেই যাওয়া যায় জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আজকে ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে এই পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ৫ থেকে ৬ ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছানো যায়। আগে কিন্তু আসা যেত না। পাশাপাশি গ্রামেগঞ্জে রাস্তাঘাট করে দিয়েছি। এই দক্ষিণাঞ্চল সবচেয়ে অবহেলিত ছিল।’

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে এবারে খুবই অস্বাভাবিক জলোচ্ছ্বাস হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মানুষ তাদের করে দেওয়া সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রয় পেয়েছে। ইতোমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভেঙে যাওয়া বাঁধ নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছে। যাতে বর্ষার আগেই এগুলো পুনর্নিমাণ করে মানুষকে জলোচ্ছ্বাস বা পানির হাত থেকে বাঁচাতে পারা যায়। প্রশাসনের সঙ্গে বসে হিসাব নিরূপণ করে যেখানে যাদের ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে সেগুলোও সংস্কারের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ধানকাটা শেষ হয়ে গেলেও তরিতরকারি ও খেতের ফসল যা নষ্ট হয়েছে, কৃষকরা যেন নতুন উদ্যমে আবার চাষাবাদ করতে পারেন, সেজন্য বীজ ও সার প্রদানসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে সরকারের পক্ষ থেকে। আমরা চাই আমাদের এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি থাকবে না। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই পদক্ষেপ নিচ্ছি।‘

এই অঞ্চলে সেনানিবাস ও নৌবাহিনী ঘাঁটি, পায়রা বন্দর প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারে এসেছে বলেই এই এলাকার সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। এর আগে অনেকে সরকারে থাকলেও কেউ এদিকে দৃষ্টি দেয়নি। এই অঞ্চল অবহেলিত ছিল। এই অঞ্চলের মানুষ প্রতিনিয়ত প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে। প্রতিনিয়ত জীবন যুদ্ধে লিপ্ত হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসবে কিন্তু সেটাকে মোকাবিলা করে মানুষের জীবন-মান রক্ষা করাই তার সরকারের লক্ষ্য এবং সেই কাজই তারা করে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, বাবা-মা-ভাই সব হারিয়ে নিঃস্ব-রিক্ত তিনি জনগণের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন কারণ, তার বাবা এই দেশের মানুষের জন্যই সারাজীবন কষ্ট করেছেন। এই দেশের জনগণের ভাগ্য তিনি পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। আজ তারা বাংলাদেশ ডিজিটাল করেছেন আগামীতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক ‘উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট সোনার বাংলাদেশ’ গড়ে তুলবেন।

যুব সমাজের মাঝে উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে তাদের জন্য বিনা জামানতে ঋণ প্রদান, স্টার্ট আপ প্রোগ্রাম, ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠাসহ কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বেকারের সংখ্যা এখন মাত্র তিন ভাগ। ইনশাআল্লাহ সেটাও থাকবে না। তবে, নিজেকে উদ্যোক্তা হতে হবে এবং কেবল চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেদের উদ্যোগ নিতে হবে।’

কোলাপাড়া আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নির্মল নন্দীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিবুর রহমান, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন প্রমুখ।