ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর

আড়াই বছরে ৪৬০ কেজি স্বর্ণ আটক

আড়াই বছরে ৪৬০ কেজি স্বর্ণ আটক

স্বর্ণ চোরাচালানের নিরাপদ রুটের তালিকার প্রথম সারিতে উড়োজাহাজ। এরপরেই নৌ-স্থলপথে স্বর্ণ নিয়ে আসছেন চোরাকারবারীরা। আড়াই বছরে এসব রুটে অভিযান চালিয়ে ৪৬০ কেজি স্বর্ণ আটক করেছে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। যার বাজারমূল্য সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার কাছাকাছি।

কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ২২৪ দশমিক ২৪৯ কেজি স্বর্ণ আটক করা হয়েছে। যার বাজারমূল্য ১৭৭ কোটি ৫২ হাজার টাকা। পরের বছর ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে ১৫৮ দশমিক ৮৭৬ কেজি স্বর্ণ আটক করা হয়। যার বাজারমূল্য ১১১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে ৬ মাসে ৭৭ দশমিক ৩১৯ কেজি স্বর্ণ আটক করা হয়েছে। যার বর্তমান বাজারমূল্য ৬০ কোটি ১৪ লাখ টাকা। দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বর?প চোরাচালান ও শুল্ক ফাঁকির অপতৎপরতা রোধে কাজ করছে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। সময় পাল্টেছে, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অপরাধপ্রবণতা, বেড়েছে অপরাধের নিত্যনতুন অভিনব কৌশল ও জটিলতা। অপরাধীদের আটক করতে আধুনিক, যুগোপযোগী ও সুসংহতভাবে মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে কাস্টমস গোয়েন্দা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্রুত সময়ে অবৈধপথে কোটিপতি বনে যাওয়ার স্বপে? বেপরোয়া হয়ে উঠেছে স্বর্ণ পাচারকারীরা। এ জন্য ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের সব বিমানবন্দরে প্রায় প্রত্যেক মাসে কোটি কোটি টাকার স্বর্ণ আটক করা হচ্ছে। সর্বশেষ গত বুধবার প্রায় ২ কেজি স্বর্ণসহ সৌদি এয়ারলাইন্সের একজন কেবিন ক্রুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, নৌপথ ও স্থলপথে নিয়মিত অবৈধ স্বর্ণ আটক করছে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) এবং কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। তবে স্বর্ণ বাহকরা গ্রেপ্তার হলেও মূল হোতারা বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছে। স্বর্ণ আটকের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মূল অভিযুক্তদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, দুবাই ও সৌদি ছেড়ে আসা ফ্লাইট ঢাকা বিমানবন্দরে পৌঁছালে প্রত্যেক যাত্রীর গতিবিধি লক্ষ্য করা হয়। কোনো যাত্রীকে সন্দেহ হলে তাকে তল্লাশি করা হয়। সেখানে চোরাই স্বর্ণসহ যাদের গ্রেপ্তার করা হয়, তারা মূলত বাহক। কারা কার কাছে স্বর্ণ পাঠাচ্ছে তার বিস্তারিত তথ্য বাহকদের হাতে থাকে না। ফলে চোরাচালানের মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যায়।

সূত্র বলছে, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্বর্ণ চোরাকারবারীরা নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করছে। সিলিকন গ্লু হিটার মেশিনের লোহার পাতের ভেতরে বিশেষ কৌশল, বিমানের সিটের নিচে, চার্জার লাইট, সিগারেটের প্যাকেট, মানিব্যাগ, বিমানের টয়লেট, লাগেজ, জুতাসহ যাত্রীর পেটের ভেতরেও মিলছে স্বর্ণ। এর মধ্যে কিছু কিছু স্বর্ণের চালান বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন? সংস্থার তল্লাশিতে ধরা পড়লেও অধিকাংশ চালান নিরাপদে বের হয়ে যাচ্ছে।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে দুবাই থেকে সবচেয়ে বেশি স্বর্ণ আকাশ পথে পাচার করে স্বর্ণ চোরাকারবারিরা। এছাড়া সৌদি আরব, কাতার এবং কুয়েত থেকেও স্বর্ণ পাচারের ঘটনা বিভিন? সময়ে দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে ধরা পড়ে। এ কাজে আন্তর্জাতিক স্বর্ণ পাচার সিন্ডিকেট নিজস্ব বাহক যেমন ব্যবহার করছে, তেমনি টাকার টোপে কখনো পাইলট, কখনো ক্রু, কখনো বিমানবালাকেও কাজে লাগায়। তাছাড়া বিমানের ক্লিনার, ট্রলিম্যান এমনকি প্রকৌশলীরাও এই চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার ঘটনাও ধরা পড়ে।

কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তৎপরতা বাড়ায় আগের তুলনায় স্বর্ণের অবৈধ প্রবেশ কমেছে। এরপরও বিভিন? ফ্লাইটে স্বর্ণের চালান আসছে। সরাসরি তথ্যের ওপর ভর করে নয়, বর্তমানে তথ্য নিয়েই গবেষণা, বিশ্লেষণ ও সনি?বেশনের পর সাধারণ তথ্যকে গোয়েন্দা তথ্যে র?পান্তর করে চোরাচালান কিংবা শুল্ক ফাঁকি রোধে কাজ করছে কাস্টমস গোয়েন্দারা। যা অনেকটাই ছকের পরে ছক তৈরি করা হচ্ছে। অভিযানে নেমে সফলতাও মিলছে কাস্টমস গোয়েন্দাদের।

কাস্টমস সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের অর্থনীতি ও স্থানীয় বাজারের স্থিতিশীল রাখতে কাজ কাস্টমস গোয়েন্দা অধিদপ্তর। যে কারণে কাস্টমস গোয়েন্দা সম্পূর্ণ নতুন আঙিকে ঢেলে সাজিয়েছে তার মূল কার্যক্রমকে। দেশ ও বিদেশের বিভিন? সংস্থার সঙ্গে লিয়াজোঁ রক্ষা করে দেশের কাস্টমসের ইতিবাচক ভাবমূর্তিকে আন্তর্জাতিক কাস্টমস পরিমণ্ডলে উজ্জ্বল করে চলেছে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সীমান্তবর্তী এলাকা হিসেবে স্বর্ণ পাচারের সবচেয়ে বড় রুট যশোর জেলায়। এই জেলার সীমান্তে অন্তত ১০টি নিরাপদ রুট রয়েছে। বেনাপোল থানার সাদীপুর, পুটখালি, শার্শার শিকারপুর, ভবেরবেড়, দৌলতপুর, শ্যামলাগাজী রুটগুলোতে সবচেয়ে বেশি স্বর্ণ পাচারের ঘটনা ঘটে থাকে। এছাড়া যশোরের মনোহরপুর, ছুটিপুর, কাশিপুর, শালকোনা, পাকশিয়া এলাকা দিয়েও পাচার হয় স্বর্ণ। পাচারের সীমান্তঘেঁষা রুটগুলোর মধ্যে চুয়াডাঙ্গায় রয়েছে তিনটি। এগুলো হলো- কার্পাসডাঙ্গা, দর্শনা ও জীবননগর। সাতক্ষীরা লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী ৬টি রুট রয়েছে। এগুলো হলো-ভাদিয়ালী, কালীগঞ্জ, শেরপুর, ভোমরা, নোংলা ও কৈখালী। মেহেরপুরের গাংনী, কুতুবপুর, কাতুলি ও বুড়িপোতা, কুষ্টিয়ার ধর্মদহ, প্রাগপুর, বিলগাতুয়া, চর ভবানন্দদিয়া, রাজশাহীর সোনাইকান্দি, হরিপুর, কাশিয়াডাঙ্গা, গোদাগাড়ী, চরখিদিরপুর, চর মাঝারদিয়া, আলাইপুর, বাঘা, চারঘাট, গোদাগাড়ী ও মোক্তারপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মনাকষা, ঘুঘুডাঙা, রামকৃষ্ণপুর, শিবগঞ্জ, কিরণগঞ্জ, ভোলাহাট, রামদাসপুর, সাপাহার, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী, হিলি, কামালপুর ও বিরল, ঠাকুরগাঁওয়ের আমজানখোর, হরিপুর, আটঘরিয়া, কুড়িগ্রামের রৌমারী ও ফুলবাড়ী এবং লালমনিরহাটের বুড়িরহাট, শ্রীরামপুর ও দহগ্রাম সীমান্ত দিয়ে ভারতে স্বর্ণ পাচার হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত