ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

উপজেলা নির্বাচন

ভোট অনিহায় তৃণমূলে বাড়বে দুর্বল নেতৃত্ব

ভোট অনিহায় তৃণমূলে বাড়বে দুর্বল নেতৃত্ব

উপজেলা ভোটে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের মতো তৃতীয় ধাপের নির্বাচনেও ভোটারের মধ্যে অনিহা দেখা গিয়েছে। এর ফলে তৃণমূল পর্যায়ে দলগুলোর মধ্যে বাড়বে দুর্বল নেতৃত্ব। কেননা নির্বাচনটি প্রতিযোগিতামূলক হলে সবল নেতৃত্ব চলে আসতে পারত। এবার উপজেলা নির্বাচনে ৪৪টি দলের মধ্যে ২৬টি দল অংশগ্রহণ করেছে। এর মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি দল সব ধাপে প্রার্থী দিয়েছে। অধিকতর যোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত না হওয়ায় তৃণমূলে দুর্বল নেতৃত্ব বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছিল আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্ররা। এর পর থেকে বিভিন? স্থানীয় সরকারের নির্বাচনেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ার প্রবণতা বাড়তে থাকে। ২০১৯ সালের উপজেলা নির্বাচনে বিনা ভোটে চেয়ারম্যান হন ১১১ জন। এবার এখন পর্যন্ত ১৫ জন চেয়ারম্যান হয়েছেন বিনা ভোটে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ার সংখ্যা কমলেও প্রার্থীরা খুব একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারছেন না। আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য সব দলে নতুন করে শক্তিশালী নেতৃত্ব আসছে না।

উপজেলার ভোটের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দ্বিতীয় ধাপে ১৫৬টি উপজেলার নির্বাচনে ৭১টিতেই জয়ী প্রার্থীর সঙ্গে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর ভোটের ব্যবধান বিপুল। প্রথম ধাপে অন্তত ৬৩টি উপজেলায় তেমন একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা যায়নি। তৃতীয় ধাপের ৮৭ উপজেলায় তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি।

এদিকে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিদায়ী সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেছেন, তৃতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৮৭ উপজেলায় ৩৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। তবে, ভোট পড়ার এ হার আরও বাড়তে পারে। কারণ এখনও ৮৭ কেন্দ্রের পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে, ইসির নতুন সচিব শফিউল আজিম বলেছেন, আমরা তো রাজনীতির ভেতরেই বসবাস করি। গণতন্ত্র, সরকার, রাজনৈতিক দল ও জনগণ সবকিছু মিলিয়েই গণতন্ত্র। কাউকে আইনের বাইরে গিয়ে সেবা দেওয়া যাবে না। আপনাদের যেটি প্রাপ্য সেটি শতভাগ দেওয়া সম্ভব।

জানা যায়, বিএনপি বর্জন করায় উপজেলা নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে কাউকে দলীয় প্রতীক দেয়নি আওয়ামী লীগ। যে কারণে আওয়ামী লীগের নেতারাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন।

এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেন, গত কয়েক বছর ধরে লাগাতার একপাক্ষিক নির্বাচন হচ্ছে। এ কারণে মানুষেরও নির্বাচনের প্রতি আগ্রহ থাকছে না, ভোটের হার কমে যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলের মধ্যে আগ্রহ কমছে।

শাহনেওয়াজ বলেন, স্বাভাবিকভাবে বিএনপি ছাড়া প্রতিপক্ষ একটি দল থেকেই যখন প্রার্থী হয়, তখন ভোটারদের মধ্যে আর আগ্রহ থাকে না কেন্দ্রে যাওয়ার। রাজনৈতিক দলের প্রতি ভোটারদের সমর্থনের বাইরেও আরো বেশ কিছু কারণকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলেছেন, নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর ইদানীং সরকারি দলের একটা বড় প্রভাব থাকার কারণে মানুষ আর কেন্দ্রমুখী হচ্ছেন না, যে কারণে কমছে ভোটার উপস্থিতি।

স্থানীয় সরকার বিশ্লেষক ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, নির্বাচনে জিততে প্রার্থীরা এখন আর ভোটারদের কাছে যাচ্ছে না। তারা যাচ্ছে সরকারি দল কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। এ কারণে ভোটাররাও গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছে। ভোটের প্রতি মানুষের এই আগ্রহ একদিনে কমেনি। সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে অনিয়মের কারণে আস্তে আস্তে নির্বাচনব্যবস্থার প্রতি মানুষের খুব ক্ষোভ আর অনীহা তৈরি হয়েছে।

ইসির অতিরিক্ত সচিব দেবনাথ বলেন, এমন তো কোনো নিয়ম নাই এত ভোট না পেলে কেউ জিতবে না। নিয়ম হলো প্রদত্ত ভোটের মধ্যে যে বেশি পাবে সে জিতবে। আমরা আইন মেনে ভোট আয়োজন করতে বাধ্য।

এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি বিএনপি। অংশ নিচ্ছে না সাম্প্রতিক উপজেলা নির্বাচনেও। বরং উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়া অনেক নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপি নেতারা বলছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না দলটি।

সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরকালে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক শেষে মার্কিন সহকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আমাদের জনগণের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা করতে কাজ করছি। এখানে সংঘাতমুক্ত, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে উৎসাহিত করতে যুক্তরাষ্ট্র অনেক কঠোর পরিশ্রম করেছে। আমরা পেছনে নয়, সামনে তাকাতে চাই। আমরা আমাদের সম্পর্ক জোরদারের উপায় বের করতে চাই।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, জাতীয় সংসদ বা স্থানীয় সরকারই হোক, সব ধরনের ভোটেই মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এর প্রতিফলন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর উপজেলায়ও দেখা যাচ্ছে। বিষয়টি গণতন্ত্রের জন্য বড় ধরনের অশনিসংকেত। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর জনগণের আস্থা অর্জনের চেষ্টা চালাবে বলে ওয়াদা করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা সেই আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। বিরোধী বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের বর্জনের মুখে অনুষ্ঠিত এসব নির্বাচনে মানুষের আগ্রহ নেই। ফলে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে কমিশনের কোনো উদ্যোগে কাজে আসছে না। সেজন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনমুখী করতে আগে রাজনৈতিক সমাধানে আসতে হবে। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী, আগামী ৫ জুন চতুর্থ ধাপে ৫৫টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত