ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কালুরঘাটে ওয়াকওয়ে চালু হবে কোরবানি ঈদের পর

সেতু দিয়ে গাড়ি চলবে জুলাই থেকে
কালুরঘাটে ওয়াকওয়ে চালু হবে কোরবানি ঈদের পর

চট্টগ্রাম শহরের সাথে দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষগুলোর একমাত্র সংযোগ সড়ক কালুরঘাট সেতু। বহু মানুষ এ সেতু পার করে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, গত বছর সংস্কারের জন্য কাজ শুরু হলেও এখনো সেতুটি ব্যবহার উপযোগী হয়ে উঠেনি। ফেরিযোগে মানুষজন সেতুর এক পাড় হতে অন্য পাড়ে যাতায়ত করছেন। অর্থ সংকটে বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে কালুরঘাট সেতুর সংস্কারকাজ।

সূত্র জানায়, গত বছরের ১ আগস্ট থেকে কালুরঘাট সেতুর সংস্কারকাজ শুরু হয়। এর আগে ১৮ জুন বুয়েটের পরামর্শ অনুযায়ী সেতুটি মেরামতের জন্য রেলওয়ের সাথে ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের চুক্তি স্বাক্ষর হয়। প্রথম দফায় গত বছরের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সেতুর সংস্কারকাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে সংস্কারকাজ শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ পর্যন্ত বেশ কয়েক দফায় সেতুরটির সংস্কার কাজ শেষের মেয়াদ বাড়ানো হয়। এ সেতুটি সংস্কার করে কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচলের পাশাপাশি বোয়ালখালীসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামে যানবাহন চলাচল উপযোগী করে তোলার লক্ষ্যে ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের সাথে ৪৩ কোটি টাকায় সংস্কারের চুক্তি হয় রেলওয়ের। বুয়েটের বিশেষজ্ঞ টিমের তত্ত্বাবধানেই সেতুটির সংস্কার কাজ করছে ম্যাক্স। বিষয়টি নিশ্চিত করে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সেতু প্রকৌশলী জিসান দত্ত জানান, সেতুতে প্রথমবারের মতো যুক্ত হওয়া ওয়াকওয়ের কাজ শেষ হয়েছে। কোরবানির ঈদে সেতুর ওয়াকওয়ে দিয়ে উভয় পাড়ের মানুষ চলাচল করতে পারবে। ঈদে মানুষ নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারবে। জুলাই থেকে সেতু দিয়ে গাড়ি চলাচল করতে পারবে। জুনের মধ্যে সেতুর সংস্কারকাজ শেষ হবে। প্রথমবারের মতো এবার সেতুর উভয় পাশে মানুষ পায়ে হেঁটে পারাপারের জন্য ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে।

রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী জানান, আগামী ঈদুল আজহার (কোরবানির ঈদ) আগে সেতুর উভয় পাশে প্রথমবারের মতো নির্মিত ওয়াকওয়ে খুলে দেয়া হবে। কোরবানির ঈদে উভয় পাড়ের মানুষ ওয়াকওয়ে দিয়ে চলাচল করতে পারবে। তবে সেতু দিয়ে গাড়ি চলবে আগামী জুলাই থেকে। সংস্কাররত কালুরঘাট সেতু দিয়ে আগামী কোরবানির ঈদে উভয় পাড়ের মানুষ যাতায়াত করতে পারবে। অর্থ সংকটের কারণে সেতুর কাজ বিলম্ব হওয়ার কারণ জানিয়ে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী জানান, সেতুর মেরামত কাজের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তিকৃত ৪৩ কোটি টাকার মধ্যে এ পর্যন্ত মাত্র ১৫ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। পুরো সেতুর সংস্কারকাজ শেষ হওয়ার আগে রেল কর্তৃপক্ষ প্রথমে কক্সবাজার রুটে ট্রেন চালুর জন্য সেতুর ট্রেন লাইনের সংস্কার কাজ শেষ করে ট্রেন চলাচলের উপযোগী করে তোলে। গত বছরের ১ ডিসেম্বর পর্যটন নগরী কক্সবাজার রুটে প্রথমবারের মতো যাত্রীবাহী (কক্সবাজার এক্সপ্রেস) ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এর আগে গত বছরের ১১ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার আগে ৫ নভেম্বর সংস্কাররত কালুরঘাট সেতু দিয়ে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম থেকে ট্রায়াল রানের ট্রেন পর্যটন নগরী কক্সবাজার যায়। এখন সেতুর ওপর দিয়ে কক্সবাজার রেল রুটে প্রতিদিন দুটি আন্তঃনগর ট্রেন এবং একটি স্পেশাল ট্রেন এবং দোহাজারী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তেলবাহী ট্রেন চলাচল করছে।

উল্লেখ্য, গত ৩০ এপ্রিল দুপুরে কর্ণফুলী নদীর পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত একটি ডক ইয়ার্ডে যাওয়ার সময় তীব্র বাতাস আর জোয়ারের কারণে এমভি সামুদা-১ নামের একটি লাইটার জাহাজ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সংস্কারাধীন কালুরঘাট সেতুতে এসে ধাক্কা দেয়। এতে সেতুর ওয়াকওয়ের রেলিং ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে মূল স্ট্রাকচারে বড় ধরনের তেমন ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন সেতুর সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা। এই কারণে সেতুর সংস্কারকাজ আরো দুই মাস পিছিয়ে যায়।

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর ওপর নির্মিত ১৯৩১ সালে নির্মিত হয় কালুরঘাট রেলসেতু। কালুরঘাট রেল সেতুর বয়স বর্তমানে প্রায় ৯৪ বছর। ১৯৬২ সালে যান চলাচল শুরু হয়। এর আগে দুইবার সংস্কার করা হয়েছিল।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত